বিজয়ের ৫২ বছরে বাংলাদেশের সেরা ১০
৫৩ বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে বঙ্গোপসাগরের পার ঘেঁষা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের ছোট্ট দেশটি। যে পথে মিশে আছে লক্ষ্য কোটি মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অবদান। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় ভূমিকা আছে ক্রীড়াঙ্গনেরও।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল থেকে শুরু করে আজকের সাকিব-জ্যোতি-জামাল-সাবিনা-ইমরানুর ও সুরকৃষ্ণ চাকমারা টানছেন বাংলাদেশকে। বিজয়ের পতাকা উড়াচ্ছেন বিশ্ব মঞ্চে। বাংলাদেশকে করছেন গৌরবান্বিত। স্বাধীনতার পর থেকে ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের দশটি সাফল্যের কথা জানাব এই প্রতিবেদনে।
১> স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল
বাংলাদেশে ক্রীড়াঙ্গনের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭১ সালের ১৩ জুন যাত্রা শুরু করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। তহবিল সংগ্রহ ও বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ে যুদ্ধ চলাকালীন সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মুম্বাই ও বিহারে ১৪টি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছেন একদল স্বপ্নবাজ তরুণ।
২> বাংলাদেশের নাম বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা সাঁতারু অরুণ নন্দী
যুদ্ধ চলাকালীন সময় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে চেনাতে হতো। স্বাধীনতা পেতে সমর্থন পেতে হতো বৈশ্বিক। সেটি করতে জলে ভেসে বিশ্বরেকর্ড গড়ার পণ করেন অরুণ নন্দী। যুক্তরাষ্ট্রের বি সিমুনের ৮৯ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট সাঁতারের রেকর্ড ভেঙে দেন বাংলার অরুণ। জলে ভেসে থাকেন ৯০ ঘণ্টা ৫ মিনিট। আর পুরস্কারের অর্থটা জমা দেন মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে।
৩> ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ
১৯৭৪ সালে ফিফার সদস্য হওয়ার পর ১৯৯৫ সালে প্রথম চার জাতি চ্যালেঞ্জ কাপ ট্রফি জেতে বাংলাদেশ ফুটবল দল। এরপর কাঠমান্ডুতে ১৯৯৯ সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে ফুটবলে প্রথম সোনা জেতে বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে বাংলাদেশ। একই শিরোপা জিতেছে মেয়েরাও। ২০২১ সালে মেয়েদের হাত ধরে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় পড়ে বাংলার মেয়েরা।
৪> ক্রিকেটে যুব-বিশ্বকাপ জয়
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর থেকে বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা ছেলেদের ক্রিকেটে বড় অর্জন। তবে যুবারা ছাড়িয়ে গেছে বড়দের। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তাদের হাত ধরেই বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ। ক্রিকেটে মেয়েদের অবদানও কম নয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশকে এশিয়া কাপ জিতিয়েছেন তারা।
৫> দাবার রানী
দাবায় বাংলাদেশের রানী হয়ে আছেন সৈয়দা জসিমুন্নেসা রানী। ১৯৮৩ সালে লন্ডনে ব্রিটিশ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন রানী। এরপর ১৯৮৫ সালে ফিদে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব পান। ৩ বার ব্রিটিশ মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশকে সম্মান এনে দেন বিশ্বমঞ্চে।
৬> ট্র্যাকে শাহ আলমের পর ইমরানুর
১৯৮৫ সালের সাফ গেমসে দ্রুততম মানব হয়েছিলেন বাংলাদেশের শাহ আলম। তার দেখানো পথে অনেকে হাঁটতে চেষ্টা করলেও সাফল্যটা এনে দিয়েছেন ইমরানুর রহমান।
পুরুষদের ৬০-মিটার ট্র্যাকে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে সোনা জিতিয়েছেন ইমরানুর। অ্যাথলেটিক্সে যা বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন।
৭> বক্সিংয়ে মোশাররফ থেকে সুরকৃষ্ণ চাকমা
স্বাধীনতার পর বক্সিংয়ে বাংলাদেশকে প্রথম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য এনে দেন মোশাররফ হোসেন। ১৯৮৬ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে ব্রোঞ্জপদক জেতান বক্সার মোশাররফ। দীর্ঘ বছর পর তাকে ছাড়িয়ে ৬১ কেজি লাইটওয়েট ইভেন্টে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে সম্মান এনে দেন সুরকৃষ্ণ চাকমা। জেতেন সোনা।
৮> উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার নিয়াজ
উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে দাবায় বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে সম্মানিত করেছেন নিয়াজ মুরশেদ। ১৯৮৭ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টার মর্যাদা পাওয়া নিয়াজ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত টানা চার বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে দাবা।
৯> কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশ প্রথম স্বর্ণ
১৯৯০ কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশকে প্রথম স্বর্ণ জেতান শ্যুটার আতিকুর রহমান। সেই বছরই বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ১৯৯০ এশিয়ান গেমসে কাবাডি থেকে রুপা পায় বাংলাদেশ। এরপর কমনওয়েলথ গেমসের একাধিক ইভেন্টে সোনা জিতেছে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। এশিয়ান আর্চারি ও বিশ্ব র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে সোনা জিতিয়েছেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দীকি।
১০> ক্রিকেটার সাকিবের বিশ্বসেরা হয়ে উঠা
২০০৯ সালে অলরাউন্ডার হিসেবে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন সাকিব আল হাসান। একটা সময় ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই নাম্বার ওয়ান ক্রিকেটার ছিলেন সাকিব। তবে এখন সেটা হারালেও ওয়ানডেতে তিনিই সেরা ক্রিকেটার। যা বাংলাদেশের জন্যও সম্মানের।
ক্রীড়াঙ্গনের এমন সব অর্জনেই বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। যেই অর্জনের গর্বিত অংশীদার আপনি আমি সকলেই।