বিপিএল বিসিবির বোঝা নয়, চ্যালেঞ্জ
অনেকে বলাবলি করেন যে বিপিএল ক্রিকেট বোর্ডের জন্য বোঝা। কিন্তু আমরা এটাকে কখনো এভাবে দেখতে চাইনা। তবে এটা সত্যি যে বিপিএল অর্গানাইজ করা প্রতিবছর অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ থাকে ক্রিকেট বোর্ডের জন্য। বৈশ্বিক এ অবস্থায়, করোনার পর, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক সংকট এগুলোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে, বিশেষ করে এবার নির্বাচনের পরপর এ ধরণের একটা আয়োজন করা এটা সত্যি অনেক চ্যালেঞ্জের ছিল। তবে সবকিছুর পরেও ক্রিকেট বোর্ড ফাইনালি বিপিএল ম্যানেজ করেছে। এ চ্যালেঞ্জটা সবসময়েই থাকে এবং সেটা মাথায় নিয়েই বিসিবি কাজ করে। সামনেও তাই করবে। তবে এই বৈশ্বিক অর্থমন্দার সময়ে এটা একটু বেশি কষ্টকর।
আমাদের আর্থিক অবস্থা যদি আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে অবশ্যই তাদের জন্য এটা আয়োজন করাটা বেশি ফ্লেক্সিবল। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিতে বাংলাদেশ আর আমেরিকার অবস্থান তো এক জায়গায় নয়। আর আমাদের যে মার্কেট , ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো আসলে নির্ভর করতে হয় স্পন্সরশিপের ওপর সবচেয়ে বেশি এবং সেই সঙ্গে টিভি রাইটস। বড় যে কোম্পানিগুলো আছে, যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলো কিনেছে তাদের আগ্রহ যদি ঠিকভাবে থাকতো, আমাদের ইকোনমি যদি আরও ভালো থাকত, যদি আগের মতো সহযোগিতা আমরা পেতাম তাহলে এতখানি কষ্ট হয়ত করা লাগত না। এটা চিরন্তন সত্য যে আমরা সবাই যে যার জায়গা থেকে এই সমস্যাটা ফেস করছি। আমার মনে হয় এটা সাময়িক, আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। বিপিএলের সমস্যা সংকট আগের মতোই আবার কেটে যাবে।
বিপিএল থেকে লভ্যাংশ শেয়ারের দাবি করেছে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। এক দল বলেছে এবারের বিপিএল মডেলে লাভ করা সম্ভব নয়। আমরা বিসিবির ব্যাখাও শুনেছি। বিসিবি সিইও এবং বিপিএল গর্ভনিং বডি স্পষ্ঠ জানিয়েছে দিচ্ছে যে এই মডেলে লভ্যাংশের ভাগ দেওয়াও সম্ভব নয়। তাহলে প্রশ্ন উঠছে শুধুমাত্র ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগ দেখিয়েই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো টিকে থাকবে?
দেখুন সেটাও আমরা চাইনা আশাও করিনা যে অনুরাগ দেখিয়ে সবাই থাকবে। কারণ আপনার পকেটে পয়সা যতক্ষণ থাকবে, অনুরাগ দেখাতে দেখাতে যদি তা শেষ হয়ে যায় তাহলে আপনাকে সেখান থেকে সরে যেতেই হবে। অনেকগুলো কোম্পানি সরে গিয়েছেও। এটাই বাস্তব। এখন বিপিএল টা সে অবস্থানে আছে, যতগুলা পথ আমাদের হাতে খোলা আছে এগুলাই বেস্ট ওয়ে। আমরা শুনি যে বিপিএল নাকি আগের মতো নেই, অনেক নিচে নেমে গিয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু আগেও অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। বাইরে জমকালো দেখা গেলেও ভেতরের অবস্থা খারাপ ছিল। অনেক প্লেয়ার টাকা পায়নি। এই জায়গা গুলো ক্রিকেট বোর্ড কিন্তু এনশিওর করেছে এখন। আগের মত সেই কমপ্লেইন কিন্তু নাই যে কোনো প্লেয়ার টাকা পাচ্ছে না বা তাদের পেমেন্ট আটকে আছে। আর রেভেনিউ শেয়ারের যে কথাটা, যেই মডেলটা, সেটা ডিফরেন্ট মডেল। ওই মডেলে টিমের জন্য কিন্তু তাদের খরচও কিন্তু আবার বেড়ে যায়। তখনও এই ঝামেলাটা থাকবে। বোর্ড গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে যেই মডেলটা বেশি সুবিধার মনে হয়েছে সেটাই এবার করেছে। আগামী বছর বদল করলেও সেটা আসলে কোনদিকে যাবে সেই বিষয়েও ভাবার ব্যাপার আছে। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি ফ্র্যাঞ্চাইজিরাই বিপিএলের স্টেকহোল্ডার ।
এবারের ঢাকা পর্বে আমরা দেখেছি প্রচুর দর্শক। অনেকে যদিও বলছেন যে ছুটির দিন বলে বেশি দর্শক। তবে আপনি খেয়াল করলে দেখবেন কর্মদিবসেও আমাদের স্টেডিয়াম পূর্ণ ছিল। দর্শক উপস্থিতি সবসময়েই বিপিএলের উন্মাদনা বাড়িয়ে দেয়। আমাদের সবচেয়ে শক্তির জায়গাটা দর্শকরাই। টিকেটের কালোবাজারির যে ব্যাপারটা, সেটা আসলে আমাদের হাতে নেই। এটাকে কন্ট্রোল করাটার কোনো উপায় আমাদের কাছে নেই এটা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেখে। আমাদের থেকে টিকেট নিয়ে কেউ যদি কালোবাজারি করে তাদেরকে ধরার মতো জনবল বা ক্ষমতা আমাদের নাই। এটা আমাদের পার্টও না। আমরা যেটি করছি, দর্শকদের জন্য অনলাইনে টিকেটের ব্যবস্থা করেছি, কাউন্টারে থেকে কিনতে পারছে। কালোবাজারি ঠেকানোর আমাদের তরফ থেকে নেওয়া পদক্ষেপের একটা হলো একজনের কাছে একটা করে টিকেট বিক্রি করা। ধরেন আপনি ৪টা টিকেট কিনছেন, আমি তো বলতে পারছি না যে আপনি সেগুলো নিয়ে কাউকে কোনোভাবে দিচ্ছেন কিনা। তাই যারা আসলেই মাঠে আসতে চাচ্ছে তাদের জন্য এনশিওর করা যে তোমার টিকেট তুমিই নাও, নিয়ে মাঠে এসে খেলা দেখ।
বিপিএলকে যদি সাস্টেইনেবল একটা প্ল্যাটফর্মের মধ্যে রাখতে হয়, তাহলে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিরা, তাদের অবশ্যই সমন্বয় করে এক জায়গায় এসে কাজগুলো করতে হবে। তাই সেখানে অবশ্যই এসমস্ত কিছু আলোচনা করেই বিপিএলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তানভীর আহমেদ টিটু|বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান