পাপন বিসিবি ছাড়তে চাইলে অবশ্যই পারেন, মাশরাফিরও সভাপতি হওয়ার পথ রয়েছে
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন অনেকদিন পরে একজন পূর্ণ মন্ত্রী পেয়েছে। প্রায় ৩০ বছর পরে আমরা ক্রীড়াঙ্গনে পূর্ণ মন্ত্রী পেলাম। এতদিন প্রতিমন্ত্রী দিয়ে এই মন্ত্রণালয় চালানো হয়েছে। নাজমুল হাসান পাপনকে অভিনন্দন।
তবে নাজমুল হাসান একই সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বিসিবি সভাপতি এই দুই পদেই যদি থাকেন তবে সেটা কিছুটা বিভ্রান্তমূলক তো অবশ্যই। এটা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বড় এক ধরনের কনফিউশনের জায়গা তৈরি করবে। সেই সঙ্গে স্বার্থের সংঘাতও ঘটবে।
নাজমুল হাসান পাপন ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে এখন তার বিসিবি সভাপতি পদে থাকা উচিত কিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি থাকা উচিত নয়। আর উনি এই প্রসঙ্গে যেভাবে বলছেন যে উনাকে থাকতেই হবে, আইসিসির কিছুটা বাধ্যবাধকতা আছে। উনি ছাড়তে চাইলেও ছাড়তে পারবেন না। এটাও আমার বিবেচনায় যৌক্তিক কোনো কথা মনে হয় না।
কেন মনে হয়নি, সেই উত্তরটা এমন। প্রথম কথা হলো, পদত্যাগ করা যাবে না এমন কোনো পদ কি আছে দুনিয়ার কোথাও? ঠিক তেমনই নাজমুল হাসান চাইলেই বিসিবির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন।
উনি আইসিসির যেসব পদে আছেন সেগুলো আসলে পদাধিকার বলে। অর্থাৎ উনি বিসিবির সভাপতি বলেই আইসিসির সেই পদে আছেন। ব্যক্তি হিসেবে কিন্তু উনি এই পদগুলোতে অধিষ্ঠিত হননি। ক্রিকেট ভক্ত বা ব্যক্তি হিসেবে তিনি আইসিসির এই পদগুলোতে মনোনীত হননি। তিনি মূলত মনোনীত হয়েছেন বিসিবির সভাপতি থাকার সুবাদে, সেই পদাধিকার বলে। বিসিবির সভাপতি পদে অন্য কেউ থাকলেও সেই অন্য কেউ হয়তো আইসিসির এই পদগুলোতে থাকতেন। সেই কারণে এই পদগুলো থেকে নাজমুল হাসান পাপনের এখন সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে যে কথা বলা হচ্ছে সেটা সম্ভবত সঠিক তথ্য নয়।
বিসিবি সভাপতির পদ থেকে নাজমুল হাসান পাপন যদি সরে যেতে চান তাহলে অবশ্যই তিনি পারবেন। আমি তো এখানে অন্য কোনো সমস্যা দেখি না। শ্রীলঙ্কার যে উদাহরণ টানা হচ্ছে সেটা ভিন্ন বিষয়। শ্রীলঙ্কায় তো নির্বাচিত ক্রিকেট বোর্ডকে সেদেশের সরকার বাদ দিয়েছিল বলেই আইসিসি তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু কেউ যদি স্বেচ্ছায় সভাপতি পদ ছেড়ে দিতে চায়, তাহলে সেখানে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তখন সেটা নিয়ে আইসিসির কোনো মাথা ব্যথা থাকবে না।
এবার ফিরি সাকিব-মাশরাফির বিসিবির সভাপতি হওয়ার প্রসঙ্গে তার ব্যাখ্যায়। আমার কাছে এই প্রসঙ্গে তার যুক্তিটাও গ্রহণযোগ্য কিছু মনে হয়নি। কেন মনে হয়নি আমার সেই যুক্তিটা নিচে তুলে ধরছি।
নাজমুল হাসান পাপন যদি বিসিবির সভাপতির পদ থেকে সরে যান, তাহলে তো বিসিবির পরিচালক পদও তাকে ছেড়ে দিতে হবে। তখন সেই পরিচালক পদটা শূন্য হবে। এটাই বাস্তবতা। সেই শূন্য পদে তো নতুন আরেকজন পরিচালক নির্বাচিত হতেই পারেন। সেই নির্বাচিত পরিচালক একই সঙ্গে বিসিবির সভাপতিও হতে পারেন। নাজমুল হাসান পাপন এই দফায় বিসিবিতে এসেছেন আবাহনী ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের মনোনীত কাউন্সিলর হয়ে। ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে এখন তো নাজমুল হাসান পাপন পদাধিকার বলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেরও (এনএসসি) চেয়ারম্যান। যে সংস্থার অধিভুক্ত হলো দেশের ক্লাবগুলোও। একজন ক্রীড়ামন্ত্রী যিনি আবার এনএসসির চেয়ারম্যানও, এমন কারো একটি ক্লাবের কাউন্সিলর হয়ে থাকা কি আর মানানসই কোনো কিছু? প্রশ্নটা উঠতেই পারে।
নাজমুল হাসান যদি বিসিবির সভাপতির পদ ছেড়ে দেন তাহলে অবশ্যই তার আবাহনীর কাউন্সিলরশিপ পদটাও ছেড়ে দেওয়ার কথা। সেই পদটা যদি উনি ছেড়ে দেন তাহলে সরকার চাইলে, আবাহনী চাইলে বা উনি চাইলে সেই সংস্থা থেকে যে কাউকে সেই ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে মনোনীত করতে পারে এবং সেই নতুন কাউন্সিলর একই সঙ্গে বিসিবির পরিচালক এবং সভাপতিও হতে পারেন।
এখন আপনি নতুন সেই কাউন্সিলর তথা বিসিবি পরিচালক ওরফে বিসিবি সভাপতি পদে সাকিব, মাশরাফি বা যে কোনো নাম বসিয়ে নিতে পারেন। আপনি এই যুক্তি মানলে আমি তো সাকিব, মাশরাফি বা অন্য যে কোনো নতুন কাউকে এখনই বিসিবির সভাপতি চেয়ারে বসতে দেখার মধ্যে কোনো বাধা দেখি না।
পরিবর্তনটা নির্ভর করে সদিচ্ছার উপর। আইন বা গঠনতন্ত্র এসবে কখনো বড় বাধা হতে পারে না। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। সরকার চেয়েছিল ফজলে কবিরকে আরো এক মেয়াদে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর রাখা হবে। এজন্য আইন বদলানো হয়েছিল। বিসিবির ক্ষেত্রেও এটা সম্ভব। একটা ইজিএম ডেকে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নিলেই সমস্যা যদি কিছু থাকেও সেটা সমাধান করা যায়।
নাজমুল হাসান পাপনকে এখন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে প্রতিদিনই সময় দিতে হবে। প্রচুর ব্যস্ততা বাড়বে তার। অন্যান্য ফেডারেশন ও খেলাগুলোর প্রতি যদি সঠিক জাস্টিস করতে হয় তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না যে উনার এখন বিসিবি সভাপতি পদে থাকার প্রয়োজন আছে। ক্রিকেট বোর্ডে উনি প্রায় ১৪ বছর ধরে আছেন। আমি মনে করি সেখানেও একটা নতুন আইডিয়া, নতুন চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা জানি উনি ক্রিকেট ভালোবাসেন। ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবেও উনি ক্রিকেটকে সেই সার্ভিসটা দিতে পারবেন। সেই সুযোগ তো থাকছেই।
আজাদ মজুমদার, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক নিউ এইজ