রেকর্ড নয় জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের সুদিন ফেরানোর পণ রাজার
বয়স ৩৮ ছুঁইছুঁই। অবস্থান করছেন ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে। অথচ ব্যাটে-বলে সে কি তারুণ্য। যেন ব্যাটে রানের বান ডেকেছে সিকান্দার রাজার। টি-টোয়েন্টিতি নিয়মিতই পাচ্ছেন রানের দেখা। সবশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ফিফটি তুলে, গড়েছেন অনবদ্য এক রেকর্ড। টানা পাঁচ ইনিংসে ৫০ ঊর্ধ্ব ইনিংসের রেকর্ড। যা আজ অবধি করতে করতে পারেনি কোনো ব্যাটার।
অথচ ম্যাচ শেষে মলিন মুখে সংবাদ সম্মেলনে আসতে হলো রাজাকে। নেই কোনো অনাড়ম্বর। যেন সময়টা একদমই ভালো যাচ্ছে না তার; হতাশার ছাপ চোখে মুখে। দল যখন একের পর এক ম্যাচ হারছে; সেই সঙ্গে ডুবতে বসেছে দেশের ক্রিকেট। তখন সেই দলের অধিনায়কের মুখে হাঁসি থাকবে? তাও আবার রাজার মতো একজনের মুখে; যে কিনা অন্যদেশ দেশে এদেশে এসে পরম মমতায় আপন করেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটটাকে। সেটা আশা করাটাই কি বোকামি নয়?
রাজার কাছে তাই রেকর্ডটা তুচ্ছই বটে। দলের জয়টাই তার কাছে মুখ্য। যা নিয়ে রাজা বলেন, ‘দল না জিতলে নিজের পারফরম্যান্সের কোনো মূল্য নেই। তাছাড়া জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের ভাগ্য বদলানোর আগ পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটানন্দ নেই আমার কাছে।’
সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও খেলা হয়নি জিম্বাবুয়ের। বাদ পড়তে হয়েছে আসন্ন ২০ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকেও। তাও কিনা নামিবিয়া ও উগান্ডার মতো দলের কাছে হেরে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন শুরু করতে চায় জিম্বাবুয়ে। আর সেই শুরুর অগ্রদূত হতে চান রাজা। ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার আগে দলকে টেনে তুলতে চান। নিয়ে যেতে চান বিশ্বমঞ্চে।
যেই পণের কথায় আরও একবার শুনিয়েছেন তারকা এই অলরাউন্ডার। বলেন, ‘ইদানীং আমরা নিয়মিতই ম্যাচ জয়ের কাছে গিয়ে হারছি। তবে এরমধ্যেও ভালো ব্যাপার হলো, দলের সবাই তা উপলব্ধি করতে পারছে। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের দায়িত্বটা তাই আমাদেরই। আমার মনে হয়, পরাজয়ের ভূত আমাদের তাড়া করছে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী যে, এই ছেলেরাই একদিন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সুদিন ফেরাবে।’
কলম্বোর মন্থর উইকেটেও ৪২ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলার পর; বল হাতে ৪ ওভারে ১৪ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন রাজা। এমন পারফরম্যান্সের পরও জেতেনি দল। জয়ের পথে থাকা ম্যাচ হারতে হয়েছে শেষ বলের নাটকীয়তাই।
আর সে কারণে উদযাপন না করে বরং সুদিন ফেরানোর প্রতিজ্ঞা করেছেন রাজা। বলেন, ‘আমি আমার দেশের ক্রিকেটের সুদিন ফেরানোর প্রতিজ্ঞা করেছি, এই প্রতিজ্ঞা আমরা দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের জন্য। ঘুরে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত উপভোগের ব্যাপার বলে কিছু নেই আমার জন্য।’
সিকান্দার যেন হয়ে উঠেছেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের এক সত্যিকারের রাজা, তবুও রাজ্য হারানোর ব্যথা তার কণ্ঠে। তবে দেশের ক্রিকেটের সুদিন ফেরাতে যেন পণ তার; তা নিশ্চয় বিফলে যাবে না। ঠিকই একদিন সুদিন ফিরবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের। একের পর এক পরাজয়েও যে ভেঙে পড়ে না; শক্তিশালী করে গড়ে নিজেকে। সাফল্য তো তারই প্রাপ্য।