ভারতই বিশ্বকাপের এক নম্বর ফেবারিট
আগেও তিনবার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে ভারত। তবে তিনবারই তারা ছিল সহ-আয়োজকের ভূমিকায়। এবারই প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসর এককভাবে আয়োজন করছে ভারত। বিশ্বকাপে ফেবারিটের তকমা বরাবরই গায়ে সেঁটে থাকে ভারতের, এবারও আছে। ভারতে বিশ্বকাপ হচ্ছে বলে ফেবারিটদের তালিকায় সবার আগেই উঠে আসছে ভারতের নাম। বিশ্বকাপের ঠিক আগে পাকিস্তানকে হটিয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর ওয়ানডে দলও ভারত। ঘরের মাঠের সুবিধা, নিজেদের সমর্থকদের সামনে খেলা, সঙ্গে দুর্দান্ত একটা দল - বিশ্বকাপ জেতার জন্য আর কী চাই!
ওদিকে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেবাগ তো দিনকয়েক আগে বলেই বসেছেন, ‘আইসিসি ভারতকে সাহায্য করবে।’ কেন করবে সেটাও বলে দিয়েছেন, ‘ভারত টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে ভিউয়ারশিপ এবং পৃষ্ঠপোষকতার দিক দিয়ে আইসিসি লাভবান হবে।’
এমন যখন চিত্রপট, তখন বিশ্বকাপের ফেবারিট হিসেবে ভারতের নাম সবার আগে আসা অবধারিত। তবে এই বিষয়টা দলের উপর বড় একটা চাপ তৈরি করে। যদিও ভারতের ক্রিকেটাররা চাপের সঙ্গেই বসবাস করেন। প্রতিটি ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। ফর্ম একটু দূরে সরলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিচার’ বসে।
তবে চাপ এক প্রকার সয়ে যাওয়ার পরও কখনও কখনও চাপের তোড়ে ভেঙে পড়েন তারা। যেমন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের দিকেই তাকান - অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১৯৯ রানে বেঁধে ফেলার পরও ব্যাটিংয়ে নেমে দুঃস্বপ্নে চোখ পড়েছিল রোহিত শর্মাদের। ২ ওভারে মাত্র ২ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি আর কেএল রাহুলের বুদ্ধিদীপ্ত দুটি ইনিংসে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয় ভারতের।
প্রত্যাশার চাপের সঙ্গে বিশ্বকাপে আরেকটা বিষয় ভোগাতে পারে ভারতকে। সেটা হচ্ছে বেঞ্চের দুর্বলতা। ভারতের প্রথম পছন্দের একাদশ বিশ্বের যেকোনো দলকে নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারে ঠিক, কিন্তু তাদের বেঞ্চে থাকা খেলোয়াড়দের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।
এশিয়া কাপের সুপারফোরে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়মরক্ষার ম্যাচে দ্বিতীয়সারির দল মাঠে নামায় ভারত। বিশ্রাম দেয় কোহলি-হার্দিক পান্ডিয়াদের। ফলাফল - বাংলাদেশের কাছে ৬ রানে হেরে যায় ভারত।
বিশ্বকাপের আগে চোট সমস্যা তেমন ভোগায়নি তাদের। তবে প্রথম ম্যাচের আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দলের বাইরে চলে যান টপ অর্ডারের বড় নির্ভরতার নাম শুভমান গিল। কে জানে, গিল থাকলে হয়ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শুরুর অমন ধস এড়াতে পারত ভারত! কিন্তু টপ অর্ডারের একজন ব্যাটারের চোটেই বড় বিপদ চোখ রাঙানি দিয়েছিল ভারতকে, যা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ভারতের বেঞ্চের ফর্মহীনতা।
চাপ আর চোট - এই দুটি বিষয়কে এক পাশে রাখলে অন্য পাশে শুধুই সম্ভাবনার খোলা আকাশ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই দারুণ ছন্দে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন তর্কসাপেক্ষে দলের সবচেয়ে বড় তারকা বিরাট কোহলি। বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া আছেন দলে। ওদিকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আগে জশপ্রীত বুমরাহ-মোহাম্মদ সিরাজরা নিজেদের শানিয়ে নিয়েছেন এশিয়া কাপে। স্পিনার অক্ষর প্যাটেলের চোটের কারণে কপালে ভাঁজ পড়েনি ভারতীয় সমর্থকদের। কারণ রবিচন্দ্রন অশ্বিন তো তৈরিই ছিলেন।
আর তাই ১৯ নভেম্বর আহেমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকের সামনে রোহিত শর্মা ট্রফি উঁচিয়ে ধরবেন - এমন সম্ভাবনার পালেই হাওয়া লাগছে বেশি।