বধ্যভূমি কেপটাউনে ‘বিশ্বকাপ’ জেতা হলো না এলগারের

বধ্যভূমি কেপটাউনে ‘বিশ্বকাপ’ জেতা হলো না এলগারের

ডিন এলগার আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন কেপটাউন টেস্টেই দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানছেন তিনি। শেষ বেলায় নিজের ইচ্ছা হিসেবে জানিয়েছিলেন, ‘ভারতকে ২-০ তে সিরিজ হারাতে চায়। আর এটাই হবে আমার বিশ্বকাপ জয়।’ কথাটা বলার সময়ও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। আত্মবিশ্বাস না থাকারও কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। তিন দিনে গড়ানো প্রথম টেস্টে যে ভারতকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছিল দলটি। দ্বিতীয় টেস্টও তাই জিতে ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই ব্যাটার। কিন্তু বিশ্বকাপ শব্দটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল তার জন্য।

প্রোটিয়ারা নিজেদের চেনা আঙিনায় টিকতে পারল না দেড় দিনও। কেপটাউনের সবুজ গালিচা তাদের জন্য পরিণত হলো স্রেফ বধ্যভূমিতে। ভারতের বোলিং তোপে বিশেষ করে মোহাম্মদ সিরাজের তোপে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের থামতে হলো স্রেফ ৫৫ রানে। খেলতে পারল না গোটা একটা সেশনও। ২৩.২ ওভারেই শেষ প্রোটিয়াদের ইনিংস।

এমন একটা ইনিংসের পর সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জেতা কঠিন। তবে দ্বিতীয় সেশনে ভারত মাত্র ১৫৩ রানে থামলে; সেই অবাস্তব স্বপ্নটা সত্যি হলে হতেও পারত। তবে ওই যে চির-প্রমাণিত বিশ্বকাপের চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা। এলগারের উচ্চারিত সেই ‘বিশ্বকাপ’ শব্দটাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়াল তাদের জন্য। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ৯৮ রানের লিড টপকে মাত্র ৭৯ রানের টার্গেট পায় স্বাগতিকরা। যা ৭ উইকেট হাতে রেখে অনায়াসে টপকে যায় ভারত। এলগারের বিশ্বকাপ স্বপ্নে পানি ঢেলে দিয়ে ১-১ সমতায় শেষ হয় ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ।

অথচ প্রথম দিনে ১৫৩ রানে ৪ উইকেট হারানো ভারতকে আর কোনো রান তুলতে না দিয়ে শেষ ৬ উইকেট তুলে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল প্রোটিয়ারা। স্বপ্ন দেখিয়েছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে তাদের সেই সুযোগ দেয়নি ভারতীয় পেসাররা। প্রথম ইনিংসে সিরাজের জায়গা নেই জাসপ্রিত বুমরাহ। ফেরায় ৬ প্রোটিয়া ব্যাটারকে। স্বাগতিক ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম ওপেনার এইডেন মার্করাম। ১০৩ বলে ১০৬ রান করে গেছেন তিনি। আর বাকিরা করেছে মোটে ৬৪ রান। আর অতিরিক্ত ৬ রান মিলিয়ে তাদের থামতে হয়েছে ১৭৬ রানে। তাতে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭৯ রান।

লক্ষ্যটা সহজ হলেও কেপটাউন ততক্ষণে বধ্যভূমি। পেসারদের স্বর্গ উদ্যান। তাই একটা শঙ্কা তো থাকেই। তবে এদিন আর কোনো রয়সয়ে ব্যাট চালায়নি ভারত। মার্করামের ইনিংস দেখার পর ততক্ষণে বুঝে গেছে ভারতের সব ব্যাটাররাই। কি করতে হবে এই উইকেটে। এখানে হয় মার নয় মর। তাই এদিন শুরু থেকেই ব্যাট চালিয়েছে ভারত। ব্যাট চালানো কঠিন হলেও লক্ষ্যটা সহজ হওয়ায় খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হয়নি রোহিত শর্মার দলকে। জয়সওয়ালের ২৩ বলে ২৮ রানের ইনিংসেই অনেকটা জয়ের কাছে চলে যায় ভারত। এরপর শুভমান গিল ১০ ও কোহলি ১২ রানে ফিরলেও ভারতকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন অভিজ্ঞ রোহিত শর্মা।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫৫ (ভেরেয়ানে ১৫; সিরাজ ৬/১৫, বুমরাহ ২/২৫, মুকেশ ২/০)
ভারত: ১৫৩ (রোহিত ৩৯, গিল ৩৬, কোহলি ৪৬; রাবাদা ৩/৩৮, এনগিদি ৩/৩০, বার্গার ৩/৪২)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৭৬ (মার্করাম ১০৬; বুমরাহ ৬/৬১, মুকেশ ২/৫৬)
ভারত: (জয়সওয়াল ২৮, রোহিত ১৭*; রাবাদা ১/৩৪, বার্গার ১/২৯)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।

সম্পর্কিত খবর