মন্ত্রী পাপন দেবেন, আবার হিসাবও নেবেন

মন্ত্রী পাপন দেবেন, আবার হিসাবও নেবেন

নতুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেয়ার দশ দিনের মধ্যেই ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসেছেন। আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে নয়টি ফেডারেশন ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থা আমন্ত্রিত ছিল এই বৈঠকে। টেবিল টেনিস ও ভলিবল ছাড়া বাকি আটটি ফেডারেশন তাদের সংকট, সম্ভাবনা ও বর্তমান পরিস্থিতি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছে। 

পাপন প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সময় নিয়ে ফেডারেশনগুলোর বিভিন্ন বিষয় মনোযোগ দিয়ে শোনেন। আলোচনা শেষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ফেডারেশনগুলোর যে চাহিদা সেটা পূরণ করা সম্ভব।’ 

ক্রিকেট বাদে বাংলাদেশের প্রায় সকল খেলাই অবকাঠামো অথবা আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। আজ সাতটি ফেডারেশন ও একটি সংস্থা সেগুলোই উপস্থাপন করেছে। এরপরও নতুন মন্ত্রী আশার বানী শুনিয়েছেন, ‘আর্থিক যে সাহায্য প্রয়োজন মনে করেছিলাম এর তুলনায় অনেক কমই তারা বলেছে। সেটা পূরণ করা সম্ভব। দু’টি ফেডারেশন (শুটিং ও আর্চারি) কমপ্লেক্সের কথা বলেছে। সেগুলোও আলোচনাধীন। বিসিবি শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম করছে। সেখানে কয়েকটি ফেডারেশন যাবে।’

বাস্কেটবলের কোর্ট নেই কয়েক বছর। ফেডারেশনের নিজস্ব অফিসও নেই। এই বিষয়টি পাপন বিশেষভাবে বলেন, ‘বাস্কেটবলের একটা সমস্যা ছিল। সেটা সমাধানের পথে। আবাহনী কমপ্লেক্সে তাদের কোর্ট থাকবে। সেটা তাদেরই থাকবে। ফেডারেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করেই ক্লাব ব্যবহার করবে।’

ক্রিকেট বোর্ড জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেয় না। এছাড়া বাকি সব ফেডারেশনই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুদানের মুখাপেক্ষী। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বাজেট হয় সরকারি জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে। ক্রীড়াঙ্গনে এক দশকের বেশি সময় কাটানো নাজমুল হাসান  পাপনের সেটিও জানা, ‘আমি আসলে আর্থিক বিষয়টি কম বলছি ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনা করে। তাই বলে একেবারে কমও নয়। বর্তমান বাজেটে হয়তো এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আগামী বাজেটে অবশ্যই এগুলো সংস্থান করার চেষ্টা করব।’ 

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেট ১৩০০ কোটি টাকার মতো। সরকারি নিয়মে একটি মন্ত্রণালয়ের বাজেট একটি নির্দিষ্ট শতাংশের উপর বৃদ্ধি করা যায় না। এই বিষয়টি স্মরণ করে নতুন মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারী বাজেটের মাধ্যমে সব কিছু সংস্থান না হলে বাইরের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সেগুলো পূরণ করব। তাদের যে চাহিদাগুলো সেগুলো পূরণ হওয়ার মতো।’

সহায়তা প্রদান করেই নতুন মন্ত্রী ক্ষান্ত হবেন না। এর সঠিক নজরদারিও করবেন। তাই ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে প্রথম সভার পরই জোর দিয়ে বলেছেন, ‘অবশ্যই কড়ায়-গণ্ডায় হিসাবও নিব। যাদের সহযোগিতা করা হবে তাদের মনিটরিংয়ের আওতায় রাখা হবে। ’

আজ অ্যাথলেটিক্স, সাতার, ক্যারম, বাস্কেটবল, ভারত্তোলন, শুটিং, আর্চারি ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর সঙ্গে মত বিনিময় করেছে। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ নতুন মন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম বৈঠক শেষে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা সাঁতারের সমস্যাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেছি। মন্ত্রী মহোদয় বেশ গুরুত্ব সহকারেই নিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি আমাদের সঙ্গে আবার বসবেন। আশা করি সাতারে পরিবর্তন আসবে।’

ভারত্তোলন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ক্রীড়াঙ্গনের প্রবীণ সংগঠক। তিনি মনে করেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক বড় আকারের। ক্রীড়াঙ্গনে অর্থ কোনো সমস্যা নয়, প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা। নতুন মন্ত্রীর কথায় আমরা আশাবাদী।’ 

আজকের মত বিনিময়ে অবশ্য কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, ‘এখন মাত্র আমি সব ফেডারেশন সম্পর্কে জানছি। কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আবার সামনে অনেকের সঙ্গেই আলাদাভাবে বসব ’বলেন পাপন।

আগামীকাল দেশের অন্যতম শীর্ষ ফেডারেশন ফুটবল ও হকির সঙ্গে মত বিনিময় রয়েছে নতুন ক্রীড়া মন্ত্রীর। আজকের সভা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অনুষ্ঠিত হলেও কালকের সভা হবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে। আজকের সভায় ফেডারেশনগুলোর সাধারণ সম্পাদক/সভাপতি, টেকনিক্যাল ব্যক্তিত্ব ও বাজেট কর্মকর্তা একজন করে উপস্থিত ছিলেন। 

সম্পর্কিত খবর