যেই ক্রিকেটারদের খাটতে হয়েছে হাজতবাস

যেই ক্রিকেটারদের খাটতে হয়েছে হাজতবাস

ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। তবে আচরণে কিছুটা এদিক-সেদিকের ঘটনা দেখা যায় হরহামেশাই। তবে তা মাঠে খেলার স্বার্থে হলে কিছুটা গ্রহণযোগ্য। তবে বিপত্তি বাড়ে যদি তা হয় মাঠের বাইরে। কেননা ক্রিকেটারদের মানা হয় সেলিব্রেটি তুল্য। পুরো দেশ তাদের অনুসরণ করে। সেখানে তাদের দ্বারা অপ্রীতিকর ঘটনা সহসাই আসে সমালোচনায়।

নানান অপরাধে অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়ে জেল খাটার ঘটনার দেখা মিলেছে এর আগেও। যেখানে সর্বশেষ সংযোজন নেপালের সন্দ্বীপ লামিছানে। ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়ে তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে কাঠমান্ডুর জেলা আদালত।

নেপাল ক্রিকেটে অল্প বয়সেই বেশ সাড়া ফেলেছিলেন লামিছানে। কেবল ২৩ বছর বয়সেই গেছিলেন তারকা বনে, হয়ে উঠেছিলেন দেশের তরুণদের আইডল। তবে তার এমন কাণ্ড অনেকটা হতাশই করেছে সবাইকে।

নামি ক্রিকেটারদের এমন কাণ্ডে জেল খাটার তালিকা মোটেও ছোট নয়। সেই তালিকায় ভারতের বিনোদ কাম্বলি, দক্ষিণ আফ্রিকার মাখায়া এনটিনি, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরামসহ আছে আরও অনেক নাম। চলুন পেছনের সেই গল্পগুলো একটু মনে করা যাক।

নভজোৎ সিং সিধু, ভারত

জেল খাটার সবচেয়ে পুরনো গল্প ভারতের সাবেক ক্রিকেটার নভজোৎ সিং সিধুর। ১৯৮৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনার জের ধরে এক বৃদ্ধের সঙ্গে ঝগড়া বাধে তার। সেটি গড়ায় মারামারিতে। সেখানে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় সেই বৃদ্ধ গুরুমানকে। এবং পরে তিনি মারা যান। এতে সিধুর বিরুদ্ধে মামলা হলে গ্রেফতার হন তিনি। পরবর্তীতে তার বড় শাস্তি হওয়ার কথা থাকলেও কোনোভাবে বেঁচে যান ভারতের এই সাবেক ক্রিকেটার।

ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, আকিব জাভেদ ও মুশতাক আহমেদ

পরের ঘটনাটি ১৯৯৩ সালের। পাকিস্তানের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের। হঠাৎই গণমাধ্যমে আসে পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম গ্রেফতারের ঘটনা। তার সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন ওয়াকার ইউনুস, আকিব জাভেদ ও মুশতাক আহমেদ। তাদের কাছে অবৈধ মারিজুয়ানা আছে এমন অভিযোগে পাকিস্তানের সাবেক সেই ক্রিকেটারদের গ্রেফতার করেছিল গ্রেনাডা পুলিশ। অবশ্য তদন্তের পর তেমন কোনো আলামত মিলেনি তাদের কাছে। এবং পরের দিনই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিনোদ কাম্বলি

শচীন টেন্ডুলকারের খুব কাছের বন্ধু ছিলেন বিনোদ কাম্বলি। তার ক্রিকেটের হাতেখড়িও সেই রমাকান্ত আচরেকারের কাছে। তবে বন্ধুর ক্যারিয়ারের মতো সেভাবে নাম কামাতে পারেননি কাম্বলি। বিভিন্ন ঘটনার সূত্র ধরে মাঠের জীবনে দেখেছেন সমালোচনা। তবে এক অপরাধের জের ধরে জেল খেটেছেন ক্রিকেট ছাড়ার অনেক পরে। ২০১৫ সালের আগস্টে গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের অভিযোগে স্ত্রীসহ জেল খেটেছেন ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটার।

রুবেল হোসেন

এই তালিকা আছে কিছু বাংলাদেশি ক্রিকেটারদেরও নাম। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে প্রেমিকার করা অভিযোগে আটক হয়েছিলেন পেসার রুবেল হোসেন। পরে অবশ্য সেই অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়েছিল। একই ধরণের একই ধরণের ঘটনায় ২০১৭ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি।

শাহাদত হোসেন
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে গৃহকর্মী হ্যাপিকে নির্যাতনের অভিযোগে দুই মাস জেল খাটেন সাবেক পেসার শাহাদত হোসেন। তার কিছুদিন পর আটক হয়েছিলেন তার স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্য।

বেন স্টোকস

২০১৭ সালে ব্রিস্টলে এক পানশালার বাইরে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন ইংলিশ তারকা বেন স্টোকস। সেখানে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

ইমরান খান

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়কের জেল খাটার ঘটনা বাকি সবার থেকে আলাদা। তিনি বর্তমানেও আছেন জেলে, রাজনীতির সূত্র ধরে। ক্রিকেট ছাড়ার পর নিজের আলাদা রাজনৈতিক দল খুলেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সেটি এসেছিল ক্ষমতাতেও এবং তিনি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে ক্ষমতা হারিয়ে গত বছরের ৯ মে প্রথম দফার গ্রেফতার হন ইমরান। পরে ৫ আগস্ট গ্রেফতার হন দ্বিতীয় দফায়।

সবশেষ সন্দ্বীপ লামিছানে

ক্রিকেটারদের জেল খাটার তালিকা অবশ্য এতেই সীমাবদ্ধ না। পাকিস্তানের ব্যাটার সালমান বাট ও দুই পেসার মোহাম্মদ আসিফও মোহাম্মদ আমির দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন ইংল্যান্ড সফরে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে। একই অভিযোগে জেল খেটেছেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী পেসার শ্রীশান্তও।

তালিকায় সবশেষ তর্ক সাপেক্ষে নেপালের সবচেয়ে বড় তারকা সন্দ্বীপ লামিছানে সাজা পেলেন আট বছরের কারাদণ্ডের। তবে ধর্ষণের মতো এই গুরুতর অভিযোগের তালিকা আছে আরও এক নাম। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার মাখায়া এনটিনি। ১৯৯৮ সালে এমন অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। অভিযোগটি করেছিলেন ইস্ট লন্ডনের এক তরুণী। পরে সেটি পুরোপুরি প্রমাণ না হওয়ায় ৬ বছরের কারাদণ্ড থেকে বেঁচে যান এনটিনি, তবে মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত অল্প কিছুদিন কারাভোগ করতে হয়েছিল তাকে।

সম্পর্কিত খবর