পাকিস্তানের কাছে হেরে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ
আর একটা শটেরই তো দূরত্ব ছিল! হলো না শেষমেশ। বল হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর ব্যাট হাতেও আরেকটু হলে ম্যাচটা জিতিয়েই দিচ্ছিলেন। সেই রোহানাত দৌলা বর্ষণের ঠাই হলো শেষমেশ ট্র্যাজিক হিরোদের শিবিরে। বল হাতে তার ২৪ রানে ৪ উইকেটের পর ব্যাট হাতে ২৪ বলে ২২ রান নিয়ে অপরাজিত রইলেন তিনি। দল হারল ৫ রানে। পাকিস্তানের কাছে এই হার বাংলাদেশকে ছিটকে দিয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্স থেকে।
ম্যাচটা এমন দৃশ্য পর্যন্ত গড়াবে, সেটা প্রথম ইনিংস শেষে কে ভেবেছিল! পাকিস্তানকে যে বাংলাদেশ ১৫৫ রানেই বেধে রেখে দিয়েছিল!
উইকেটটা নতুন। জীবন্ত ঘাস আছে পিচে। তার সুবিধাটা নিতেই কি না, বোলিংয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তা সামলে পাকিস্তানের শুরুটা ভালো এনে দিয়েছিলেন ওপেনার শামিল হোসেন আর শাজেইব খান। তুলে ফেলেছিলেন ৩৭ রান।
তবে এরপরই আক্রমণে রোহানাত দৌলা বর্ষণকে আনেন অধিনায়ক মাহফুজুর। দৃশ্যটা বদলে যায় তখনই। শামিল হোসেনকে দারুণ এক ইনসুইংয়ে ফেরান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে খেই হারায় পাকিস্তান। দলীয় রান পঞ্চাশ পেরোতে ৬ রান করা আজান অওয়াইসকেও সাজঘরের পথ দেখান বর্ষণ।
এরপর পাক অধিনায়ক সাদ বেগ বিদায় নেন আরিফুল ইসলামের ডিরেক্ট থ্রোতে রান আউট হয়ে। ওপেনার শাজেইব চোখরাঙানি দিচ্ছিলেন একপাশ আগলে রেখে। তবে তাকে বিদায় করেন শেখ পারভেজ জীবন।
এর একটু পর আবারো আরেক উইকেট তুলে নেন বর্ষণ। এরপরের ওভারে আক্রমণে আসা জীবন তুলে নেন আরও একটি। পাকিস্তানের রান তখন মোটে ৮৯, তখনই ৬ উইকেট খুইয়ে বসে দলটা।
সেখান থেকে পাকিস্তানের হাল ধরেন আলী আসফান্দ আর আরাফাত মিনহাজ। গড়েন ৪৩ রানের জুটি। তবে তাদের জুটিটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই ভেঙে দেন শেখ পারভেজ জীবন। নিজের শেষ ওভারে তিনি তুলে নিয়েছেন আরও একটি উইকেট। দশ ওভার তিনি শেষ করেছেন ২৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে।
আরাফাত মিনহাজ ওপাশে সঙ্গীদের আসা যাওয়া দেখেও অবিচলই ছিলেন। খেলেছেন ৪০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। শেষ ব্যাটার হিসেবে তিনি আউট হয়েছেন অধিনায়ক মাহফুজুরের বলে স্টাম্পড হয়ে। এর আগে রোহানাত দৌলা বর্ষণ তুলে নেন নবম উইকেটটা। জীবনের মতো তিনিও ৪ উইকেট নিয়েছেন ২৪ রান দিয়ে। পাকিস্তান ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায়।
জবাবে ঝোড়ো শুরুর পর ৩৬ রানেই দুই ওপেনারকে খুইয়ে বসে বাংলাদেশ। নেপালের বিপক্ষে জয়ে ঝোড়ো ফিফটি করা জিসান আলম আজ করেন ১২ বলে ১৯। বিশ্বকাপে ফর্মহীনতার সঙ্গে লড়তে থাকা আশিকুর রহমান শিবলিও ব্যর্থ হয়েছেন আবার।
দুই ওপেনার ফেরার পর দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেননি মিডল অর্ডারের কোনো ব্যাটার। ১৪ রানে থেমে যান আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে সেঞ্চুরি এবং ফিফটি করা আরিফুল ইসলাম।
অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বিকে সাথে দলের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন শিহাব জেমস। তবে উবাইদ শাহর বলে থামতে হয় তাকে। সাজঘরের পথ ধরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে দলীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান।
শেষ চেষ্টাটা করেছিলেন বোলিংয়ে আলো ছড়ানো বর্ষণ। তার ঝোড়ো ২১ রান দলকে নয় উইকেট খোয়ানোর পরও আশায় বুক বাঁধতে বাধ্য করেছিল। দলকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন জয়ের খুব কাছে। দল যখন জয় থেকে মোটে ৬ রানের দূরত্বে, তখন শেষ ব্যাটার মারুফ মৃধা (৪) বোল্ড হয়ে গেলে সে স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যায়। বর্ষণের গায়ে লাগে ট্র্যাজিক হিরোর তকমা, বাংলাদেশ হারে ম্যাচটা, বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।