টিম পারফর্ম্যান্সেই গড়া হলো ইতিহাস
ছুটো ছাটা দুয়েকটা পারফর্ম্যান্স হচ্ছিল বটে, কিন্তু একটা দল হিসেবে যেন পারফর্ম করতে পারছিল না বাংলাদেশ। সে সমস্যার সমাধানেই লুকিয়ে আছে জয়ের রেসিপি, কথাটা আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সে রেসিপিটা অবশেষে যখন মানল দল, তখনই গড়া হয়ে গেল ইতিহাস। নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে হারানোর ইতিহাস।
এ ইতিহাসটা আবার যেনতেনভাবে গড়েনি বাংলাদেশ। গড়েছে তাদের দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে, দুই অঙ্কে অলআউট করে, এরপর ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে আজ কোনো কিছুই নিউজিল্যান্ডের পক্ষে কথা বলেনি, এমনকি টসটাও না। উইকেটে ঘাস আর সকালের আদ্রতার কথা মাথায় রেখে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নেন ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের দল হয়ে ওঠার গল্পের শুরু ওখানেই।
শুরুটা করে দিয়েছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। আগের ম্যাচে উইকেট পাননি। আজ শুরুর স্পেলেই দুই উইকেট। তাও কার? ইন ফর্ম রাচিন রবীন্দ্র আর আগের ম্যাচের নায়ক হেনরি নিকলসকে। ওপাশে শরিফুল ইসলামের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। লাইন লেন্থের দিক থেকে একটু যেন আড়ষ্টতা রয়েই গিয়েছিল তার।
সেটা যখন একবার কেটে গেল, তখন শরিফুলই হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। এ কৃতিত্বে শান্তরও ভাগ আছে বেশ। উইকেটের এ পাশ থেকে পেসাররা সাহায্য পাচ্ছেন, খেয়াল করেই শরিফুলকে নিয়ে আসেন আক্রমণে। প্রথম ওভারেই শরিফুল ফেরান ডেঞ্জারম্যান টম ল্যাথামকে, পরের ওভারে আরেক সেট ব্যাটার উইল ইয়াংকেও। নতুন ব্যাটার মার্ক চ্যাপম্যানকেও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফেরত পাঠান প্যাভিলিয়নে। শরিফুলের তিন ওভারে তিন উইকেট ম্যাচে ফেরার পথটা আটকে দেয় নিউজিল্যান্ডের।
বাকি কাজটা সেরেছেন তানজিম সাকিব আর সৌম্য সরকার মিলে। তিন ওভার পর শরিফুলকে সরিয়ে তানজিমকে আক্রমণে এনেছিলেন শান্ত। তিনিও প্রথম ওভারেই দেন এর প্রতিদান। ফেরান টম ব্লান্ডেলকে। সাকিবকে সরিয়ে যখন সৌম্য এলেন এই প্রান্তে, তখনও প্রথম ওভারে উইকেট। পরের দুই ওভারেও ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখেন সৌম্য।
বাকি ছিল একটা উইকেট। একাদশে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমান উইল ও’রর্কেকে বোল্ড করে সেটাও তুলে নেন। ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো প্রতিপক্ষের দশ উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশের পেসাররা। একটা রেকর্ডও গড়া হয়ে যায়। নিউজিল্যান্ডকে এই প্রথম গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় তিন অঙ্কে পৌঁছুবার আগে। সব মিলিয়ে তৃতীয় বারের মতো প্রতিপক্ষকে দুই অঙ্কে অলআউট করে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড গড়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রানে অলআউটের ‘কীর্তি’।
প্রতিপক্ষকে দুই অঙ্কে অলআউট করলে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে তার প্রতিটিই। তবে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, আর কন্ডিশন তাদের চেনা বলে শঙ্কাও কম ছিল না! তবে সে শঙ্কা দূর করে দেন ওপেনার এনামুল হক বিজয় আর শান্ত মিলে। ওপেনার সৌম্য সরকার চোখের সমস্যা নিয়ে ফিরে না গেলে হয়তো শান্তকে নামতেই হতো না মাঠে।
তবে তিনি যখন মাঠে এলেন, ছাপ রেখে গেলেন বেশ। দাপুটে ব্যাটিংয়ে দলকে দ্রুত নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে। ওপাশে এনামুলও ছিলেন বেশ সপ্রতিভ। দুয়ের মিশেলে এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ৩৭ বছর পর প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড বুঝি নিজেদের মাঠে ১০ উইকেটে হারবে। কিন্তু দল যখন জয় থেকে ১৫ রানের দূরত্বে, তখন এনামুল ফেরেন উইল ও’রর্কের শিকার বনে। যার ফলে দশ উইকেটের জয়টা আর পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের দীর্ঘদিন নিজেদের মাঠে ১০ উইকেটে না হারার দর্পটাও রয়ে যায়।
তবে আর সব রেকর্ড অবশ্য অক্ষত রাখতে পারেনি কিউইরা। ১৭ বছর আর ১৮ ম্যাচ পর হারে বাংলাদেশের কাছে। সিরিজটা তাতে দুই দলই শেষ করে তৃপ্তি নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের তৃপ্তিটা সিরিজ জেতার, আর বাংলাদেশের তা ইতিহাসগড়ার।