পালিয়ে যেতে চাওয়া ছেলেটিই আজ ভারতের জাতীয় দলে

পালিয়ে যেতে চাওয়া ছেলেটিই আজ ভারতের জাতীয় দলে

ধ্রুব জুরেল, এই নামটা হঠাৎ করেই ভারতীয় ক্রিকেটে আলোচনার কেন্দ্রে! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই টেস্টের জন্য ১৬ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে ভারত। যেখানে নতুন মুখ হিসেবে ডাক পেলেন ধ্রুব জুরেল। ২২ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান প্রথম ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে।

লোকেশ রাহুলের ব্যাকআপ কিপার হিসেবেই দলে এসেছেন উত্তর প্রদেশের এই ক্রিকেটার। তারপরই শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে আলোচনা! যেখানে দেখা মিলছে তার সংগ্রামী এক জীবনের গল্প!

ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ২০১৯ এশিয়া কাপ জেতানো এই জুরেলের ক্রিকেটারই হওয়ার কথা ছিল না। শৈশবের এক দুর্ঘটনার পর খেলার মাঠে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাটাও কঠিন হয়ে যায়! ৫ বছর বয়সে আগ্রায় বাসের চাকার তলে পড়েছিল তার বাঁ পা। প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হয়। তার বাবা নেম সিং জুরেল কারগিল যুদ্ধের সৈনিক। তাইতো ক্রিকেটার হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখার আগে বাবার মতো সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন জুরেল।

যেমনটা বলছিলেন এই উঠতি ক্রিকেটার, ‘আমার বাবা সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। ক্রিকেট খেলায় কখনো তিনি সমর্থন দেননি আমাকে। চেয়েছিলেন সরকারি চাকরি করব, ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে।’ এ নিয়ে মজার এক গল্পও বলেছেন জুরেল, ‘একদিন তিনি (বাবা) সংবাদপত্র পড়ার সময় হঠাৎ করেই বললেন, “তোমার নামেই এক ক্রিকেটার আছে, যে অনেক রান করেছে।” আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। সেই ক্রিকেটারটি যে আমি, সেটা তাকে কীভাবে বলব বুঝতে পারছিলাম না। তিনি আমাকে ক্রিকেট ছাড়তে বলতে পারেন, এই ভয়টা ছিল আমার।’

এরপরই ১৪ বছর বয়সে মা–বাবাকে ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম কিনে দিতে বলেছিলেন। আর বাবা তখন তাকে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে বলেন। কিন্তু মা পাশে দাঁড়ান। ছেলের ইচ্ছাপূরণে গলার সোনার চেইন বিক্রি করেন মা।

জুরেল বলছিলেন, ‘বাবাকে বলেছিলাম একটি কাশ্মীরি উইলো ব্যাট কিনে দিতে। দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার রুপি, আমাদের জন্য বেশ দামি। বাবা ব্যাটটা কিনে দিলেও দামের কারণে ক্রিকেট খেলার পুরো সরঞ্জাম কিনে দিতে পারেননি। নিজেকে বাথরুমে আটকে বলেছিলাম, সব সরঞ্জাম কিনে না দিলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাব আমি। মা আবেগতাড়িত হয়ে গলার সোনার চেইন বাবার হাতে তুলে দিয়ে সেটা বিক্রি করে খেলার সরঞ্জাম কিনে আনতে বলেন।’

জুরেল ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের রানার্সআপ হওয়ার পথে সহ–অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আয় করা টাকা দিয়ে নিজের বাসাই জিম বানিয়ে শরীরের ফিটনেস ঠিক রাখেন। দু বছর পর আইপিএলে রাজস্থান দলে সুযোগ পেয়ে যান। পরের আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ‘ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়’ হিসেবে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে অভিষেক হয়েছিল তার। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তার।

এবার আরও বড় মঞ্চে জুরেল। জাতীয় দলের হয়ে লড়াই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ২৫ জানুয়ারি, হায়দরাবাদে।

সম্পর্কিত খবর