অ্যান্ডারসনের রেকর্ডের দিনটা শেষমেশ জয়সওয়ালের
বিশাখাপত্তনম টেস্ট। প্রথম দিন শেষে ভারতের রান ৩৩৬, ৬ উইকেট খুইয়ে। দুই দলের খেলার যা ধরন, তাতে প্রথম দিনটাকে ইভেনলি ব্যালান্সডই বলা চলে।
তবে দুই দলের দৃষ্টিকোণটাকে যদি একপাশে রাখা হয়, ব্যক্তিগতভাবে দিনটা শেষমেশ কার হলো? জেমস অ্যান্ডারসনের নাম আসতে পারে। ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র বোলার হিসেবে টেস্টে টানা ২২ বছর উইকেট পাওয়ার যে ধারা তিনি গড়েছেন, তাও আবার জীবনের ৪১টি বসন্ত কাটিয়ে এসে; তা অসামান্যই বটে।
কিন্তু এরপরও শেষমেশ দিনটা তার নয়। অ্যান্ডারসনের রেকর্ড গড়ার দিনটা নিজের করে নিয়েছেন তার রীতিমতো 'হাঁটুর বয়সী' যশস্বী জয়সওয়াল। প্রথম দিনে একাই তিনি লড়েছেন রীতিমতো। আদ্যন্ত খেলেছেন দিনটার, এখনও লড়াই শেষ হয়নি, এখনই তিনি করে ফেলেছেন ১৭৯ রান। দিনটা তার নয়তো কার?
শুধু এই দুইজনের নাম উল্লেখ করলে শোয়েব বশিরদের ওপর হয়তো একটু বেশিই অবিচার করা হয়ে যাবে। আগের দিন অন্তর্জালে বেশ আলোচনা হচ্ছিল অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের বয়স আর তাদের বয়স নিয়ে। সে শোয়েব বশির আবারও আলোচনায় এলেন আজ। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বলে ভারতের ভিসা পেতে পোহালেন এত ঝামেলা, তারপর অভিষেক; হওয়ারই কথা ছিল।
তবে তিনি আলোটা কাড়লেন যে কারণে একজন ক্রিকেটারের আলোচনায় আসা উচিত, সে কারণেই, পারফর্ম্যান্স দিয়ে। ক্যারিয়ারের শুরুটা করলেন রোহিত শর্মার উইকেট দিয়ে। এরপর অবশ্য দিনের শেষে অক্ষর পাটেলের উইকেটও নিয়েছেন তিনি। সঙ্গে রেহান আহমেদ কিপটে বোলিংয়ের পাশাপাশি রজত পতিদার আর স্রীকার ভরতের উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে ঠেলে দিয়েছেন আরেকটু ব্যাকফুটে।
সঙ্গে যোগ করুন অ্যান্ডারসনকেও। দিনে একটাই উইকেট পেয়েছেন। সেটা আবার শুবমান গিলের। শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে দ্বৈরথটা বেশ ছিল অ্যান্ডারসনের, এরপর বিরাট কোহলিকে ভুগিয়েছেন, সে ঐতিহ্য মেনে এবার ভারতের 'নেক্সট বিগ থিং' কেও ভোগালেন! তাতেই গড়া হয়ে গেল রেকর্ডটা, টানা ২২ পঞ্জিকাবর্ষে উইকেট তুলে নেওয়ার রেকর্ড। আরেকটা রেকর্ড আগেই গড়ে ফেলেছেন, ভারতের মাটিতে সবচেয়ে 'বুড়ো' বয়সে খেলার রেকর্ড।
এতসবের পর দিনটা ইংল্যান্ডেরই হতো, যদি না মাঝে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে যেতেন জয়সওয়াল। প্রথম টেস্টে ৮০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। আজও সে ছন্দটা টেনে আনলেন।
দেয়াল তুলে দিলেন বললে হয়তো বুঝতে পারেন রক্ষণাত্মক ক্রিকেটের পরকাষ্ঠা হয়ে বুঝি দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু না, আক্রমণ করেও সর্বোত্তম রক্ষণটা দেখালেন। ওপাশে একের পর এক সঙ্গীর আসা যাওয়া দেখেছেন একটু পরে পরেই। সবচেয়ে বড় জুটিটা তিনি গড়েছেন শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে, কিন্তু সেটাও টিকেছে মোটে ২২ ওভারের একটু বেশি।
কিন্তু এপাশে জয়সওয়াল একাই রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন ইংলিশ বোলারদের ওপর। প্রথম থেকে ৯২তম ওভার পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ইংলিশদের সবচেয়ে বড় ভাবনার নাম হয়ে। সারা দিনে চার মেরেছেন ১৭ বার, আর ছয় এসেছে ৫টি। দিনের শেষে তার নামের পাশে তাই যোগ হলো ২৫৭ বলে ১৭৯ রান। ভারতের রানের ৫৩.২৮ শতাংশ রানের উৎস হয়ে রইলেন তিনি। দিনটাকে জয়সওয়ালের না বলে কি আর উপায় আছে?