এমবাপের হৃদয় ভাঙার সেই রাত
একটা মহাকাব্য লেখা হয়েছে। কেবল ঘোষণা দেওয়া বাকি। প্রস্তুতি চলছে মহাকাব্যের মহানায়ককে বরণ করে নেওয়ার। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। আরও একবার শিরোপা হাতছাড়া হলো বুঝি। শুরু হয়েছে ঝড়। প্রথম প্রেমিকাকে হারানোর তীব্র যন্ত্রণার মতোই ব্যথায় কাতর আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। চোখ ছলছল করছে। অথচ মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। এভাবেই চললো মিনিট দশেক। পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আর্জেন্টাইন সমর্থকদের অমন বিমর্ষ মুখ দেখে মন নরম হলো বুঝি স্বয়ং ঈশ্বরের।
টাইব্রেকারে কোলো মুয়ানিকে রুখে দিলেন মেসিকে বিশ্বকাপ জেতাতে প্রয়োজনে নিজের প্রাণটা দিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। মুহূর্তেই বদলে গেল গোটা দৃশ্যপট। প্রাণ ফিরল শূন্য দেহে। জেগে উঠল সমর্থকরা। আর চিন্তা নেই দিবু আছে তো। দিবু নৈপুণ্যে শেষ হাসিটা হাসল আর্জেন্টিনা। গল্পটা একই থাকল বটে তবে পরিবর্তন আসলো মহাকাব্যের মহানায়কে। বিশ্বকাপে হাত ছুঁয়ে সব জয় করলেন মেসি। লাভ করলেন অমরত্ব।
অথচ বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও মহানায়ক হয়ে উঠা হলো না এমবাপের। আসর সর্বোচ্চ গোল করার পুরস্কার হাতে উঠল বটে তবে তা চাপা পড়ল মেসির হাতে বিশ্বকাপের বর্ণ ছটায়। আসলে এমনি হয়ে থাকে, নিষ্ঠুর এই ধরায় পরাজিতদের মনে রাখে না কেউ।
অথচ ফরাসিদের টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতানোর খুব কাছেই ছিলেন এমবাপে। দিদিয়ের দেশম, জিনেদিন জিদান ও বর্তমান দলে থাকা আলিবার জিরু ও অ্যান্টোনিও গ্রিজমানকে ছাড়িয়ে ফরাসিদের মহানায়ক হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন ২৩ বছরের এই তরুণ। পুরো আসর জুড়ে কাউকে উপলব্ধি করতে দেননি চোটের কারণে দলটিতে নেই সময়ের অন্যতম তারকা করিম বেনজেমা। সবাইকে ছাপিয়ে এই তরুণ হয়ে উঠেছিলেন ফরাসিদের স্বপ্নদ্রষ্টা।
পাবলো পিকাসোর মতো শৈল্পিক তুলিতে মাঠে রঙের আঁচড় ফেলছিলেন এমবাপে। যা হয়ে উঠছিল এক একটি রূপকথার গল্প। সেই রূপকথার শেষ দৃশ্যপট যে এভাবে বদলে যাবে কে ভেবেছিল? সাম্রাজ্য রেখে শূন্য হাতে ফিরতে হবে নায়ককে। এতো এতো অর্জন গোল্ডেন বুট কিংবা ফাইনালের ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক; সব ফেলে দুর্ভাগা এমবাপেকে মাঠ ছাড়তে হলো মাথা নিচু করে। মহানায়ক হওয়ার বদলে কাতারের লুসাইল থেকে এমবাপেকে ফিরতে হলো এক বুক না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে।