জেতা ম্যাচ গেল হাত ফসকে, টানা ষষ্ঠ হার বেঙ্গালুরুর
জেতা ম্যাচ কী করে হারতে হয়, তাই যেন দেখাল বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
লক্ষ্যটা বড় ছিল, সন্দেহ নেই। তবে সবশেষ ম্যাচেই তো সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬২ রান তুলে ফেলেছিল বেঙ্গালুরু, তারা কলকাতার ২২২ রান দেখে ভড়কে যাবে কেন? যায়নি। আর যায়নি বলেই শেষ পাঁচ ওভারে ৪৯ রানের সমীকরণে নামিয়ে আনা গিয়েছিল ম্যাচটাকে। উইকেটে তখন ছিলেন দীনেশ কার্তিক, যিনি শেষ কিছু দিন ধরেই আছেন ফর্মের তুঙ্গে। বেঙ্গালুরু তখন ম্যাচটা হারতে পারে, সে বিষয়টাই যেন অবিশ্বাস্য লাগছিল।
শেষমেশ বাস্তব হলো ওই অবিশ্বাস্য বিষয়টাই। ম্যাচটা শেষে এসে রোমাঞ্চ ছড়াল বটে, কিন্তু শেষমেশ বেঙ্গালুরুর সঙ্গী হলো আরও এক হার। এবার ব্যবধানটা নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে কম, ১ রানের। এই হারে টানা ষষ্ঠ ম্যাচে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বিরাট কোহলির দলকে। এর ফলে ৮ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে দলটা।
নিজেদের মাঠে কলকাতার কাছে হেরেছিল বেঙ্গালুরু। ২২২ রান তাড়া করে তার শোধটা ইডেন গার্ডেন্সেই নেবে বেঙ্গালুরু, আজ মনে হচ্ছিল এমন কিছুই। বিরাট কোহলি কোমরের সমান উচ্চতায় বল খেলেও নতুন নিয়মের বলি হয়ে আউট হলেন শুরুতে, ফিরলেন ৭ বলে ১৮ রান করে। এরপর পাওয়ারপ্লেতে বিদায় নেন ফাফ ডু প্লেসিও।
তবে এরপরও বেঙ্গালুরু ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়নি উইল জ্যাকস আর রজত পতিদারের ঝড়ের কল্যাণে। জ্যাকস একটু ‘শম্ভুকগতিরই’ ছিলেন পতিদারের তুলনায়, ৫৫ রান তুলতে তিনি খেলেছেন ৩২ বল, ওপাশে পতিদার ৫২ রান তুলেছেন ২৩ বলে। দুজনের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ১০২ রান তুলে ফেলে মোটে ৪৮ বলে। বেঙ্গালুরু জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তখনই। জ্যাকস, পতিদার এরপর বিদায় নেন দ্রুতই। ক্যামেরন গ্রিন আর মহীপাল লমরোররাও তেমন কিছুই করতে পারেননি। তবে এরপরও দলটাকে কক্ষচ্যুত মনে হচ্ছিল না দীনেশ কার্তিকের জন্য। তিনি যে আছেন ভালো ফর্মে! ওপাশে সুয়াশ প্রভুদেসাইও থিতু ছিলেন উইকেটে। এমন পরিস্থিতিতে ৩০ বলে ৪৯ রান তেমন কিছুই নয়!
আরসিবির ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার শুরু এরপরই। পরের ১৮ বল থেকে দলটা তুলতে পারে মোটে ১৮ রান। মাঝে চলে যায় প্রভুদেসাইয়ের উইকেট। বেঙ্গালুরু তখন তাকিয়ে কার্তিকের ব্যাটের দিকে। তবে তিনিও দলকে হতাশ করেছেন, জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার আগেই ফেরেন ১৮ বলে ২৫ রান করে। শেষ ওভারে দরকার পড়ে ২১ রানের।
তখনই আরও এক চমক। করন শর্মা হাঁকিয়ে বসলেন তিন ছয়, তাও আবার মিচেল স্টার্কের বলে। দুই বল বাকি থাকতে তখন বেঙ্গালুরুকেই মনে হচ্ছিল ফেভারিট। শেষ দুই বলে যে প্রয়োজন ছিল ৩ রান! ম্যাচের মোড় ঘুরে গেল সে ওভারের পঞ্চম বলে, স্টার্ককে ফিরতি ক্যাচ দিলেন করন। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল তিন, রান আউট হওয়ার আগে লকি ফার্গুসন নিতে পারলেন মোটে ১, সম্ভাব্য টাইও করা হয়নি বেঙ্গালুরুর, ডুবতে হয় টানা ষষ্ঠ হারের গ্লানিতে।
তার আগে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আরসিবি অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। কেকেআর ওপেনার ফিল সল্ট যেন সে সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণের জন্যই উঠে পড়ে লেগেছিলেন। ১৩ বলের দশটাই সীমানাছাড়া করেছেন। মাত্র আগের দিনই জেক ফ্রেজার ম্যাগার্ক ১৫ বলে ফিফটি করে আইপিএলের দ্রুততম ৫০ ছুঁয়েছিলেন। তার পরদিন ১৩ বলে ৪৮ করে সে রেকর্ডটাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন ইংলিশ এই ব্যাটার। তবে ১৪তম বলে আরও এক বাউন্ডারির খোঁজে তিনি ক্যাচ দেন বাউন্ডারি লাইনে।
তবে ফেরার আগে তিনি যা করে দিয়ে গেছেন, তাতে ভর করে পাওয়ারপ্লেতে ৭৫ রান তুলে ফেলে কেকেআর। সল্ট ফেরার পর সুনীল নারাইন আর আংক্রিশ রঘুবংশীও ফেরেন পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই। এরপর ধীরে সুস্থে পরিস্থিতিটা সামলান দুই আইয়ার। অধিনায়ক শ্রেয়াস ফিফটি করেন ৩৫ বলে। ওদিকে ভেঙ্কটেশ অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ১৬ রান করেন তিনি ৮ বল খেলে। শ্রেয়াসও ফিফটির পরই বিদায় নেন। মাঝে রিংকু সিং খেলে যান ১৬ বলে ২৪ রানের এক ইনিংস।
এরপর শেষটা ভালো করার দায়িত্ব এসে পড়ে আন্দ্রে রাসেল আর রামানদীপ সিংয়ের কাঁধে। দুজন মিলে সপ্তম উইকেটে ১৬ বলে তোলেন ৪৩ রান। আন্দ্রে রাসেল অবশ্য একটু নিস্প্রভ ছিলেন। ২০ বলে তিনি করেছেন ২৭। তবে ওপাশে রামানদীপ করেছেন ৯ বলে ২৪। তাতেই কলকাতা পেয়ে যায় ২২২ রানের পুঁজি।
কেকেআরের কাজটা সহজ হবে না, মনে হচ্ছিল তখনই। বেঙ্গালুরু যে আগের ম্যাচেই ২৬২ তুলে বসেছিল দ্বিতীয় ইনিংসে! তা হতেও দেয়নি। তবে তাতে কেকেআর হয়তো নাখোশও হবে না; দিন শেষে যে জিতেছে তারাই!