পরমানন্দের মাঝেই রশিদের সেমিফাইনাল ভাবনা
‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে/মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে।’ – রশিদ খানকে দেখে এমন কিছুই মনে হচ্ছিল। শুধু রশিদ কেন, পুরো আফগানিস্তান দলই তো এমন আনন্দে উদ্বেল ছিল! হবেই বা না কেন? ইতিহাসে প্রথম বারের মতো যদি আপনার দল চলে যায় কোনো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, তখন তো এমন আনন্দে ভেসে যাওয়ারই কথা আপনার!
আফগানদের আনন্দটা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা ঠাহর করা যায় কোচ জনাথন ট্রটকে দেখলে। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে কোচকে কাঁধে নিয়ে মাঠ ঘোরান শিষ্যরা। সেখানে তিনিই কাঁধে তুলে নিলেন ব্যাটার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে, যিনি বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতেই চোট নিয়ে চলে গিয়েছিলেন মাঠের বাইরে।
আফগানিস্তানের এমন আনন্দের আরও একটা কারণ আছে। তাদের পেছনে ফেলে আসা নিকট অতীতটা তাদের আনন্দটা বাড়িয়েই দেয় বৈ কমায় না। এই কয়েক বছর আগেও দলটা খেলেছে বুয়েনোস আইরেসে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে, আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেরও অনেক নিচের দিকের পর্যায়ে। সেখান থেকে প্রথম বিশ্বকাপ খেলা, এরপর প্রথম সেমিফাইনাল… মাঝের গল্পটা স্রেফ ১৫ বছরের। তারা আনন্দে ভেসে যাবে না তো কারা যাবে?
ম্যাচটা শেষ তখন। ইতিহাস গড়া হয়ে গেছে। এরপরের প্রতিক্রিয়াটা জানাচ্ছেন রশিদ খান। এতটা সময় নিলেন, যতটা সময় আজকাল কোনো সাক্ষাৎকারেও দেন না ক্রিকেটাররা। দীর্ঘ একটা সাক্ষাৎকারই তিনি দিয়ে বসলেন। জানালেন সেমিফাইনালে স্বপ্নপূরণের আনন্দটা কেমন, কেমন অবিশ্বাস্য অনুভূতি এটা, কেউ যখন বিশ্বাস করে না, তখন সাফল্যের মজাটা কেমন… ম্যাচ নিয়ে বললেন নানা কথা।
টুর্নামেন্টের শুরুতে আফগানিস্তান নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল ৮৪ রানে। সেদিন একটা বার্তাই গিয়েছিল আর সবার কাছে। অপ্রয়োজনীয় তথ্য লাগতে পারে, কাকতালীয়ভাবে সেদিন বাংলাদেশও প্রথম ম্যাচটা খেলেছিল নিজেদের।
রশিদ জানালেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই বিশাল জয়টাই এই বিশ্বাসটা আরও ভালো করে বুনে দিয়েছিল দলের ভেতর। তার কথা, ‘সেমিফাইনালে খেলাটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। টুর্নামেন্ট যখন শুরু করেছি, নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর থেকেই এই বিশ্বাসটা চলে এসেছিল আমাদের মধ্যে।’
এরপর এল নিজেদের দেশে পরিস্থিতির কথাটা। রশিদ বললেন, ‘ম্যাচের আগে আমরা এই আলোচনাটা করেছিলাম যে, আমরা আমাদের মানুষগুলোকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিতে চাই। আমরা আমাদের কাজটা দারুণভাবেই করেছি।’
সে কাজটা এখন করে ফেলেছেন। এখন পরিস্থিতিটা কেমন? রশিদের সরল স্বীকারোক্তি, তার কাছে ভাষা নেই বিষয়টা বলার মতো! তিনি বললেন, ‘আমাদের দেশে দারুণ উদযাপন হচ্ছে। আমাদের জন্য বেশ বড় একটা অর্জন। আমরা এই কাজটা অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে করেছি। দেশে মানুষের কেমন অনুভূতি, তা আমি বলে বুঝাতে পারব না, আমার কাছে ভাষা নেই।’
সেসব মানুষকে এমন জয়ের দিনেও ভুললেন না। জয়টা তাদের জন্য অতি অবশ্যই একটা উপহার। তবে যাওয়ার আগে রশিদ পোশতু ভাষায় কিছু একটা বার্তা দিয়ে গেলেন। ‘মুবারাক’ আর এ জাতীয় কিছু শব্দ থেকে তারও একটা অর্থ উদ্ধার করা গেল, তিনি সমর্থকদেরও সম্ভাষণ জানিয়েছেন!
তবে আনন্দে ভেসে গেলেও সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবনা এখনই যে শুরু হয়ে গেছে দলে, তাও জানিয়ে দিলেন রশিদ। আগামী ২৭ জুন ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নামবে তার আফগানিস্তান। সে ম্যাচ নিয়ে তার কথা, ‘এই উপলক্ষটা উপভোগ করে আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন সেমিফাইনালে পরিষ্কার একটা মগজ নিয়ে যেতে পারি।’
বার্তাটা পরিষ্কার। সেমিফাইনালে উঠেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে না আফগানিস্তান। ‘বোনাস’ ভাবছে না নিকট ভবিষ্যতে সম্ভাব্য অর্জন(গুলো)কে।