বিদায় কায়জার!
মারিও জাগালোর মৃত্যুর খবরটা এসেছিল গত ৫ জানুয়ারি। তার দুদিন না পেরোতেই ফুটবলাঙ্গনে আবারও নেমে এলো শোকের ছায়া। এবার ‘ডার কায়জার’ খ্যাত ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
জাগালো আর বেকেনবাওয়ারের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল আছে। জাগালো ছিলেন খেলোয়াড় আর কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা প্রথম ব্যক্তি, এরপর এই খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন বেকেনবাওয়ার। দুই দিনের ব্যবধানে দুজনই এখন কেবলই এক স্মৃতির নাম। ধরাধামের মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন দুজনেই।
মৃত্যুর স্বাদটা তিনি নিয়েছিলেন গত রোববার। তবে গতকাল সোমবার তার পরিবার নিশ্চিত করে, তিনি আর নেই। বলা হয়, অস্ট্রিয়ার শহর সালজবুর্গে শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৮ বছর বয়সী বেকেনবাওয়ার।
যুদ্ধপরবর্তী জার্মানির ফুটবলে বড় এক আইকন হয়েই ছিলেন বেকেনবাওয়ার। তার খেলার জায়গা ছিল লিবেরো পজিশনে। সেখান থেকেই দলকে যোগাতেন জয়ের রসদ। জেতেন বিশ্বকাপ, ইউরো, ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ)। এরপর কোচ হিসেবেও করলেন তাই। বিশ্বকাপ জিতলেন পশ্চিম জার্মানির হয়ে, এরপর বায়ার্ন মিউনিখকে জেতালেন লিগ, উয়েফা কাপ।
এমন একজন ফুটবলের আইকন না হয়েই পারেন না। তিনি সে আইকনই ছিলেন। তাকে ডাকা হতো ডার কায়জার নামে, যার অর্থ সম্রাট। তিনি জার্মানির ফুটবলের সম্রাটই ছিলেন বটে।
সম্রাটের মৃত্যুতে জার্মান ফুটবলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেছেন, ‘আমরা তাকে মিস করব। জার্মান ফুটবলের ইতিহাসের সেরাদের একজন ছিলেন তিনি। অনেকগুলো প্রজন্মকে অনুপ্রেরণাও দিয়ে গেছেন তিনি।’
লোথার ম্যাথাউস তার অধীনে বিশ্বকাপ জেতা দলের অধিনায়ক ছিলেন। তার কণ্ঠেও ঝরে পড়ল একই সুর। বললেন, ‘আমরা তাকে মিস করব। যদিও আমি আগে থেকেই জানতাম ফ্রাঞ্জ ভালো নেই তবু এ ধাক্কা অনেক গভীর, সওয়ার মতো নয়। জার্মানি তো বটেই, ফুটবল বিশ্বের জন্যই এটা অনেক বড় একটা ধাক্কা। তিনি খেলোয়াড়, কোচ হিসেবে, মাঠে, মাঠের বাইরে ছিলেন সেরাদের একজন।’
তার মৃত্যুতে পেলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়েছে শোক। সেখানে বলা হয়েছে, ‘তারা বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু ছিলেন। রাজা পেলে বেকেনবাওয়ারকে তার ভাই বলে ডাকতেন। নিউ ইয়র্ক কসমোসে একসঙ্গে খেলতেন। এই দুই কিংবদন্তি সেখানে সুন্দর, বিরল এক বন্দুত্ব স্থাপন করেন যা পুরো জীবন জুড়েই সামলেছেন তারা। ফুটবলের প্রতি এমন ভালোবাসা যার, তেমন একজনকে বিদায় বলাটা বেশ কঠিন। যাই হোক, আমরা আশা করি, তারা আবার স্বর্গে মিলিত হবেন। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ বেকেনবাওয়ার।’
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন লিওনেল মেসিও। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্টোরি প্রকাশ করেছেন তিনি। সেখানে জুড়ে দিয়েছেন ‘কায়জার’এর ছবি, সঙ্গে লিখেছেন, ‘শান্তিতে বিশ্রাম নিন’।