দুই বাল্য বন্ধুর ২২ গজের নায়ক হয়ে উঠা
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট জিতিয়ে রীতিমতো নায়ক বনে গিয়েছেন শামার জোসেফ। পায়ে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়া এই তরুণ দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে নেমে একাই শিকার করেছেন ৭ উইকেট। নাটকীয়ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচ জিতিয়েছেন ৮ রানের ব্যবধানে। এমন এক পারফরম্যান্সের পর চারদিক থেকেই ভাসছেন প্রশংসায়। এই ২৪ বছর বয়সী পেসারের ক্রিকেটার হওয়ার সংগ্রামী গল্পটাও সারা ফেলেছে বেশ। সেই সংগ্রামের পথে অবদান আছে দেশটির তারকা ক্রিকেটার রোমারিও শেফার্ডেরও। যা অকপটে জানিয়েছেন শামার জোসেফ।
তবে দু’জনের মধ্যে যে ক্রিকেটের বাইরেও এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দু’জনের উঠে আসার গল্পটাও যে সেই উত্তর-পূর্ব গায়ানার একই বারাকরা এলাকা থেকে সেটাও জানিয়েছেন রোমারিও। শুনিয়েছেন তার বাল্য বন্ধু শামার জোসেফের সংগ্রামী জীবনের গল্প। তার ক্রিকেটার হয়ে উঠার পেছনের ইতিহাস।
ইতিহাস! হ্যাঁ, ইতিহাসই বটে। গায়ানার যেই গ্রাম থেকে উঠে এসে ২২ গজ রাঙাচ্ছেন তিনি। তাও লম্বা সময় জীবনযুদ্ধ করে। সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করে। তাকে ইতিহাস না বলে উপায় কি। রোমারিও বিষয়টিকে দেখছেন সেভাবেই। বলেন, ‘তার ক্রিকেটে আগমন একটা ইতিহাসই বটে। যদি আমি অথবা অন্য কেউ বলে, তাকে নিয়ে কেউ এটা ভেবেছে, তবে সেটা মিথ্যা বলা হবে। তবে আমি নিয়তিতে বিশ্বাস করি এবং আমি মনে করি এটাই তার নিয়তি। এটা অবিশ্বাস্য তবে আমি তার জন্য খুব খুশি।’
জীবন যুদ্ধে হার না মানা শামার জোসেফ যে ক্রিকেটের ২২ গজেও জয়ী হবেন। লিখবেন নতুন ইতিহাস। সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন তাকে কাছ থেকে দেখা রোমারিও, ‘সে অনেক দূর যাবে কারণ আমি জানি সে খুব কঠোর পরিশ্রম করে। তার হৃদয় অনেক বড়। ফেটে যাওয়া পায়ের আঙুল নিয়ে ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় দৌড়ানো এবং বল করা; কে তার ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে বলুন? তাই আকাশ তার জন্য সীমাবদ্ধ। তাকে আমার পরামর্শ হল কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাও। সে সবসময়ের মতো অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা চালিয়ে যাক; নিয়মানুবর্তিতা থাকুন এবং সর্বদা খেলাকে সম্মান করুন। সবসময় মজা করতে থাকুক।’
দু’জনে বাল্য বন্ধু হলেও রোমারিও ক্রিকেটের পথ চলাটা শুরু হয়েছে জোসেফের বহু আগে। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত ২৮টি ওয়ানডে ও ৩২টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই ২৯ বছর বয়সী পেসার। তবে দু’জনের উঠে আসার গল্পটা যে এক সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রোমারিও।
বলেন, ‘আমি শামারকে ছোটবেলা থেকেই ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আমরা একই এলাকা থেকে এসেছি; আমরা সেখানে একই স্কুলে নার্সারি এবং প্রাইমারিতে পড়তাম। প্রাইমারি স্কুলের পরে আমাকে এলাকা ছেড়ে যেতে হয়েছিল। তবে তার সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হতো। আমরা আমাদের উঠোনে ক্রিকেট খেলতাম, সে ছিল আমার পাশের বাড়ির প্রতিবেশী। যখন আমি তাকে বোলিং করতে দেখলাম, লক্ষ্য করতাম সে দ্রুত বল করছে। অবশ্য ততক্ষণে আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে গেছে। তাই আমি তাকে প্রশিক্ষণে নিয়ে গিয়েছিলাম। সে প্রথম বলেই আমার পায়ে আঘাত করেছিল।’
রোমারিও আরও বলেন, ‘এরপর সে আমার সাথে গায়ানা প্রথম শ্রেণীর দলের সাথে প্রশিক্ষণ করতে আসতে চেয়েছিল। আমি তাকে আমাদের কোচের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সময় কোচ ছিল এসুয়ান ক্র্যান্ডন। তারপর থেকে শামারকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’
বন্ধু রোমারিও অবদান স্বীকার করতে ভুলে যাননি শামারও। বলেন, ‘রোমারিও শেফার্ড আমাকে গায়ানা দলে নামিয়ে দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছিলেন। আমাকে দেখিয়েছিলেন যে ক্রিকেট সিস্টেমটা কী। তাই একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে তিনি আমার জন্য একটি দুর্দান্ত অনুপ্রেরণা। আমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সে আমাকে সর্বদা লড়াই চালিয়ে যেতে এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন আপনি যা অর্জন করতে চান তা দেরীতে হলেও আসবে।’