ট্যাক্সিচালক থেকে ক্রিকেটার, গল্পটা আমির জামালের
কোনো ক্রিকেটারের উঠে আসার গল্পে সংগ্রামের চিত্র, এ এমন নতুন কিছু নয়। এমন গল্পের বেশিরভাগ নজির মিলে উপমহাদেশের দলগুলোতে। সেই গল্পের ভাণ্ডারে নতুন এক নাম পাকিস্তানের আমের জামাল। অজি সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেক হয় জামালের। তবে সিরিজের শেষ টেস্টে এসে দেখা মিলল অল-রাউন্ডার জামালেরও।
অভিষেক ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন ২৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। বল হাতে নিজের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে জানান দিয়েছেন নিজের পেস সক্ষমতার। এবার সিডনি টেস্টে দেখালেন ব্যাটিংয়েও হাতটা ঘোরাতে পারেন বেশ ভালোভাবেই। ৮২ রানের ইনিংস খেললেন, দলকে টেনে তুললেন ধ্বংসস্তূপ থেকে। পাকিস্তান পৌঁছে গেল তিনশ রানের মাইলফলকে।
জামাল এতেই পেলেন সবার বাহবা, দলের প্রয়োজনে কী সংগ্রামী ইনিংসটাই না খেললেন! তবে জীবন নামক ইনিংসে এমন সংগ্রামে আগে থেকেই অভ্যস্ত এই পাকিস্তানি পেসার।
১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালিতে জন্ম জামালের। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের যোগদানের মধ্যে দিয়েই দেশের ক্রিকেটে পদার্পণ এই ডানহাতি পেসারের। তবে সেই বছরেই থমকে যায় জামালের ক্রিকেট জীবন।
২০১৪ সালে কেবল ১৮ বছর বয়সে পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়া, পরিবারের খরচ জোগাতে। সেখানে শুরু হয়ে ট্যাক্সি চালক হিসেবে তার নতুন জীবন।
নিয়তির কি খেল! এই অস্ট্রেলিয়াতেই তাকে নতুন করে চিনল গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। ট্যাক্সি চালক থেকে এখন দলের পেস অ্যাটাকের চালক বনে যাই যাই করছেন জামাল।
চার বছর ট্যাক্সি চালিয়ে ফের ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন জামাল। ২০১৮ সালে ফিরে আসেন দেশে এবং অভিষেক হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। সেই ম্যাচেও দুই ইনিংসে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট।
ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। যেখানে সফল হতে প্রয়োজন ধৈর্য, পরিশ্রম এবং নিয়মানুবর্তিতা। এই অস্ট্রেলিয়াতেই এসবে হাতেখড়ি জামালের, সেই ট্যাক্সি চালক থাকাকালে।
সম্প্রতি পিসিবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জামাল বলেছিলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ট্যাক্সি চালাতাম। সেই কষ্টই আমাকে নিয়মানুবর্তিতা শিখিয়েছে। এবং এটাও বুঝিয়েছে জগতে সবকিছুরই মূল্য আছে। আপনি যখন কঠোর পরিশ্রম করে কিছু অর্জন করবেন, তখন তার মূল্য দিতে শিখবেন।’
কোনো কিছুকে সম্মানের সঙ্গে লালন করলে সেটি যে কাউকে নিরাশ করে না, বর্তমান সময়ে জামাল যেন এমন কিছুর নিখুঁত এক উদাহরণ!