প্রস্তুতি ম্যাচের ভালো-মন্দ
প্রস্তুতি ম্যাচ মানে গা গরম করে নেওয়া, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া নিজেদের, ব্যাট-বল হাতে কিছুটা আত্মবিশ্বাস জমা করে নেওয়া ঝুলিতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ তার সবকটাই করেছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচের ভালো-মন্দ কিছু দিক চলুন জেনে নেওয়া যাক–
অলরাউন্ডার রিশাদ!
তার ভূমিকাটা মূলত বোলারের। ঘরোয়া ক্রিকেটে যা কিছু ম্যাচ খেলেছেন, তা ওই ভূমিকাতেই। এখন পর্যন্ত ওয়ানডে অভিষেকই হয়নি, যা কিছু লিস্ট এ ম্যাচে খেলেছেন, তাতে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা ছিল ১২ রানের। তো ব্যাট হাতে তার ক্যালিবারটা বোঝাই যাচ্ছিল না। যা তিনি জানান দিলেন আজ।
ব্যাট হাতে যখন নামছেন, তখন ছোট্ট একটা ধস নেমে গেছে ইনিংসে। লিটন দাসকে সঙ্গ দিলেন এসে, ধস ঠেকল তাতে। এরপর লিটনের বিদায়ের পর বাংলাদেশের ইনিংস টানলেন একাই। খেললেন ৫৪ বলে ৮৭ রানের ইনিংস, ১১ টা চার আর ৪টা ছক্কায় সাজালেন ইনিংসটা।
এরপর নিজের ভূমিকাতেও বেশ সফল। দারুণ বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের লেজটা মুড়ে দিয়েছেন, তুলে নিয়েছেন ৩টি উইকেট। তার অলরাউন্ড নৈপুন্যেই তো মূলত জয়টা তুলে নিল বাংলাদেশ!
‘বোলার’ আফিফের ফেরা
আফিফ হোসেনের পরিচয়টা মূলত অলরাউন্ডারের হলেও জাতীয় দলের আঙিনাতে তাকে যেন ব্যাটারের ভূমিকাতেই দেখা যায় বেশি। বোলিং করেছেন, ৩০ ওয়ানডেতে বোলিং করেছেন মোটে ৯ ইনিংসে।
আজ প্রস্তুতি ম্যাচে তার হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক লিটন দাস। প্রতিদানটাও যেন দিয়েছেন তিনি। শুরুর স্পেলে তুলে নিলেন টডের উইকেট, স্বাগতিকদের ঠেলে দিয়েছিলেন খাদের কিনারে। এরপর প্রতিপক্ষ যখন ১৫৬ রানের বড় জুটি পেয়ে গিয়েছিল, সে জুটি ভেঙে দলকে ম্যাচেও ফিরিয়েছেন তিনিই। ইনিংস শেষ করেছেন নামের পাশে তিন উইকেট নিয়ে। ভুলতে বসা ‘বোলার’ পরিচয়টা যেন আবারও মনে করিয়ে দিলেন আফিফ।
তানজিদ-লিটন-সৌম্যর ব্যাটে রান… তবে!
বাংলাদেশ শুরুটা ভালো পেয়েছিল, তানজিদ হাসান তামিম দারুণ শুরু করেছিলেন, ফিফটি পেয়েছেন। এরপর লিটন দাস আর সৌম্য সরকারও তাই। বাজে বিশ্বকাপের পর তানজিদ আর লিটনের ব্যাটে রান নিশ্চয়ই স্বস্তি দেবে তাদের, দলে ফেরা সৌম্য সরকারের জন্যও এই ফিফটির গুরুত্বটা একই।
তবে তাদের তিন ফিফটিই শেষ হয়েছে একটা আফসোস নিয়ে। গত বিশ্বকাপ থেকেই বাংলাদেশ ভুগছে টপ অর্ডার থেকে বড় রান না পেয়ে। আর সবার সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্যটা গড়া হয়ে যাচ্ছে এখানেই, অন্য কেউ যখন সুযোগ পাচ্ছেন, বড় কিছু করছেন, আর বাংলাদেশের টপ অর্ডার শেষ হয়ে যাচ্ছে ফিফটির পরেই। নিউজিল্যান্ড সিরিজে ভালো কিছু করতে হলে নিশ্চিতভাবেই এই জায়গায় উন্নতি চাইবে বাংলাদেশ।
… এবং বোলিং!
দারুণ শুরুর পর খেই হারিয়ে ফেলা, প্রতিপক্ষের ওপর চাপটা সরে যেতে দেওয়া অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছে। এটা ভোগাল আজও। ৮০ রানে ৪ উইকেট তুলে নেওয়ার পর আজ নিউজিল্যান্ডের অনভিজ্ঞ দলটা বাংলাদেশের সামনে তুলে দিয়েছিল ১৫৬ রানের জুটি। শুরুটা ভালো হওয়ার পরও বাংলাদেশ জিতেছে ২৬ রানে।
মুস্তাফিজুর রহমানের অফ ফর্ম এখানে বড় ভূমিকা পালন করছে। গোটা বিশ্বকাপে তিনি উইকেট পেয়েছেন ৫টি, পাননি আজও। এবাদত হোসেনের অনুপস্থিতিতে মাঝের সময়ে উইকেট তুলে নিতে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরেই; সঙ্গে মুস্তাফিজের অফ ফর্মও বড় ভূমিকা রাখছে এখানে। নিউজিল্যান্ড সফরে পরিস্থিতিতে উন্নতি চাইলে এখানে উন্নতি প্রয়োজন সবার আগে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজের শুরু থেকে নিশ্চয়ই সেটাই চাইবে বাংলাদেশ।