যুক্তরাষ্ট্রের টেলর গাইবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় সংগীত
ক্রিকেট বা ফুটবলে এমন গল্প আছে ভুরিভুরি। এক দেশের জন্ম হলেও খেলছেন অন্য দেশের হয়ে। নিজ সত্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দিয়ে হারিয়ে দিয়েছেন নিজের জন্মভূমিকে। নিজ দেশের মানুষের কাছে পরিণত হয়েছেন খলনায়ক হিসেবে। এসব গল্প চোখে পড়ে সবার। যেটা লোক চক্ষুর অন্তরালেও থেকে যায়, সেটা ভেতরের আবেগ। যেই তাড়নায় কারণে কেউ কারণে অকারণে ছুটে যান নিজের কিংবা বাবা মায়ের জন্মভূমিতে। নিজের জন্মভূমি না হলেও বাবা মায়ের কাছে শৈশবে শোনা গল্পে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েন প্রচণ্ড মায়ায়। যেই আবেগ দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্রের ওপেনার স্টিভেন টেলরের মাঝেও।
আগামীকাল সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র। যারা কিনা এবারের আসরের অন্যতম চমকও। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই এসেছেন অন্য দেশ থেকে। তবে নিজের শেকড় ভুলে এখন যুক্তরাষ্ট্রকে শিখরে তুলতে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। নিজ জন্মভূমি কিংবা বাবা মায়ের জন্মভূমির বিপক্ষে নামছেন লড়াইয়ে। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই লড়াই শেষে এবার সেই লড়াইটা করতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের দেশের একাধিক ক্রিকেটার যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মাঠে নামলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কাউকে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন না টেলর।
বাবা-মার জন্মস্থান বার্বাডোসে তাদেরই বিপক্ষে মাঠে নামা নিয়ে বেশ আবেগী টেলর। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে জেতাতে নেজার সবটুকু নিঙরে দেওয়ার অঙ্গীকারের কথায় জানিয়েছেন এই মার্কিন ওপেনার। তবে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন ক্যারাবীয়দের সঙ্গে কণ্ঠ মেলানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না তিনি। আর সেটা নিজের বাবা মার প্রতি সম্মানের কারণেই। ম্যাচটা তাই বাবা মাকেই উৎসর্গ করেছেন টেলর।
বাবা-মার জন্মভূমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামা নিয়ে টেলর বলেন, ‘একটি দুর্দান্ত অনুভূতি হবে আমার জন্য। আমি আমার বাবা-মা, এবং জ্যামাইকান ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করছি। দিন শেষে, আমি আমেরিকান হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারি, কিন্তু আমি আমেরিকান ভাষায় কথা বলার চেয়ে জ্যামাইকান ভাষাতেই বেশি কথা বলি।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো খেলতে নামার অনুভূতি নিয়ে টেলর বলেন, ‘আমার বড় হওয়া, ব্রায়ান লারা, ক্রিস গেইলকে দেখে। এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবং বিশ্বকাপের মঞ্চে, জীবনের সর্বোচ্চ মঞ্চে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। আমি হয়তো তাদের হারিয়েও দিতে পারি। আর এটা হলে একটা দারুণ অনুভূতি হতে পারে আমার জন্য।’
গত বছর জিম্বাবুয়েতে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের বাছাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৯ রানে হেরেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই ম্যাচেও ছিলেন টেলর। তবে সেসব না টেনে এবার ভিন্ন গল্পই লিখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যা টেলরের কথাতেই পরিষ্কার। টেলর বলেন, ‘আমরা দিন শেষে তাদের বিপক্ষে লড়াই করছি। আর আমরা জানি ভালো ক্রিকেট খেললে তাদের হারানোর সুযোগ আছে আমাদের। আমরা জানি সুপার এইটে আমরা যাদের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি তাদের কাছে আমরা আন্ডারডগ। তাই, আমরাদের শুধু ভালো ক্রিকেট খেলার দিকেই মনোযোগ। সেটা হলেই আমরা জিতব; যদি আমরা হারি, তবে হারলাম।’
ম্যাচের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় সঙ্গীত বাজা শুরু হলে তার অনুভূতি কি হবে জানতে চাইলে টেলর বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় ‘র্যালি’ গানটি গাইতাম, কিন্তু দিন শেষে, আমি আমার আসল দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, যেখানে আমি জন্মেছি এবং বড় হয়েছি। আমি শুধু আশা করি আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লাইন ধরতে আসতে পারব। আমি শেষবার গানটি গেয়েছিলাম, যা আমার মাথায় আছে।’