শরিফুল বল হাতে নিলেই মনে হয় একটা কিছু হবে

শরিফুল বল হাতে নিলেই মনে হয় একটা কিছু হবে

ব্যর্থতায় ভরা একটা বিশ্বকাপের পর আবার জয়ের ধারার ফিরে আসার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে আমাদের বোলাররা। সে ধারাবাহিকতা নিউজিল্যান্ডেও বজায় থেকেছে। যে দুটি ম্যাচে আমরা জয়লাভ করেছি এবং যেসব ম্যাচে আমরা ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি তার প্রত্যেকটিতেই বোলাররা রেখেছে মুখ্য ভূমিকা।

ব্যাটাররা যে গড়পড়তা পারফর্ম করেনি তা নয়। তবে শেষ ম্যাচে এসে চূড়ান্ত পরীক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ হল ব্যাটাররা। লিটন না থাকায় দলে ব্যাটিং শক্তির ঘাটতি ছিল তা বলাই বাহুল্য। সে কারণেই উপরের দিকের ব্যাটারদের আরেকটু সংযত হয়ে খেলার প্রয়োজন ছিল। জয়ের জন্য এই মাঠে বড় একটা রান সংগ্রহ করতেই হবে এটা বোধহয় সবার মাথায় ছিল। শুরুতে অতি আক্রমণাত্মক খেলতে চাওয়া সেটিরও একটি কারণ হতে পারে। বড় সংগ্রহের জন্য আসলে প্রয়োজন ছিল প্রথম দিকেই একটি ভালো পার্টনারশিপ। আজ তেমন কিছুই হয়নি। না ব্যক্তিগত পারফরমেন্স না পার্টনারশিপ।

শুরুতে ব্যাটিংয়ে আমরা যতটা আক্রমণাত্মক ছিলাম, উইকেট হারিয়ে ঠিক ততটাই রক্ষণাত্মক ছিলাম মাঝের ওভারগুলোতে। সিরিজ জয়ের চাপটা বোধহয় আমাদের উপর ছিল। ব্যাটিংয়ে আমরা খুব একটা সাবলীল ছিলাম না পুরো ইনিংস জুড়েই। বড় শট খেলতে গিয়ে ব্যাটারদের শেপ হারাতে দেখেছি যা ধারাবাহিক রান করার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তবে, আমাদের কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই যেতে হবে। বড় অর্জনের চাপ সামাল দেয়ার মানসিকতা, ব্যাপারটা সহজ নয়। আশাকরি এর সাথেও আমরা ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে পারব।

এর মধ্যেও বোলাররা যেভাবে আমাদের ম্যাচে ফিরিয়ে আনলো তা ছিল অভাবনীয়। একটা সময় ডিএল মেথডে আমরাই এগিয়ে ছিলাম। শান্তর ওভারটাতে মোমেন্টামটা ঘুরে না গেলে আমরা হয়তো কিউইদের আরও চাপে ফেলতে পারতাম।

তবে এই ফরম্যাটে শেখ মাহেদি যে বিশেষ কিছু সেটা আবারও প্রমাণ করলো সে। উইকেট না পেলেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মুস্তাফিজ ছিল দারুণ গোছানো। আমার মনে হয় বড় শট খেলতে পারে এমন ব্যাটারদের মুখোমুখি হতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না রিশাদ। এ বিষয়টিকে সে সুযোগ হিসেবে নেয় না। আমাদের পরিবেশে বেড়ে উঠা নতুন একজন লেগস্পিনার এর জন্য এটি খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এটিকে ওর ব্যর্থতা হিসেবে না দেখে ওর এই মানসিক দুর্বলতাটুকু দূর করতে পারলে আমরা হয়তো সামনের দিনের জন্য একজন কার্যকরী লেগ স্পিনার পাব।

তানভীর ওর একমাত্র ওভারে যে চার আর ছয়ের মার খেলো ঢাকার মাঠে ঐ গুলি প্রায় পারফেক্ট ডেলিভারি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে নয়। এই ধরনের উইকেটে সামান্য খাটো লেন্থে বল করারও কোন সুযোগ নেই। আশা করি ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে তানভীর। শরিফুলের কথা বলতে হয় আলাদা করে। আমার নিজের মধ্যেও একটা বিশ্বাস জন্মেছে যে ও যখন বল করতে আসে একটা কিছু নিশ্চয়ই হবে। যে দুটি বলে উইকেট পেল দুটিই ছিল ড্রিম ডেলিভারি। এতটা কনসিস্টেন্সি আমাদের কোন বোলারের মধ্যে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ওর ব্যাপারে বিশেষ যত্নশীল হতে হবে যেন বাংলাদেশকে অনেকদিন সার্ভ করতে পারে।

শেষ ম্যাচটা ভাল হলো না। তবে এই সফর আমাদের জন্য বেশ ফলপ্রসূ ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। নিজেদের উপর আমাদের বিশ্বাস বেড়েছে। নিজেদের দিনে ম্যাচ জিতব সেই মানসিকতা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। আশাকরি এখন থেকে দল নির্বিশেষে প্রত্যেকটা ম্যাচই আমরা জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে খেলব। রাঙিয়ে তুলবো ২০২৪ সাল।
সবার জন্য নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

সম্পর্কিত খবর