রোনালদো এবং তার ৭ নম্বর জার্সি
নাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কিন্তু ফুটবল বিশ্ব তাকে আদর করে ডাকে সিআরসেভেন নামে!
সিআর তার প্রথম দুই নামের আদ্যক্ষর। আর সেভেন, জার্সির নাম্বার! সাত নম্বর জার্সি এখন রোনালদোর নামের সঙ্গেই একাকার। যেন একে অন্যের পরিপূরক! সাফল্য, স্বার্থকতায় ভরপুর!
ফুটবলে স্ট্রাইকারদের জন্য ১০ নাম্বার জার্সি যেন নির্ধারিত থাকে। পেলে, ম্যারাডোনা হয়ে হালের মেসি। তিন তারকাই খেলতেন ১০ নাম্বার জার্সি গায়ে। ১০ নাম্বার জার্সি মানেই দলের সেরা খেলোয়াড় তিনি! এভাবেই সম্ভবত ফুটবল ইতিহাসের সেই শুরুর দিন থেকেই ১০ নাম্বার জার্সি ‘আইকনিক মর্যাদা’ পেয়ে আসছে।
তবে দেশের এবং দলের সেরা খেলোয়াড় হয়েও রোনালদো কেন ৭ নাম্বার জার্সি বেছে নিলেন?
শুনি সেই ইতিহাস।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিনে পর্তুগালের লিসবন সিপিতে যখন খেলতেন তখন রোনালদোর গায়ে থাকতো ২৮ নাম্বার জার্সি। ২০০৪ সালে রোনালদোকে দলে নেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রোনালদোকে দেখেই ম্যান ইউ’র ম্যানেজার অ্যালেক্স ফার্গুসন বুঝতে পারেন-সত্যিকারের হীরের টুকরোকেই দলে টেনেছেন তিনি। ফুটবল জুহুরির চোখেই তিনি চিনতে পেরেছিলেন রোনালদোকে। ওল্ট ট্রাফোর্ডে যোগ দিয়ে রোনালদোকে যখন জার্সির নাম্বার পছন্দ করতে বলা হল, সেদিনের তরুণ লাজুক রোনালদো তার পুরানো পছন্দের পথেই হাঁটলেন-‘২৮ নাম্বার জার্সিটাই আমার পছন্দ।’ পাশে থাকা অ্যালেক্স ফার্গুসনের যে তখন অন্য চিন্তা। তিনি যে লিসবন সিপি’র রোনালদোকে চান না, নতুন এক তারকার জন্ম দেখতে চান। আর তাই সেদিন ফার্গুসন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ৭ নাম্বার জার্সিটা রোনালদোর হাতে তুলে দেন-‘ তোমাকে এই জার্সিতেই বেশি ভাল মানাবে। তুমি এটার যোগ্য।’
ব্যাস, সেদিনই থেকেই শুরু হল সিআরসেভেনের নতুন যাত্রা। নতুন গল্প। নতুন ইতিহাস।
ম্যান ইউ’র হয়ে এই ৭ নাম্বার জার্সি যারা আগে পরেছেন সেই নামগুলো একটু জানি। জর্জ বেস্ট, ব্রায়ান রবসন, এরিক কাঁতোয়া, ডেভিড বেকহাম, মাইকেল ওয়েন! সেই তালিকায় এখন সর্বশেষ সংযোজন চিলির অ্যালেক্সি সানচেজ।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হাতে ক্লাবের ৭ নাম্বার জার্সিটা তুলে দিয়ে ভুল কিছু করেননি ফার্গুসন। যে কয়েক মৌসুম ম্যান ইউ’ তে ছিলেন রোনালদো, প্রতি মৌসুমেই আগের তুলনায় নিজের পারফরমেন্সকে ছাড়িয়ে গেছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে খেলেছেন সবমিলিয়ে ২৯২ ম্যাচ। গোল করেছেন ১১৮টি। সহায়তা করেছেন ৬৮টি গোলে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি জিতেছেন তিন মৌসুমে। একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জয়ের উল্লাসেও মেতেছেন। সবশুদ্ধ ম্যান ইউ’র হয়ে রোনালদো জিতেছেন নয়টি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি।
এক কথায় দারুণ পারফরমেন্স! ম্যান ইউ’তে সত্যিকার অর্থেই ৭ নাম্বার জার্সির মর্যাদা রাখতে পেরেছিলেন রোনালদো।
২০০৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন রোনালদো। তখন রিয়ালের ৭ নাম্বার জার্সির মালিক ছিলেন ক্লাবের আরেক মহাতারকা রাউল গনজালেস। ক্যারিয়ারের শেষদিকে রাউল জার্মানির শালকে ক্লাবে যোগ দেয়ার পর রিয়ালের ৭ নাম্বার জার্সিটা পেয়ে গেলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
মূলত রিয়ালেই রোনালদোর নতুন নাম মিলল সিআরসেভেন! সেই তখন থেকেই রোনালদো মানেই ৭ নাম্বার জার্সি। পুর্তগাল জাতীয় দলে শুরুর দিকে যখন খেলতেন তখন রোনালদোর জার্সি নাম্বার ছিল ১৭। ল্ইুস ফিগো খেলতেন ৭ নাম্বার জার্সি গায়ে। ফিগোর অবসরের পর পুর্তগালের ৭ নাম্বার জার্সি রোনালদো পেলেন।
একেবারে যোগ্য উত্তরাধিকার!
চলতি বছর জুভেন্টাসে নাম লেখানোর পরও রোনালদো পেয়ে গেলেন ক্লাবের ৭ নাম্বার জার্সি। জুভের হয়ে এই জার্সিটা এতদিন ছিল কলম্বিয়ার কুদরাদোর গায়ে।
রোনালদো জুভেন্টাসে নাম লেখানোর সময়ও তার পছন্দের জার্সির নাম্বারটাও বলে দিয়েছিলেন। ক্লাবে যোগ দেয়ার পর কুদরাদোর কাছে জার্সিটা চান রোনালদো। খুশি মনেই রোনালদোর অনুরোধ মেনে নিয়ে কুদরাদো সেদিন বলেছিলেন-‘ কোন সমস্যা নেই, আমার ৭ নাম্বার জার্সিটা তোমাকে দিতে পারলে আমি খুশিই হবো।’
ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডে তারকা জীবনের শুরু। রিয়াল মাদ্রিদে এসে মহাতারকায় পরিণত। জুভেন্টাসের হয়েও রোনালদো ৭ নাম্বার জার্সির ক্যারিশমা দেখান। ইতালির এই ক্লাবের হয়ে একশ’র বেশি গোলের কৃতিত্ব গড়েন। ক্লাবটির হয়ে লিগে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও গড়েন। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ইংল্যান্ড, স্পেন এবং ইতালি-এই তিন লিগের ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দুর্দান্ত রেকর্ডের মালিক হন।
আরব লিগে আল নাসর ক্লাবের হয়েও গোলের পর গোল করে চলেছেন রোনালাদো। জার্সি নাম্বার সেটাই, লাকি সেভেন!