বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কই? উত্তর মিলল, লিখে দেন হারিয়ে গেছে!

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কই?  উত্তর মিলল, লিখে দেন হারিয়ে গেছে!

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল হয়েছে ১৯ নভেম্বর। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে অবশ্য তারও বেশ আগে, ১২ নভেম্বর; সেদিন ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। বিশ্বকাপে ১০ দলের মধ্যে বাংলাদেশ হয়েছে অষ্টম। জিতেছে মাত্র দুটি ম্যাচ। বাকিগুলোতে বড় হার, একতরফা ভঙ্গিতে। কোনো প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নেই কার্যত। 

কেন এবং কি কারণে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিশ্বকাপ শেষে বেশ হল্লা করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। তাদের কাজ হলো এই ব্যর্থতার বিশদ কারণ খুঁজে বের করা। 

সেই লক্ষ্যে বিসিবি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলো। তিনজনই বিসিবির পরিচালক। নামগুলো শুনি, এনায়েত হোসেন সিরাজ, মাহবুব আনাম ও আকরাম খান। বিসিবির তথ্য বিবরণীর ফাইল জানাচ্ছে এই তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিল গত বছরের ২৭ নভেম্বর। 

এর মধ্যে নতুন বছর চলে এলো। আজ নতুন বছরের ১৬ জানুয়ারি। পেছনের এই ৫০ দিনে তদন্ত কমিটির কাজের কি হলো? রিপোর্টই বা কবে? 

ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে থাকা তদন্ত কমিটির কাছে এই প্রশ্নের খোঁজ নিলে উত্তর মিলল, আমরা এখনো সবার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। মূলত ওখানেই আটকে গেছে তদন্ত কাজ।

- কার কার সঙ্গে কথা বলা এখনো বাকি? 

উত্তর মিলল, দুজনের সঙ্গে। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। 

সাকিব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। সেই ব্যস্ততার মধ্যে তিনি সময় বের করতে পারেননি। যদিও সেই সময় তিনি দুবাইয়ে টি-টেন টুর্নামেন্টের জন্য বিজ্ঞাপনেও অংশ নিয়েছিলেন ঠিকই। প্রশ্ন হলো সাকিব সময় বের করতে পারেননি নাকি তদন্ত কমিটি তার কাছে কথা বলার জন্য প্রস্তাবই দিতে পারেনি। 

যাই হোক, নির্বাচন শেষ হয়েছে। সাকিব সংসদ সদস্য পদে শপথ নিয়েছেন। মাঠেও ফিরেছেন। অনুশীলনে অংশ নিয়েছেন। বিপিএল নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথাও বলেছেন। সবই হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটি সাকিবের সঙ্গে কথাই বলতে পারেনি!

ব্যর্থতা কার? নিশ্চয়ই সাকিবের না!

সাকিব না হয় নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তামিম ইকবাল তো ফ্রি ছিলেন। দেশেও ছিলেন। রাজধানীতেই রয়েছেন। মাঠেও ফিরেছেন। ব্যাটিং অনুশীলনে ব্যস্ত সময় কাটছে তার। বিপিএলে এবার ফরচুন বরিশালের অধিনায়কত্ব করছেন তামিম ইকবাল। সবকিছুতে আছেন তিনি। কিন্তু তাকেও সাক্ষাতের জন্য তদন্ত কমিটি ডাকতে পারছে না। 

এই দু’জনকে ডাকার দায়িত্ব ছিলো বিশ্বকাপ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েতুর রহমান সিরাজের ওপর। কেন এই দুজনের সঙ্গে কথা বলতে এতো বিলম্ব হচ্ছে। সেই প্রশ্নের খোঁজে এনায়েতুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কমিটির অন্য এক সদস্যের কাছে এই বিষয়ে খোঁজ নিলে তিনি জানান, উনাকে তো ফোনে আমরাও পাাচ্ছি না। কি বলবো ভাই, লিখে দেন রিপোর্ট হারিয়ে গেছে!

-তাহলে বিশ্বকাপের ব্যর্থতার রিপোর্ট কবে পাওয়া যাবে? 

সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। তবে বিসিবি সব বিষয়ে যেমন পরের বছরের জন্য উদাহরন তুলে রাখে এই রিপোর্টও তেমনই পরের বিশ্বকাপের পর প্রকাশের চিন্তা করছে কিনা, কে জানে!

বাস্তবতা হলো, এই ব্যর্থতার দায়িত্ব যে তিন সদস্যবিশিষ্ঠ কমিটিকে দেওয়া হয়েছিল তারা প্রথম চার-পাঁচদিন বেশ সক্রিয় ছিল। তারপর যতোই সময় গেছে। কমিটির কার্যক্রমও টিলে হয়ে গেছে। ফাইলওয়ার্ক জানাচ্ছে এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি সর্বশেষ বৈঠকে বসেছিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এখন চলছে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ।

কি বুঝলেন? তদন্ত কমিটির কার্যাবলীরই তদন্ত প্রয়োজন এখন!

সম্পর্কিত খবর