সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব; বিসিবি বলল, তারা অসহায়!
তারা দুজনে শেষবারের মতো একসঙ্গে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেছিলেন গতবছরের ৫ জুলাই। ক্যালেন্ডারের পাতা জানাচ্ছে সময়টা বেশ লম্বা। এরপর এশিয়া কাপ হলো। নিউজিল্যান্ড এলো বাংলাদেশ সফরে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গেল। ফিরতি সফরে নিউজিল্যান্ডে গেল বাংলাদেশ দল। কিন্তু এই সময়টায় কখনোই তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান একসঙ্গে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেননি। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান খেলেছেন। তামিম ইকবাল ইনজুরি এবং অন্যান্য অনেক কারণ দেখিয়ে ক্রিকেট থেকে লম্বা ছুটিতে ছিলেন।
গত বছরের শেষভাগে কি যেন একটা ঘোষণা দিতেও গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। শেষ পর্যন্ত সেই ঘোষণাটা আটকে রাখেন তিনি। তবে এটা পরিস্কার যে তামিম ইকবাল আর সম্ভবত আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন না। চলতি বিপিএলেই সেই সিদ্ধান্তের ঘোঘণা আসতে পারে।
তামিম-সাকিব এখন দুজনেই অবশ্য ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত। খেলছেন চলতি বিপিএলে। সাকিব রংপুর রাইডার্সে। তামিম ইকবাল এবার ফরচুন বরিশালের জার্সিতে। এবারের বিপিএলের শুরুর পরদিনেই দুজনে মুখোমুখিও হয়েছিলেন। সেই লড়াই তামিমের দল জিতেছিল।
বিষয় সেটা না। বিষয় হলো সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্ব। দুজনে একে অন্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন না। সেটাও নতুন খবর নয়। তাদের মধ্যে আর বন্ধুত্ব নেই। ক্রিকেট মাঠে দেখা হলে স্রেফ নিয়ম রক্ষার খাতিরে একে অন্যের সঙ্গে ম্যাচ শেষে হাত মেলান। কথা বার্তা বলেন না। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক বলতে গেলে ঐ ম্যাচ শেষে হেলায়-অবহেলায় হাত মেলানোর মধ্যেই সীমিত।
মাঠের বাইরে তারা দুজনে দুজনের কাছে এখন ভীষণ অপরিচিত কেউ যেন! মাঠেও একে অন্যেকে এড়িয়ে চলেন। দুজনের মধ্যে কথা বলাবলি বন্ধের এই বিষয়টা কিন্তু আজকের নয়, বেশ পুরানো। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই তাদের কথাবার্তা বন্ধ। বন্ধুত্ব শেষ। তাদের দাবি মাঠের পারফরমেন্সকে এটা মোটেও প্রভাবিত করে না। সেই প্রমাণটাও তারা রেখেছেন ২০২১ সালে। সেই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল। আর সিরিজ নির্ধারনী সেই ম্যাচে ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিনিসারের দায়িত্ব সেরেছিলেন সাকিব ও তামিম। দুজনে ম্যাচ ও সিরিজ জেতার পর একে অন্যেকে জড়িয়ে ধরে জয়ের উল্লাসে মেতেছিলেন।
কিন্তু সেই জয়োল্লাস মাঠেই শেষ। তারা দুজনে কখনোই পুরানো বন্ধুত্বে ফিরতে পারেননি। তাদের দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের এই দ্বন্দ্ব, এই কথা না বলা, এই শত্রুতা, এই সমালোচনা সার্বিক অর্থে দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি করেছে; এই রায় দিয়েছেন বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন।
শুনি সুজন কি বলছেন এই প্রসঙ্গে।
‘‘ সাকিব-তামিমের এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে দলের ড্রেসিংরুমে। একটা গুমোট পরিবেশ তৈরি করেছে। তরুণ ও জুনিয়র খেলোয়াড়রা এই দুজনের সম্পর্কের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে ড্রেসিংরুমে মন খুলে কথা বলতে পারে না। হাসতে পারে না। মজা করতে পারে না। এসব চিন্তায় থাকলে সেটা আর আনন্দময় ড্রেসিংরুম থাকে না। আমি জানি কেন এবং কোন কারণে তাদের (সাকিব-তামিম) মধ্যে এমন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা আক্রোশের তৈরি হলো। দুজনের মধ্যে এমন সম্পর্ক বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়। এই বিষয়টা কন্টিনিউ করতে দেওয়া উচিত নয়। তারা দুজনেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিল। একজন তো এখনো অধিনায়ক। দুজনেই দলের প্রভাবী ক্রিকেটার। তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য দুজনেই রোল মডেল। তাদের সাফল্য দেখেই অনেকে ক্রিকেটে এসেছে। তাদের দুজনের ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং দ্বন্দ্বমুলক এই সম্পর্ক অবশ্যই দলের জন্য ক্ষতিকর। এমন পরিস্থিতিতে ড্রেসিংরুম কখনোই ভালো থাকতে পারে না। সিনিয়র খেলোয়াড়দের ছায়াতলে অনেকেই থাকতে চায়। দলের তরুণ খেলোয়াড়রা এখন দ্বিধায় এবং সঙ্কটে থাকে যে এ দুজনের মধ্যে কার ছায়াতলে তারা যাবে। একজনের কাছে গেলে যদি অন্যজন মাইন্ড করে! তামিম-সাকিব দুজনেই কিশোর নয়। তারা পরিণত। দুজনে যদি নিজেদের মধ্যেকার এই সমস্যা সমাধান করতে না চায় তাহলে সেটা কি অন্যে কারোর পক্ষে করা সম্ভব? বাচ্চা কেউ হলে তাদের হয়তো হাত ধরে মিলিয়ে দেওয়া যায়। বড়দের কে তো আর এমনভাবে মিলায় দেওয়া যায় না। তারা দুজনেই বাচ্চার বাবা। তারাই জানে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। তারপরও বিসিবির পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল তাদের সম্পর্ক ঠিক করার। কিন্তু তারা একমত হতে পারেনি।’’
অসহায় সুরে বিসিবি মেনে নিচ্ছে সাকিব-তামিমের সমস্যা সমাধানে তারাও ব্যর্থ।