‘আইপিএল-দুঃখেই’ তাহলে টেস্ট ছাড়লেন তাসকিন?
তাসকিন আহমেদ বিসিবিকে একটি চিঠি দিয়েছেন। যে চিঠিতে তিনি লিখেছেন, তাকে যেন টেস্ট ম্যাচের জন্য আর বিবেচনা না করা হয়। তিনি শুধু সাদা বলের ক্রিকেটে খেলতে চান।
অর্থাৎ তিন ফরমেটের ক্রিকেটের সবগুলোর সঙ্গে বিসিবির সঙ্গে চুক্তিতে থাকতে তাসকিন রাজি নন। শুধু ওয়ানডে এবং টি- টোয়েন্টি খেলবেন তিনি। তার টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর চিঠি পেয়েছে বিসিবি, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। বলেছেন, ‘সে একটা চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে সে বলেছে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে সে আর খেলতে চায় না। বিপিএলের পর তার সঙ্গে বসে এই বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।’
২০১৪ সালে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাসকিন আহমেদের। ৯ বছরের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন মাত্র ১৩টি। ওয়ানডে ৭০টি এবং টি- টোয়েন্টি ৫৪টি। বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের অন্যতম ভরসা মানা হয় তাকে। কিন্তু সমস্যা হলো ফিটনেস। খেলে আসা ক্যারিয়ারের অনেক সময় কেটেছে তার মাঠের বাইরে থেকেই। ইনজুরির কারণে অনেক ম্যাচ মিস করেছেন। কখনো হাঁটুর ইনজুরি। কখনো গোড়ালির। আর এখন সমস্যায় রয়েছেন কাঁধের ইনজুরি নিয়ে।
তবে টেস্ট ক্রিকেটকে না বলে বলার কারণ কি শুধুই তাসকিনের ইনজুরি? সেটা অবশ্যই একটা কারণ। তবে এর সঙ্গে আরো অনেক কারণ জড়িত আছে। সবচেয়ে বড় কারণটা হলো আইপিএল। তাসকিন আহমেদের সামনে এখন পর্যন্ত যতবারই আইপিএলে খেলার প্রস্তাব এসেছে বিসিবি তাকে ছাড়পত্র দেয়নি। কারণ হিসেবে বিসিবির ব্যাখ্যাটা এমন তাসকিন দেশের সম্পদ। আইপিএলে খেললে তার ইনজুরির মাত্রা আরো বাড়বে। তখন দেশের হয়ে তার সেবা পাবে না বিসিবি। তাই তাসকিনকে পুরোমাত্রায় দেশের ক্রিকেটের জন্য ফিট রাখতেই বিসিবি তাকে প্রতিবারই আইপিএলে খেলার অনুমতি দেয়নি।
তাসকিন কষ্টটা বুকে চেপে নিয়েই থাকলেন। সতীর্থ মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান আইপিএল মাতিয়ে খেললেন আর টিভি পর্দায় তা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন তাসকিন। আইপিএলে সুযোগ পেয়েও সেখানে যেতে না পারায় আর্থিকভাবে তো অবশ্যই বড় একটা ক্ষতিতে পড়েন তাসকিন। কিন্তু বিষয়টা শুধু অর্থের নয়। আইপিএল বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ। বিশ্বের সব নামিদামি তারকা ক্রিকেটাররা এই লিগে খেলেন। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় পুরো লিগটা। এখানে পারফর্ম করা মানেই পুরো বিশ্বের সামনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। নিজেকে ঘোষণা করা।
অথচ এমন লিগে বারবার সুযোগ পাওয়ার পর খেলার ছাড়পত্র পাননি তাসকিন। যখনই ক্যারিয়ার নিয়ে হিসেব মেলাতে যান তিনি তখনই আইপিএল নিয়ে একটা বাড়তি দুঃখবোধ তাকে ঘিরে ধরে।
এমন নয় যে দেশের ক্রিকেটের জন্য তাসকিন সিরিয়াস নন। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলতে না পারার দুঃখে তার কষ্টের কান্নার ছবিও দেখেছি আমরা। আবার দেখেছি সেই কষ্টকে জয় করে ইনজুরিকে হারিয়ে দারুণ দক্ষতার সঙ্গে বিশ্বকাপের মঞ্চে ফিরে আসার কাহিনীর জন্মও দিয়েছেন তিনি।
বাকিরা আইপিএলে খেললে সমস্যা নেই। শুধু তাসকিন খেললেই তার ইনজুরি বাড়বে-বিসিবির এমন পুষে রাখা ধারণায় তাসকিনের আইপিএল অধ্যায় না খেলেই শেষ।
নয় বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাত্র ১৩ টেস্ট খেলে এই ফরম্যাট থেকে তাসকিনের সরে আসার সিদ্ধান্তের পেছনে কারণটা তাহলে এই আইপিএল দুঃখ!