হাথুরু থাকলে সালাউদ্দিন কোচ হবেন না, ছাড়লে চিন্তা করবেন
তার কোচিংয়ে বিপিএলে পাঁচবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ফাইনালে খেলেছে। সর্বোচ্চ চারবার শিরোপা জিতেছে। বিপিএলের ইতিহাসে সেরা কোচের তালিকা খুঁজতে গেলে নিদ্বির্ধায় সেই তালিকার শীর্ষে আপনাকে নামটা লিখতে হবে- মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
শুধু কি তাই? বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যখনই অফফর্মে থাকেন বা ব্যাটিং বোলিং নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়েন তখনই ছুটে আসেন তার কাছে। তার পরামর্শ নেন নিজেকে ঝালিয়ে নিতে। উদাহরণ হিসেবে খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। গেল বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের মাঝপথ থেকে সাকিব আল হাসান দেশে ফিরে আসেন। সেই সময়টায় ব্যাট হাতে বিশ্বকাপে তার মোটেও সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। ভারত থেকে ঢাকায় এসে কোচ সালাউদ্দিনের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। সমস্যা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই বিকেএসপি জামানা থেকে সালাউদ্দিন হলেন সাকিবের গুরু। কোচ হিসেবে তার সাফল্যের পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি হতে পারতেন বাংলাদেশ দলের জন্য আরাধ্য একটি নাম।
কিন্তু জাতীয় দলে সহকারী কোচের বেশি উচ্চতায় তার চাকরি হয়নি। স্থানীয় কোচদের প্রতি প্রকাশ্যে অবহেলা ও উদাসীনতা এবং বিদেশি কোচদের প্রতি বিসিবির আনুগত্য মনোভাব দেখে সালাউদ্দিন নিজেই একসময় জাতীয় দলের সহকারি কোচের সেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। বাড়তি আর কোনো আগ্রহ দেখাননি তিনি।
সর্বশেষ বিসিবি সহকারী কোচের যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল সেখানে তিনি আবেদনই করেননি।
আবেদন না করলে, আগ্রহী না হলে চাকরি হবে কীভাবে; সহজ কথা। প্রশ্ন হলো কেন জাতীয় দলের সঙ্গে এমন কায়দায় থাকতে চান না মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
সেই প্রশ্নের উত্তর খুব স্পষ্ট করে দিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হেড কোচ সালাউদ্দিন। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের সঙ্গে বিপিএল শেষে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে যা বলেছেন তা ঠিক এমন- ‘সত্যি বলতে কি আমার এখন যে বয়স হয়েছে তাতে আর কোনো হেড কোচের অধীনে সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা যায় না। পেছনের সময়টায় আমি কঠিন পরিশ্রম করেছি। দলের খেলোয়াড়দের তৈরি করতে অনেক সময় দিয়েছি। একজন সহকারী কোচ দল গঠনের পেছনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এখন আমি সেই কাজ (সহকারী কোচ) করতে পারবো না। সেই পদে কাজ করার মতো মানসিকতাও নেই এখন আমার। হেড কোচ হাথুরুসিংহে সম্পর্কে আমি যা জেনেছি এবং শুনেছি তা হলো তার সঙ্গে কোনো সহকারী কোচই ঠিক মানিয়ে নিতে পারেন না। আর আমি যে মানসিকতার মানুষ তাতে কাজে স্বকীয়তা, স্বাধীনতা অনেক বেশি পছন্দ করি। কেউ যদি আমার ওপর ছড়ি ঘোরাতে চায় তাহলে আমার যে চরিত্র তাতে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন হবে। মূলত তাই আমি এবার সহকারী কোচের বিসিবির বিজ্ঞপ্তি দেখে কোনো আবেদন করিনি। দেখুন বিশ্বকাপের পরপরই দলের অর্ধেকের বেশি কোচিং স্টাফ চলে গেছে। যদ্দুর জেনেছি তারা হেড কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে কাজ করতে চায় না। তারা যদি ওর সঙ্গে কাজ করতে না পারে তাহলে আমার মতো স্বাধীনচেতা মানুষ কীভাবে পারবে? আগেই বলেছি, আমি সবসময় স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। মূলত তাই আমি জাতীয় দলের সঙ্গে কোচিংয়ে জড়াতে অনাগ্রহী।’
- তো বিষয়টা কি দাড়ালো?
হেড কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যদ্দিন আছেন তদ্দিন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জাতীয় দলের সঙ্গে জড়িত হবেন না। বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চাকরির মেয়াদ আছে চলতি বছর জুনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। সেই বিশ্বকাপের পর তার সঙ্গে বিসিবি চুক্তি বাড়াবে কি না- সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপরই মুলত এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে। তবে একবছর আগে দ্বিতীয় দফায় হাথুরুসিংহেকে কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পর বিসিবি যেমন খুশি হয়েছিল সেই হাসিতে ভাটা পড়েছে এখন বেশ। কোচেরও হানিমুন পিরিয়ড শেষ। ভারতে গেল বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবি হয়েছে। তামিম ইকবালের সঙ্গে কোচের দ্বন্দ্ব, মনোমালিন্য, কথা বন্ধ, বিশ্বকাপে না খেলা, বিপিএল নিয়ে কোচের বাজে মন্তব্য, তার কর্তৃত্ববাদী আচরণ- এমনসব ইস্যুতে বিসিবির আস্থাও হারাচ্ছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
জুনের বিশ্বকাপের পর হাথুরুসিংহের সঙ্গে বিসিবি চুক্তির মেয়াদ না বাড়ালে টি-টোয়েন্টির কোচের পদে কি মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে দেখা যেতে পারে? এমন সম্ভাবনার প্রশ্নে সালাউদ্দিন বলটা বিসিবির কোর্টে রেখেই দিয়ে বললেন, ‘যদি আমাকে টি টোয়েন্টি সেট আপের পুরো দায়িত্ব (হেড কোচ হিসেবে) দেওয়া হয়, তাহলে আমি চিন্তা করতে পারি।’
নিজের ইচ্ছের কথা সালাউদ্দিন জানিয়ে দিয়েছেন। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বিসিবির।