তামিম বনাম সাকিবের ম্যাচে নায়ক খালেদ
সাকিব বনাম তামিমের ম্যাচে দুজনের লড়াইটাই যে হলো না! তবে ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে দুজনেই ম্যাচে চলনসই। তামিম করলেন ২৪ বলে ৫ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৩৫ রান। আর সাকিব নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেট পেলেন। ম্যাচ পারফরম্যান্স ৪ ওভারে ১৬ রানে ২ উইকেট। তবে দিনশেষে চওড়া হাসি যে তামিমের ঠোঁটে, ম্যাচ জিতেছে যে তার দলই। বরিশালের ১৩৪ রানের সামান্য স্কোর বরিশাল টপকে গেল ৫ উইকেট হাতে রেখে।
১৫ রানে ৩ উইকেট। পাওয়ার প্লে শেষের আগেই ৩১ রানে ৪ উইকেট নেই। ১৫ ওভারেও দলের একশ হলো না। ২০ ওভার শেষে রংপুরের ইনিংস থামলো ১৩৪ রানের মামুলি সঞ্চয়ে। পুরো ইনিংসে বাউন্ডারি মাত্র ৭টি। ছক্কা পাঁচ। ডটবল ৫৩। আচ্ছা উইকেট কি ব্যাট করার জন্য খুবই কঠিন কিছু ছিল?
উত্তর হলো, না। সমস্যা মিরপুরের উইকেটে না, রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিংয়ে! দায়ী তাদের রংহীন ব্যাটিং! আর এই যুক্তির পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণ ফরচুন বরিশালের জবাবি ইনিংস। রংপুরের ১৩৪ রানের সংগ্রহ বরিশাল যে সহজ ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে টপকে গেলো তাতেই পরিস্কার এই ম্যাচে রাইডার্সদের সমস্যার ক্ষেত্র ছিল ব্যাটিং, ভঙ্গুর ব্যাটিং!
অবশ্য রংপুরকে সামান্য রানে আটকে রাখা এবং ৫ উইকেটের জয়ের কৃতিত্ব বরিশালের বোলারদেরকেও দিতেই হচ্ছে। বরিশালের পেস এবং স্পিনারদের যুগপৎ আক্রমণে কোনো সময় ব্যাটিংয়ে স্বাছন্দ্য খুঁজে পায়নি রংপুর।
লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ নিয়েও পুরো ইনিংস জুড়ে দলের দুজন মাত্র ব্যাটসম্যানের মতো খেলতে পারলেন। শামীম পাটোয়ারি ও নুরুল হাসান সোহান। ৩১ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর এই দুজনেই পঞ্চম উইকেটে ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন। তাও মাত্র বেশিকিছু নয়, ৩৪ রানের। শেষের দিকে মাহেদি হাসান ব্যাটসম্যানশিপের কৃতিত্ব দেখালে রংপুরের রান তিন অংকের কোটা ছড়ায়। সোহান ২৩ বলে ২৩ রানে করে যে বলে আউট যে কায়দায় আউট হলেন সেটা দেখে নিজেকেই মারতে চাইবেন তিনি! নিশ্চিত ওয়াইড হতে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে ক্যাচ দিয়ে এলেন। শামীম পাটোয়ারি তার প্রিয় শট সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড ৩৩ বলে ৩৪ রান তুলে। আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা মাহেদি হাসান ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ১৯ বলে ২৯ রান করেন।
বরিশালকে বোলিংয়ে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন দুই পেসার মোহাম্মদ ইমরান ও খালেদ আহমেদ। ম্যাচের প্রথম বলেই ইমরান পিনপয়েন্ট ইয়র্কারে বোল্ড করেন ব্রেন্ডন কিংকে। খানিকবাদে খালেদ আহমেদও তার প্রথম ওভারে রনি তালুকদার ও সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে দিয়ে বরিশালকে আনন্দযাত্রার পথ দেখান। ২ ওভারের প্রথম স্পেলে ১৫ রানে ২ উইকেট শিকার তার। শেষের দিকে এসে আরো দুই উইকেট। ম্যাচে ৩১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে খালেদ জানিয়ে দিলেন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসার পথ পরিস্কার করতে এই বিপিএলই টার্গেট তার।
রান তাড়ায় নামা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল প্রথম ওভারেই তিন বাউন্ডারিতে ইনিংস শুরু করেন। বোলার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তামিমের মোকাবেলা কখন হচ্ছে সেই অপেক্ষায় ছিল গ্যালারি, প্রেসবক্স সবাই। এই ম্যাচের নামই যে দেওয়া হয়েছিল সাকিব বনাম তামিমের ম্যাচ!
তবে সেই দ্বৈরথ হলো কই! সাকিবের করা ৭ বলে তামিমের সংগ্রহ ৫ রান। অবশ্য রংপুরের বাকি বোলাদের বিরুদ্ধে ঠিকই দাপুটে তামিম। ২৪ বলে ৩৫ রানে শেষ হলো তার বড় রানের স্বপ্ন দেখানো ইনিংস। মোহাম্মদ নবিকে সামনে বেড়ে ছক্কা হাঁকানোর দৃশ্যটা পরের বলেই আবার করতে গিয়ে স্ট্যাম্পড আউট হয়ে ফিরলেন। মেহেদি মিরাজ ও সৌম্য সরকার বাঁহাতি হাসান মুরাদের স্পিন সামাল দিতে পারেননি। ৯৪ রানে ৪ উইকেট হারানো ফরচুন বরিশালকে বাকি সময়ে আর বিপদে পড়তে হয়নি। মুশফিকুর রহিম, শোয়েব মালিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে চড়ে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে ম্যাচ শেষ করলো বরিশাল।
তামিম বনাম সাকিবের রং নেওয়া ম্যাচে বোলার খালেদ আহমেদ ৩১ রানে ৪ উইকেট শিকার করে নায়কের চেয়ারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ১৩৪/৯ (২০ ওভারে, শামীম পাটোয়ারি ৩৪, নুরুল হাসান ২৩, মাহেদি ২৯, খালেদ আহমেদ ৪/৩১, মিরাজ ২/১৩)।
ফরচুন বরিশাল: ১৩৮/৫ (১৯.১ ওভারে, তামিম ৩৫, মিরাজ ২০, মুশফিক ২৬, শোয়েব মালিক ১৭*, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১৯*, সাকিব ২/১৬, হাসান মুরাদ ২/১৭)। ফল: ফরচুন বরিশাল ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: খালেদ আহমেদ।