বাবর আজম দেখালেন কিভাবে ম্যাচ জেতাতে হয়
শুরুর সবকিছুই হলো রংপুরের পছন্দমতো। টস, বোলিং, ফিল্ডিং-একেবারে পুরোপুরি রঙিন! সেই ছন্দেই আটকে গেল প্রতিপক্ষ সিলেট স্ট্রাইকার্স মাত্র ১২০ রানে। ১২০ বলে ১২১ রান তাড়া করতে নেমে রংপুরের শুরুর ব্যাটিংটা অবশ্য পছন্দসই কিছু হলো না। জবাবি ইনিংসে রংপুরে ব্যাটিং রং আরো শ্রীহীন, ৩৯ রানে নেই ৬ উইকেট! শ্রীলঙ্কান স্পিনার দুশান হেমন্ত এক ওভারে তিন উইকেট নিয়ে রংপুরের ব্যাটিংয়ে কাঁপন ধরান। লো-স্কোরের ম্যাচে রংপুরের শুরুর ব্যাটিং ধসে পড়ে। কিন্তু দলের দুই বিদেশি বাবর আজম ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটে সব শঙ্কা কাটিয়ে উঠে রংপুর ম্যাচ জিতে নেয় ৪ উইকেটে।
সিলেটের দুই বিদেশি বেনি হাওয়েল ও বেন কাটিং তাদের দলকে বাজে ব্যাটিং থেকে উদ্ধার করেছিলেন। রান তাড়ায় রংপুরের দুই বিদেশি বাবর আজম ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই একই কৃতিত্ব দেখিয়ে দলকে জয় এনে দিলেন। বাবর আজম আগের রাতে ঢাকায় এসে পরদিন দুপুরেই ম্যাচে নামেন। এবং দলকে জেতালেন। ৪৯ বলে তার হার না মানা ৫৬ রানের ইনিংসটা চলতি বিপিএলে রংপুরকে প্রথম জয় এনে দিল। আর টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় হার দেখলো মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্স।
বাবর আজম ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ষষ্ঠ উইকেটে অপরাজিত ৮৬ রানের জুটি জানান দিল বিপদে পড়া দলকে কিভাবে উদ্ধার করতে হয়। কিভাবে ম্যাচ জেতাতে হয়। ব্যাটিং ওপেন করতে নেমে এক প্রান্তে দলের বাকিদের আসা-যাওয়া করতে দেখে বাবর আজম বুঝে নেন জিততে হলে তাকেই এই ম্যাচের ফিনিসারের দায়িত্ব নিতে হবে। সেই দায়িত্বই পালন করলেন তিনি দক্ষতার সঙ্গে। সঙ্গী হিসেবে আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা আফগান অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন। ওমরজাইয়ের ৩ ছক্কা ২ বাউন্ডারিতে ৩৫ বলে অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংস রংপুরকে ম্যাচ জয়ের আনন্দ এনে দিল।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটের শুরুটা হয় ভয়াবহ। শুরুর পাঁচ উইকেটের মধ্যে চারজনই সিঙ্গেল ডিজিটে ফিরে গেলেন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার মোহাম্মদ মিঠুন স্ট্যাম্পড আউট হওয়ার পর মাঠে এলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান হিসেবে এর আগেও বিপিএল কাঁপিয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু সেটা ছিল তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণালি সময়। এখন চলছে গ্রহণকাল! সিলেটের ব্যাটিংয়েও সেই গ্রহণকালের ছায়া পড়লো যেন। পাওয়ার প্লেতে ৩৫ রানে নেই ৩ উইকেট।
খানিকবাদে অবস্থা আরো সঙ্গিন। ৩৯ রানে হাওয়া শুরুর ৫ উইকেট। ইনিংসের বোলিং কোটা তখনো অর্ধেক পার হয়নি। আর দলের অর্ধেক ব্যাটিং লাইনআপ ডাগআউটে ফিরে এসেছেন। সেই তালিকায় ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামা মাশরাফিও আছেন। ৭ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৬ রান করে রানআউট হন সিলেট অধিনায়ক।
৩৯ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের স্কোর তারপরও যে ১২০ রানে পৌছালো তার পুরো কৃতিত্ব দুই বিদেশির। বেনি হাওয়েল ও বেন কাটিং ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৬৮ রান জুড়ে দলের স্কোরকে তিন অঙ্কের ঘরে নিয়ে যান। হাওয়েল ৩৬ বলে করেন ৪৩ রান। কাটিং খেলেন ৩১ বলে ৩১ রানের কার্যকর ইনিংস। এই জুটি ভাঙ্গার পর শেষের দুই ওভারে তেমন রানই তুলতে পারেনি সিলেট। রিপন মন্ডলের করা শেষ ওভারটা ছিল দুর্দান্ত। সেই ওভারে খরচ হয় মাত্র দুই রান। তারমধ্যে এক রান আসে আবার ওয়াইড থেকে। উইকেট পড়ে দুটো। শুরুর মতো শেষের ব্যাটিংয়েও ম্লান সিলেট থেমে যায় ১২০ রানে।
স্পিন এবং পেসের যৌথ আক্রমণে রংপুর কখনোই সিলেটের ব্যাটসম্যানদের চড়াও হওয়ার সুযোগ দেয়নি। লো স্কোরের ম্যাচে সিলেটের বোলিং লাইনআপও দলকে তেমনই একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাট হাতে বাবর আজম ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই যে অন্য হিসেব কষলেন- ম্যাচ জয়ের অঙ্ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স ১২০/৮ (২০ ওভারে, হাওয়েল ৪৩, কাটিং ৩১, মাহেদি ২/১৮, রিপন মণ্ডল ২/১৯)।
রংপুর রাইডার্স ১২৫/৬ (১৮.২ ওভারে, বাবর আজম ৫৬*, ওমরজাই ৪৭*, হেমন্ত ৩/২০)।
ফল: রংপুর ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: বাবর আজম।