বিপিএল থেকে মাশরাফির বিরতি, দেরিতে হলেও সিদ্ধান্তটা সঠিক
বিপিএলের দুদিনের বিরতি চলছে। ৩১ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি কোনো খেলা নেই। টুর্নামেন্টের এই বিরতির দিনেই আরেকটি বড় বিরতির খবর এলো- ‘মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা চলতি বিপিএল থেকে বিরতি নিয়েছেন।‘
মাশরাফির দল সিলেট স্ট্রাইকার্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল দুপুরে এই তথ্য জানায়।
পুরো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটা ঠিক এমন।
‘সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা চলতি দশম বিপিএল থেকে বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাতীয় সংসদে হুইপের দায়িত্ব পালনে তিনি সচেষ্ট হবেন।
রাজনীতিক ব্যস্ততার মধ্যে যদি মাশরাফি সময়সূচি বের করতে পারেন তাহলে তিনি চলতি মৌসুমে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে আরো ম্যাচ খেলার সুযোগ তার সামনে তৈরি হতে পারে।
মাশরাফির অনুপস্থিতিতে সিলেট স্ট্রাইকার্সের দায়িত্ব পালন করবেন মোহাম্মদ মিঠুন। যিনি এতদিন দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন।
চলতি বিপিএলে এখন পর্যন্ত দলের প্রতি তার কমিটমেন্টের অনন্য নজির রাখার জন্য সিলেট স্ট্রাইকার্সের ফ্র্যাঞ্চাইজি মাশরাফির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। আবার মাশরাফি খেলার সুযোগ করতে পারবেন, সেই অপেক্ষায় এবং আশায় রয়েছে তার দল।’’
মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা এবারের বিপিএলে খেলতে নেমেছিলেন পুরোদুস্তর আনফিট হয়ে। মাত্র কয়েক পা দৌড়ে বোলিং করছেন। মাঠে চলাফেরা, হাঁটাচলা, নড়াচড়া, খেলা-সবকিছুতেই পরিস্কার ম্যাচ খেলার মতো ফিটনেস তার নেই। একেবারে ন্যূনতম ফিটনেসও নেই। তারপরও তিনি খেলে যান। কোনো ম্যাচে শুধুমাত্র ব্যাটিং করলেন। বোলিংই করলেন না। শুধু দাড়িয়ে থাকলেন।
বিপিএলে মাঠে নামার আগের আট নয় মাস মাশরাফি কোনো ধরনের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমন আনফিট অবস্থায় দেশের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে খেলতে এভাবে নেমে পড়াটা কি সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত হলো?
মাশরাফির এমনভাবে মাঠে নেমে পড়া, খেলা এবং বাজে পারফরমেন্স করা-সবকিছু নিয়ে চারধার থেকে কড়া সমালোচনা হয়। টিভি ধারাভাষ্যকার হিসেবে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল সাফ জানিয়ে দেন-‘মাশরাফির এমনভাবে খেলাটা বিপিএলের মর্যাদা কমিয়ে দিচ্ছে। টুর্নামেন্টকে ছোট করছে।’
বিসিবির পরিচালক আকরাম খানও মাশরাফির এমন আনফিট হয়েও খেলার সমালোচনা করেন। ফিটনেস নেই। তারপরও খেলছেন। অধিনায়কত্ব করছেন। দলের জন্য তেমন কোনো প্রভাবও রাখতে পারছেন না এমন সময়টায় এই কায়দায় খেলে।
-প্রশ্ন উঠছে এটা কি আদর্শ কোনো উদাহরণ হচ্ছে কিনা?
এমনসব সমালোচনার জবাবে মাশরাফি সংবাদ সম্মেলনে মেনে নিলেন-‘ মানছি, এটা কোনো আদর্শ পরিস্থিতি না। তারপরও খেলতে হচ্ছে। ফ্র্যাঞ্চাইজির চাওয়া আছে। অনেককিছু দাবি দাওয়া আছে। সেই শর্ত পুরুণ করতে হয়। আমি সেই বিষয়টা এখানে বলতে চাইছি না। শরীরে বেশিকিছু সমস্যা নেই। শুধু হাঁটুতে সমস্যা আছে।’
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এই এক সমস্যা। মালিকের মন মতো সবকিছু হতে হবে। আপনি ফিট না হলেও মাঠে নামতে হবে! তাতে আনফিট শরীর আরো আনফিট হোক না কেন! সিলেট সিক্সারের ফ্র্যাঞ্চাইজি নাকি বলেছেন, মাশরাফি মাঠে থাকলেই হলো। আর কিছু না করলেও চলে!
এসব যুক্তি কি প্রতিযোগিতামুলক ক্রিকেটে টিকে? বাংলাদেশ বলেই এমনসব সম্ভব হচ্ছে। হেঁটে হেঁটে যে কায়দায় আগের ম্যাচে মাশরাফি বোলিং করেন তাতে তিনি উইকেট পেয়েছেন বটে কিন্তু পুরো পরিস্থিতি বা দৃশ্যটা ক্রিকেটের জন্য সহনীয় বা সুন্দর কিছু হচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে জোর করে কাউকে শুধুমাত্র কিছু স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য খেলানো হচ্ছে। এবং সত্যিকার অর্থেও তাই হচ্ছে।
মাশরাফির স্বীকারোক্তিতেই তো তার প্রমাণ!
এবারের বিপিএলে খেলতে নামার আগে মাশরাফি কোনো অনুশীলনই করেননি। নির্বাচন নিয়ে বিপিএলের আগে ব্যস্ত ছিলেন। খেলার জন্য ফিটনেস ছিল না তার। প্রতিযোগিতামুলক ক্রিকেটে ফিটনেস হলো পূর্বশর্ত। সেই শর্তের সবচেয়ে বড় অংশটাই ভেঙ্গে মাঠে নেমেছেন মাশরাফি। খেলছেন। আন্ডার পারফর্ম করছেন। দলও হারছে। চলতি টুর্নামেন্টে পাঁচ ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছে সিলেট। দলে প্রভাবক কোনো ভুমিকাতেই নেই মাশরাফি। বিষয় যখন মাশরাফি তখন এমন দৃশ্যটা বড় বেশি অসুন্দর দেখাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে টুর্নামেন্ট থেকে মাশরাফির সরে দাড়ানোর সিদ্ধান্তটা সম্ভবত ‘সুন্দরই’ হলো। পাঁচ ম্যাচে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে থাকা সিলেট স্ট্রাইকার্স এখন যদি নিজেদের জন্য এই টুর্নামেন্টও ‘সুন্দর’ করে!