বরিশালের ফিল্ডিংয়ে ‘পিচ্ছিল হাত’, চট্টগ্রামের তৃতীয় জয়

বরিশালের ফিল্ডিংয়ে ‘পিচ্ছিল হাত’, চট্টগ্রামের তৃতীয় জয়

শুরুটা হয়েছিল বেশ। কিন্তু মাঝে এসে ধাক্কা খায় ফরচুন বরিশাল। আর শেষে রানের চেয়ে বলের ব্যবধান অনেক বেশি হয়ে দাড়ায়। সেই ব্যবধান আর পুরোদুস্তর কমাতে পারেনি তারা। সিলেট স্টেডিয়ামে ১৯৩ রানের যে বড় স্কোর গড়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, সেই রানের চ্যালেঞ্জ টপকাতে পারেনি ফরচুন বরিশাল। থেমে যায় তারা ১৮৩ রানে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ম্যাচ জিতে ১০ রানে। চলতি বিপিএলে এটি চট্টগ্রামের চার ম্যাচে তৃতীয় জয়। আর সমান সংখ্যাক ম্যাচে বরিশাল জিতেছে মাত্র এক ম্যাচে। শেষ তিন ম্যাচে হার দেখলো অধিনায়ক তামিম ইকবালের বরিশাল। ব্যাট হাতে ৯ বলে অপরাজিত ২৯ রানের ঝড় তোলা চট্টগ্রামের কার্টিস ক্যাম্পার বোলিংয়ে চমক দেখান। ৩ ওভারে ২০ রান শিকার করেন ৪ উইকেট। দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়ে এই আইরিশ ম্যাচ সেরা হন।
ম্যাচ জিততে চাই ১৯৪ রান। বিশাল স্কোর তাড়া করতে নামা বরিশালের শুরুটা হলো দুর্দান্ত। পাঁচ ওভারের মধ্যে স্কোরবোর্ডে জমা হলো ৫০ রান। ওপেনার আহমেদ শেহজাদ ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ মিসের দুঃখ ভুলিয়ে দিচ্ছিলেন ব্যাট হাতে ঝড় তুলে। শুরুর ৫৫ রানের মধ্যে তার রানই ছিল ৩৯। তাও আবার মাত্র ১৭ বলে। তামিম ইকবাল ৩০ বলে ৩৩ রান করে যখন ফিরলেন তখনো রান তাড়ায় বেশ ভালো অবস্থানে ছিল বরিশাল। কিন্তু ৯১ রানে ১ উইকেট থেকে হঠাৎ তাদের পিছুহটা শুরু হলো। প্রায় চোখের পলকেই ১০১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে তারা! সেই ধাক্কা আর সামনে উঠতে পারেনি বরিশালের ব্যাটিং। সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মেহেদি হাসান মিরাজ কিছুটা জ¦লে উঠলে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা জাগায় বরিশাল। কিন্তু ফিনিসিংটা দিতে পারেননি মেহেদি বা মুশফিকের কেউ।
শেষ ৩০ বলে ম্যাচ জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন দাড়ায় ৭০ রান। চেষ্টা চালিয়েছিল তারা। কিন্তু শেষের সমাধানে পৌছাতে পারেনি।
চট্টগ্রামের ইনিংসের শুরুতেই বরিশালের ঝড়; বোলিং ঝড়! তাইজুল ইসলামের ঘুর্ণিতে চট্টগ্রাম ২১ রানে ২ উইকেটের দল। কিন্তু ব্যাস ওটুকুই। ইনিংসের বাকি সময় চট্টগ্রাম তাদের ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলে গেল, আর ফরচুন বরিশাল ঝড় থেকে কেবল পালিয়ে বাঁচলো। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ব্যাটিং ঝড় যখন থামলো স্কোরবোর্ডে ততক্ষনে রান উঠে গেছে ১৯৩! তাও আবার মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে। চলতি টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত এক ম্যাচে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। বরিশালের এই রেকর্ড গড়া রানের মুল কৃতিত্ব ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দোর। ৫০ বলে ৭ ছক্কা ৫ বাউন্ডারিতে অপরাজিত ৯১ রান করেন এই শ্রীলঙ্কান। এবারের টুর্নামেন্টে এক ম্যাচে এটি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানও বটে।
শুরুতে নরম। শেষে গরম। চট্টগ্রামের ইনিংসের বর্ননায় এই শব্দযুগল দারুনভাবে মিলে যাচ্ছে। ২১ রানে ২ উইকেট হারানো দল শেষে আর মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তুললো দুশো ছুঁইছুঁই স্কোর। আবিস্কা ফার্নান্দোকে শেষের দিকে ব্যাট হাতে দারুণভাবে সহায়তা দিলেন কার্টিস ক্যাম্পার। ৯ বল খেলে ২ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারিতে কার্র্টিসের সংগ্রহ অপরাজিত ২৯। স্ট্রাইকরেট ৩২২.২২!
নিজের অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংসের জন্য আবিস্কা ফার্নান্দো অবশ্য আহমেদ শেহজাদ এবং মেহেদি হাসান মিরাজকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন। এই দুজনেই তার সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন। আবিস্কার রান যখন মাত্র ৩০ তখনই লং অফে তার নিশ্চিত ক্যাচ হাতে নিয়েও ফেলে দিলেন আহমেদ শেহজাদ। খানিকবাদে মেহেদি মিরাজও একই ঘটনা ঘঁটালেন। এই দুই ক্যাচ মিসের সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগালেন আবিস্কা। ছক্কা-চারের ঝড় তুলে চট্টগ্রামকে এনে দিলেন ম্যাচ জয়ের স্কোর।
ম্যাচ হারের জন্য ফিল্ডিংয়ে দলের পিচ্ছিল হাতকেই দায়ী করলেন বরিশাল তামিম ইকবাল। বললেন, চট্টগ্রামের যে ব্যাটসম্যান ৯১ রান করলেন ক্যাচগুলো নিতে পারলে তাতে ৪০ রানেই থামানো যেতো। এভাবে ধারাবাহিকভাবে ক্যাচ মিস করলে ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে যায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৯৩/৪ (২০ ওভারে, আবিস্কা ফার্নান্দো ৯১*, শাহাদাত হোসেন ৩১, নাজিবুল্লাহ জাদরান ১৮, কার্টিস ক্যাম্পার ২৯*, তাইজুল ২/২৬)। ফরচুন বরিশাল ১৮৩/৭ (২০ ওভারে, আহমেদ শেহজাদ ৩৯, তামিম ইকবাল ৩৩, সৌম্য ১৭, মুশফিকুর ২৩, মেহেদি হাসান ৩৫, কার্টিস ক্যাম্পার ৪/২০)। ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: কার্টিস ক্যাম্পার।

সম্পর্কিত খবর