২০২৩ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা বছর হলো না যে কারণে
‘২০২৩ সাল হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা বছর’ – চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ কথা বলেছিলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের বছরের শুরুতে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকার মুখে এমন কথা অনেকের মনেই নতুন আশার সঞ্চার করেছিল।
কিন্তু সে কথার প্রায় এক বছর পর এসে হিসেব কি মিলছে? উত্তরটা হয়তো আপনিও জানেন। শেষ কয়েক আসরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ ক্যাম্পেইন কাটিয়েছে এবার।
আপনি হয়তো বলতে পারেন, বিশ্বকাপের ঠিক আগে সাকিব আর তামিম ইকবালের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসায় এর প্রভাব পড়েছে মাঠের ক্রিকেটে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে ক্রিকেটাররা যেভাবে পারফর্ম করেছেন, তাতে তো সে যুক্তিও ধোপে টিকছে না!
চলতি বছরের পরিসংখ্যানটা দেখুন একবার। চলতি বছর বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভুগেছে ব্যাটিংয়ে। সেই ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে দেখুন। ব্যাটারদের ভোগান্তির শুরু তো ওখান থেকেই! যার একটা চূড়ান্ত রূপই দেখা গেছে বিশ্বকাপে।
ঠিক এই সময় বিশ্বজুড়ে ব্যাটারদের পারফর্ম্যান্স দেখুন। শেষ এক বছরে সবচেয়ে বেশি রান এসেছে শুবমান গিলের ব্যাট থেকে। তিনি রান করেছেন ১৫৮৪, গড় ৬৩.৩৬, স্ট্রাইক রেটটাও ঈর্ষণীয়, ১০৫.৪৫। তারপর থেকে আছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ড্যারিল মিচেল আর পাথুম নিসাঙ্কারা। শেষ জনের ব্যাট থেকে এসেছে হাজারের ওপরে রান, গড় আর স্ট্রাইক রেটও বেশ ভালো।
২০২৩ সালের সেরা ৫ ব্যাটার
নাম |
ইনিংস | রান | সর্বোচ্চ | গড় | স্ট্রাইক রেট |
শুবমান গিল | ২৯ | ১৫৮৪ | ২০৮ | ৬৩.৩৬ | ১০৫.৪৫ |
বিরাট কোহলি | ২৪ | ১৩৭৭ | ১৬৬* | ৭২.৪৭ | ৯৯.১৩ |
রোহিত শর্মা | ২৬ | ১২৫৫ | ১৩১ | ৫২.২৯ | ১১৭.০৭ |
ড্যারিল মিচেল | ২৫ | ১২০৪ | ১৩৪ | ৫২.৩৪ | ১০০.২৪ |
পাথুম নিসাঙ্কা | ২৯ | ১১৫১ | ১০৪ | ৪৪.২৬ | ৮৭.৩৯ |
এদিকে বাংলাদেশের ব্যাটারদের হাল দেখুন। হাজারের ওপরে রান নেই কারো। সর্বোচ্চ রান নাজমুল হোসেন শান্তর, ৯৯২ রান। গড় ৪১.৩৩, স্ট্রাইক রেট ৮৫.৮১। বিশ্বজুড়ে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের তালিকায় তার অবস্থান ১২তম। এই তালিকায় বাংলাদেশের পরের ব্যাটারের নাম মুশফিকুর রহিম, তিনি আছেন ২৩তম অবস্থানে। এরপর সাকিব আল হাসান আছেন ৩৫তম অবস্থানে। ৩৫ গড়ে তিনি রান করেছেন ৭৩৫। তাওহীদ হৃদয় আছেন তার ঠিক পরের জায়গাটাতেই। তার রানও সাকিবের আশেপাশেই, ইনিংসও প্রায় একই। মোটাদাগে বছরটা বাজে কাটালেও লিটন দাস আছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার পরের অবস্থানে। ২৬ গড়ে তার রান ৬৫১।
বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ব্যাটার
নাম | ইনিংস | রান | সর্বোচ্চ | গড় | স্ট্রাইক রেট | সেরার তালিকায় |
নাজমুল শান্ত | ২৬ | ৯৯২ | ১১৭ | ৪১.৩৩ | ৮৫.৮১ | ১২ |
মুশফিকুর রহিম | ২৬ | ৮৪৬ | ১০০* | ৩৬.৭৮ | ৮৬.৫৯ | ২৩ |
সাকিব আল হাসান | ২২ | ৭৩৫ | ৯৩ | ৩৫.০০ | ৮৯.৮৫ | ৩৫ |
তাওহীদ হৃদয় | ২৩ | ৭২৭ | ৯২ | ৩৪.৬১ | ৮৫.২২ | ৩৬ |
লিটন দাস | ২৮ | ৬৫১ | ৭৬ | ২৬.০৪ | ৮৪.৪৩ | ৪২ |
এবার আসা যাক বোলারদের তালিকায়। চলতি বছর সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন কুলদীপ যাদব, তার উইকেটসংখ্যা ৪৯, গড় আর ইকনমিটাও বেশ ঈর্ষণীয়। তালিকায় এর পরের অবস্থানে আছেন মোহাম্মদ সিরাজ, সন্দ্বীপ লামিচানে, মোহাম্মদ শামি আর শাহিন আফ্রিদি।
২০২৩ সালে ওয়ানডেতে সেরা বোলার
নাম | ইনিংস | উইকেট | সেরা | গড় | ইকনমি |
কুলদীপ যাদব | ২৯ | ৪৯ | ৫/২৫ | ২০.৪৮ | ৪.৬১ |
মোহাম্মদ সিরাজ | ২৪ | ৪৪ | ৬/২১ | ২০.৬৮ | ৫.২৮ |
সন্দ্বীপ লামিচানে | ২১ | ৪৩ | ৫/২৫ | ২২.০৪ | ৪.৮৫ |
মোহাম্মদ শামি | ১৯ | ৪৩ | ৭/৫৭ | ১৬.৪৬ | ৫.৩২ |
শাহিন আফ্রিদি | ২১ | ৪২ | ৫/৫৪ | ২৪.০৪ | ৫.৫৯ |
ব্যাটারদের মধ্যে সেরার তালিকায় শীর্ষ দশে ছিলেন না কেউ, তবে বোলারদের ভেতর একজন আছেন দশ নম্বরে। তিনি শরিফুল ইসলাম। ১৯ ইনিংসে ৩২ উইকেট গেছে তার দখলে, দেশীয়দের মধ্যে সবচেয়ে ভালো গড় তার। ইকনমিটাকেও রেখেছেন লাগামের মধ্যেই।
এরপর আসেন তাসকিন আহমেদ। তিনি আছেন চলতি বছর সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকার ২৬নম্বর অবস্থানে। উইকেটও তার ২৬টা। পেসারদের ভেতর সবচেয়ে ভালো ইকনমি তার, ওভারপ্রতি দিয়েছেন ৪.৭৯ করে রান।
বাংলাদেশের সেরা ৫ বোলার
নাম | ইনিংস | উইকেট | সেরা | গড় | ইকনমি | সেরার তালিকায় |
শরিফুল ইসলাম | ১৯ | ৩২ | ৪/২১ | ২৪.৮৭ | ৫.৫০ | ১০ |
তাসকিন আহমেদ | ১৭ | ২৬ | ৪/৪৪ | ২৫.৩৪ | ৪.৭৯ | ২৬ |
মেহেদী মিরাজ | ২৫ | ২৩ | ৩/২৫ | ৪২.০৪ | ৫.৪৩ | ৩৬ |
সাকিব আল হাসান | ২০ | ২৩ | ৪/৩৫ | ৩৫.৪৭ | ৪.৬৮ | ৩৭ |
হাসান মাহমুদ | ১৫ | ২২ | ৫/৩২ | ৩২.১৩ | ৬.০৮ | ৩৯ |
মেহেদী হাসান মিরাজ এই তালিকার পরের বাংলাদেশি, আছেন ৩৬তম অবস্থানে। তবে শীর্ষ পাঁচ বোলারের ভেতর সবচেয়ে বাজে গড় তার, উইকেটপ্রতি খরচা করেছেন ৪২.০৪টি করে রান। ২৫ ইনিংসে বল করে তার উইকেটসংখ্যা ২৩টি। সমান ২৩টি উইকেট নিয়ে সাকিব আছেন তার ঠিক পরের অবস্থানেই। তিনি অবশ্য ৩ ইনিংস কম বল করেছেন গড়টা অবশ্য তারও খুব বেশি ভালো নয়। যদিও ইকনমির দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সাশ্রয়ী ছিলেন তিনিই, ওভারপ্রতি দিয়েছেন মাত্র ৪.৬৮ রান।
হাসান মাহমুদও আছেন সাকিব-মিরাজের অদূরেই। ৩৯তম অবস্থানে থাকা হাসান ১৫ ম্যাচে নিয়েছেন ২২ উইকেট। তবে তিনি রান বিলিয়েছেন দেদারসে, তাই গড়টা খুব বেশি ভালো হয়নি তার।
ব্যাটার-বোলারদের এই দুই পরিসংখ্যান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার। বৈশ্বিক মানদণ্ড থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। বিশ্বক্রিকেটে দারুণ কিছু অর্জন করতে হলে লড়তে হয় চোখে চোখ রেখে, সমানে সমানে। সেখানে বৈশ্বিক মানদণ্ডই যদি খেলোয়াড়রা ছুঁতে না পারেন, তাহলে আর কী করে ভালো কিছু করা সম্ভব?
বাংলাদেশও সে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেনি। ধরা পড়ে গেছে ব্যর্থতার কানাগলিতে। আসছে বছরগুলোয় কোনো কিছু অর্জন করতে হলে ক্রিকেটারদের ভাবনায় থাকতে হবে এই পরিসংখ্যানের বিষয়টাও। পারফর্ম করতে হবে বৈশ্বিক তারকাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।