বিশ্বকাপ শিরোপা উঠবে কাদের হাতে?
বরং যারা জিতবে না, তাদের কথাই আগে বলি! তাহলে যে বা যারা জিততে পারে তাদের তালিকাটা একটু সংক্ষিপ্ত হবে। সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নকে খোঁজার কাজ সহজ হবে খানিকটা!
দশ দলের টুর্নামেন্ট। ম্যাচ হবে সাকুল্যে ৪৮টি। ভেন্যু দশটি। সবমিলিয়ে ৪৬ দিনের খরচ। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হবে মাত্র একটি দল। এগারো কেজি ওজনের একটি ট্রফির জন্য জবরদস্ত লড়াই। শুরু ৫ অক্টোবর। শেষ ১৯ নভেম্বর।
ফেভারিট দল আছে অনেক। আবার নন-ফেভারিটও কম নয়। ট্রফি জয়ের তালিকায় পুরোপুরি হিসাবের বাইরেও রয়েছে এমন সংখ্যাও আছে বেশ। সেই তালিকা ধরেই সামনে বাড়ি।
ডাচ সমর্থকদের মন খারাপ হতে পারে, তবু বলছি আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন নেদারল্যান্ডস এই বিশ্বকাপ জিতছে না। যদিও এবারের বিশ্বকাপে বেশ প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ প্রি-বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে খেলে মূল বিশ্বকাপে খেলার জায়গা তারা করে নিতে পেরেছে। বিশেষ করে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধেজেতা ম্যাচটা নেদারল্যান্ডসের দুর্দান্ত ক্রিকেট শক্তির পরিচয় দিয়েছে। একটুসেই ম্যাচের বর্ণনায় যাই।
স্কটল্যান্ড তুলে ২৭৭ রান। ডাচদের সামনে দুটো লক্ষ্য। জিততে হবে,সেই সঙ্গে রানরেটও সমৃদ্ধ রাখতে হবে। রানরেটে এগিয়ে থাকতে হলে নেদারল্যান্ডসকে এই ম্যাচে জিততে হবে ৪৪ ওভারে। শেষ চার ওভারে প্রয়োজন দাঁড়ায় ৪৫ রানের। সেই কঠিন কাজটাও বেশ অনায়াসেই করে ফেলল তারা। ৭ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের আসরে দ্বিতীয়বারের মতো নাম লেখাল। ২০১১ সালের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলতে নামছে নেদারল্যান্ডস। তবে বিশ্বকাপে তাদের বাকি নয় প্রতিপক্ষের অভিজ্ঞতা, শক্তিমত্তা, প্রস্তুতি, ঐতিহ্য এবং দলীয় শক্তিÑ এসব বিবেচনায় আনলে এবারের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস এসেছে কেবলমাত্র অংশগ্রহণকারী একটি দল হিসেবে। মোটেও অবাক হবেন না যদি এই বিশ্বকাপে কোনো জয় ছাড়াই নেদারল্যান্ডস বাড়ি ফিরে যায়!
আফগানিস্তান দলীয় শক্তির দল নয়। একক কয়েকজন প্রতিভার সমাহারে দলটি মাঝেমধ্যে বড় কোনো দলকে হারিয়ে দেয়। একটা-দুটো ম্যাচে ভালো পারফর্ম করা মানেই কিন্তু বড় আসরে বড়কিছু করে দেওয়া নয়। এই বিশ্বকাপের আগে দুটি বিশ্বকাপে খেলেছে আফগানিস্তান। সবমিলিয়ে ১৫ ম্যাচে জয় মোটে একটি। তাও আবার বড় আসরে হিসাবের বাইরে থাকা দল স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। টানা তৃতীয়বারের মতো এবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে আফগানিস্তান। লেগস্পিনার রশিদ খান, অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবিও অফস্পিনার মুজিব উর রহমান ছাড়া দলের অন্যখেলোয়াড়রা গড়পড়তা মানেরও নিচে। গ্রæপ পর্যায়ে খুব বেশি হলে একটি জয় ছাড়া এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সামনে আর তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
শ্রীলঙ্কা একবার বিশ্বকাপ জিতেছে। কিন্তুসেই কাহিনী অনেক আগের, ১৯৯৬ সালের। তারপর আরও কয়েকটি বিশ্বকাপে জমাট লড়াই করেছে, এমনকি ফাইনালেও খেলেছে দু’বার। কিন্তু এই সময়কার শ্রীলঙ্কা দলের যা অবস্থা, তাতে তাদের সেমিফাইনালে রাখার মতো আস্থা যে মিলছে না। এবারের বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠে এসেছে তারা বাছাই পর্বের বাধা টপকে। সা¤প্রতিক ওয়ানডে রেকর্ডও ভালো নয় তাদের। দল হিসেবে ভীষণ অসংগঠিত এই শ্রীলঙ্কা। ভারত বিশ্বকাপে গ্রæপ পর্যায়ের চেয়ে বেশি সামনে বাড়ার সম্ভাবনা তাদের ক্ষীণ।
বাংলাদেশ এবার অনেক বড় স্বপ্নদেখছে। ওয়ানডে সুপার লিগে কয়েকবছরের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্নের পরিধিকে বিস্তৃত করেছে। বিশ্বকাপে খেলছে বাংলাদেশ সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। সেরা সাফল্যকোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্তখেলা। এক আসরে সর্বোচ্চ তিনটির বেশি ম্যাচ কোনোবারই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে প্রাথমিক শর্ত হলো, রাউন্ড রবিন লিগ ফরম্যাটের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে হলে গ্রæপ পর্যায়ের অন্তত পাঁচটি ম্যাচ জিততেই হবে। সহজ হিসাবÑসেরা চারে থাকতে হলে গ্রæপের দলগুলোর মধ্যে পাঁচটি ম্যাচ জিততেই হবে। পারবে বাংলাদেশ এবার সেই শর্ত পূরণ করতে? নেদারল্যান্ডস, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে না হয় জিতলাম আমরা। দক্ষিণ আফ্রিকাকেও শেষ বিশ্বকাপে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই হিসাবে তাহলে পঞ্চম কোন দলকে হারানোর টার্গেট করছে বাংলাদেশ।
নামগুলো শুনি। ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। এই চারটি দলই শক্তিশালী। এর মধ্যে তিন দলের বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর নিউজিল্যান্ডের তো বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার রানার্সআপ হওয়ার রেকর্ড আছে।
বাস্তবতা মেনে আমরা বাংলাদেশকে শুভকামনা জানাতে পারি।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিবারের বিশ্বকাপেই সম্ভাবনা জাগিয়ে আসে। কিন্তু বড় ম্যাচে এসেই যে ভেঙে পড়ে। সেই ১৯৯১ সালে তাদের খেলা প্রথম বিশ্বকাপ থেকেই এই কু-অভ্যাসে পড়েই তাদের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়। হ্যান্সিক্রনিয়ে, এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্রায়েম স্মিথ, ল্যান্স ক্লুজনার, শন পোলক, জ্যাক ক্যালিসের মতো খেলোয়াড়রা দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দিতে পারেননি।
এবার পারবে? টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বে এই দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর খুব বেশি আস্থা রাখার উপায় আছে কি?
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো শেষবার তারা যখন বিশ্বকাপ জিতেছিল, তখন বর্তমান দলের অনেকেই খেলাই শুরু করেননি। ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ মানেই এখানকার উইকেট, কন্ডিশন, দর্শক গ্যালারি, এমনকি মিডিয়ার সঙ্গেও যুদ্ধ করা। সেই লড়াইয়ে এবারের অস্ট্রেলিয়া দল কেমন পারফর্ম করে,সেটার ওপরই নির্ভর করছে তাদের বিশ্বকাপ সাফল্য। তবে সেরা চারের আগে এবারের বিশ্বকাপ থেকে অস্ট্রেলিয়া বিদায় নিলে সেটা অবাক করার বিষয় হবে।
পাকিস্তানের জন্য এবারের বিশ্বকাপ আসলে নেহাত বিশ্বকাপ নয়, বিশ্বজয়ের মতোই হবে! ভারতের মাটি থেকে বিশ্বকাপ জিতে পাকিস্তান ফিরতে পারলে সম্ভবত ক্রিকেট থেকে পাকিস্তান আর কোনো কিছুই চাইবে না! তবে খেলাটা যেহেতু ভারতের মাটিতে, তখন পাকিস্তানের জন্য জয়ের বিষয়টি সহজ কিছু হবে না।
ইংল্যান্ড আগে কখনোই ওয়ানডে বিশ্বকাপে হট ফেভারিট ছিল না। হিসাবটা তারা বদলে দিয়েছে ২০১৫ সালের ব্যর্থতার পর। বাংলাদেশের কাছে সেই বিশ্বকাপে হেরে ছিটকে পড়ার পর তারা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট বেছে নেয়। ভয়ডরহীন নিঃশঙ্ক চিত্তের সেই ফর্মুলার ক্রিকেটই তাদের ২০১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিল। সেই তেজ যদি এবারের বিশ্বকাপেও দেখাতে পারে ইংল্যান্ড, তাহলে ট্রফিটাও তাদেরই রয়ে যাবে।
ভারতের মাটিতে দু’বার বসেছে বিশ্বকাপের আসর। ১৯৮৭ সালে প্রথমবার। শেষবার ২০১১ সালে। ’৮৭-তে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় তারা। ’১১-তে চ্যাম্পিয়ন হয়। এবার ফের স্বপ্নদেখছে ভারত। ইটস কামিং হোমের হিন্দি সংস্করণের সুর ভাজছে গোটা ভারতের ক্রিকেটকে ঘিরে। সেবার মহেন্দ্র সিং ধোনির সুরে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। এবার রোহিত শর্মা কি পারবেন আহমেদাবাদের ফাইনালে সেই চ্যাম্পিয়ন চ্যাম্পিয়ন আনন্দের সুর তুলতে?
সম্ভাবনা আছে। তবে সব সম্ভাবনায় যে সংকটও থাকে!