পদ্মা সেতু দেখল বিশ্বকাপ ট্রফি
বিশ্বকাপ ট্রফির বিশ্বভ্রমণে আইসিসির চাওয়া দেশের আইকনিক জায়গায় রেখে করা হয় ফটোসেশন। তার পথ ধরেই বাংলাদেশের অন্যতম গর্বের অর্জন পদ্মা সেতুতে নেওয়া হয় বিশ্বকাপ ট্রফি। গত ৭ আগস্ট বেলা ৩টায় বিশ্বকাপ ট্রফি পদ্মা সেতুতে নেওয়ার কথা ছিল। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর বিকাল ৪টায় পদ্মা সেতুতে পৌঁছায় বিশ্বকাপ ট্রফি। পদ্মা সেতুতে বিশ্বকাপ ট্রফি পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণ ট্রফিটি নিয়ে যাওয়া হয় সড়কপথে। নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পর পৌঁছালেও ঠিকঠাকভাবেই হয় বিশ্বকাপ ট্রফির ফটোসেশন।
৬ আগস্ট রাতে দেশে পৌঁছানোর পর রাজধানী ঢাকার এক অভিজাত হোটেলে রাখা হয় বিশ্বকাপ ট্রফি। সেখান থেকে আকাশপথে পদ্মা সেতুতে পৌঁছানোর কথা ছিল। পরদিন জুড়ে থাকা মেঘলা আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে সেটি আর সম্ভব হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে সড়কপথে বিশ্বকাপ ট্রফিটি পদ্মা সেতুতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পর পদ্মা সেতুতে পৌঁছায় ট্রফিটি। ট্রফি নির্ধারিত সময়ের পর পৌঁছালেও আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংবাদকর্মীরা। পদ্মা সেতুতে পৌঁছানোর পর থেকে সংবাদকর্মীদের মধ্যে শুরু হয় তাড়াহুড়ো। সবাই ছবি ও ফুটেজ নেওয়ার কাজ শুরু করেন। তবুও অবশ্য ফটোসেশনে তৈরি হয়নি কোনো বাধা।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর এক নম্বর পিলারের পাশে বিশ্বকাপ ট্রফির ফটোসেশন করা হয়। দূর থেকে ট্রফিটি দেখে মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপ ট্রফি সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা সেতুর নিচে। বাংলাদেশিদের গর্বের পদ্মা সেতু এলাকায় বিশ্বকাপ ট্রফি নেওয়া হলেও মূল সেতুতে তোলা হয়নি বিশ্বকাপ ট্রফি। সেতুর নিচেই করা হয়েছে ফটোসেশন। মূলত সাধারণ মানুষের চলাচলের পথে যাতে কোনো বাধা তৈরি না হয়, সে জন্যই পদ্মা সেতুতে তোলা হয়নি বিশ্বকাপ ট্রফি। মাওয়া প্রান্তে বিশ্বকাপ ট্রফির আগমন উপলক্ষে উচ্ছ¡সিত ছিলেন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা। তবে সামনা সামনি বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার সুযোগ পাননি তারা।
ওই কার্যক্রমের পর পদ্মাপাড় থেকে রাজধানী ঢাকার হোটেলে ফেরত আসে বিশ্বকাপ ট্রফি। রাখা হয় একটি অভিজাত হোটেলে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঘুরে স্বপ্নের ট্রফিটি পা রাখে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। মেঘলা দিনেও বিশ্বকাপ ট্রফির সোনালি দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছিল শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সকাল সকাল বিশ্বকাপ ট্রফিটি মিরপুরের মূল মাঠে প্রবেশ করে তারকা উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের হাত ধরে। এর আগে থেকেই মিরপুরের মূল মাঠে তৈরি করা অস্থায়ী মঞ্চে প্রস্তুত ছিলেন অন্য ক্রিকেটাররা। মুশফিকের পর ক্রিকেটাররা একে একে বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখেন। পাশাপাশি বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখার ওই মুহূর্ত করে নেন ফ্রেমবন্দি। ক্রিকেটারদের পর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের সামনে আনা হয় বিশ্বকাপ ট্রফি। সেখানে বিসিবি কর্তা ও ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট অন্যদের ছবি তোলার জন্য রাখা হয় বিশ্বকাপ ট্রফি।
ক্রিকেটারদের মধ্যে উচ্ছ¡াসটা ছিল দেখার মতো। নিজের মতো করে সবাই ফ্রেমবন্দি করে নেন বিশ্বকাপ ট্রফি ধরে নেওয়ার ওই মুহূর্তকে। সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখেন বিশ্বকাপ ট্রফি। ওই ফটোসেশনের পর আইসিসির কনটেন্ট ক্রিয়েটরের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন মুশফিকুর রহিম, তাসকিন আহমেদ ও স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। সেখানে মুশফিক জানান, অভিজ্ঞতা এগিয়ে রাখবে বাংলাদেশ দলকে। তাসকিন আহমেদ বিশ্বাস রাখছেন দলের ওপরÑ ‘টিমওয়ার্ক, মাঠে সর্বোচ্চ নিবেদনে এবার ভিন্ন কিছুই হতে পারে।’
ক্রিকেটারদের ফটোসেশনের পর ট্রফি আনা হয় মিডিয়া সেন্টারের সামনে। সেখানে সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলেন নারী ক্রিকেটাররা। এ ছাড়া সেখানে ছিলেন জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন, সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান। বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলার পর নারী ক্রিকেটারদের উচ্ছ¡াসটা ছিল চোখে পড়ার মতো। নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলেন, ‘আগে কখনও সামনা সামনি দেখার সুযোগ হয়নি। ধন্যবাদ বিসিবি ও আমাদের নারী বিভাগকে, আমাদের এ সুযোগটা করে দেওয়ার জন্য।’ ট্রফি সামনে থেকে দেখাকে স্বপ্নের মতো বলেন তিনি, ‘অনেক তরুণ খেলোয়াড় ছিল, তাদের আসলে স্বপ্নের মতো ছিল বিশ্বকাপ ট্রফিকে সামনে থেকে দেখা।’
বাংলাদেশ দলের কাছে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বলেন, অবশ্যই বলতে হয়, এক্সপেক্টেশন বাংলাদেশের কাছ থেকে আমাদের সবার খেলোয়াড় হিসেবে অনেক বেশি, প্লাস হচ্ছে জনগণেরও অনেক বেশি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমার মনে সেরা দলটাই বোধহয় এবার।’ এদিকে কিছুটা আক্ষেপ ছিল নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের কণ্ঠে। তার চাওয়া বিশ্বকাপ জয়ের পর যেন উঁচিয়ে ধরতে পারেন এই বিশ্বকাপ ট্রফি, ‘ট্রফিটা ছুঁতে পেরে খুব ভালো লাগছে, একটা স্বপ্ন তো থাকে। যদি খোলা ট্রফিটা ধরতে পারতাম জেতার পর, তাহলে আরও ভালো লাগবে। একটু রোমাঞ্চ অনুভব করছি।’
বিশ্বকাপে দলের কাছে প্রত্যাশা কীÑ সেটাও জানিয়ে দেন হাবিবুল বাশার সুমন, ‘আমি এবার শুধু ভালো খেলতে চাই না, ভালো কিছু করতে চাই। ট্রফির কাছাকাছি যেতে চাই। এর আগেও আমরা ভালো খেলেছি বিশ্বকাপে। সেভাবে আশানুরূপ হয়নি ফল। ফলটা চাই অবশ্য (এবার)।’ তিনি আরও যোগ করেন, এই ট্রফির মাধ্যমে শুরু হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। এবার বিশ্বকাপ ট্রফিটা ঘরে আনতে পারলেই হয়তো পূর্ণ হবে ষোলোকলা।
সাধারণ মানুষের জন্য ট্রফি উন্মুক্ত করা হয় ৯ আগস্ট। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে রাখা হয় বিশ্বকাপ ট্রফি। বেশিসংখ্যক মানুষের দেখার সুবিধার্থে সেখানে রাখা হয়নি কোনো বাধ্যবাধকতা। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে লাইনে নির্ধারিত দূরত্বে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে ও ছবি তোলেন সাধারণ মানুষ। বিশ্বকাপ ট্রফির বিশ্বভ্রমণের অংশ হিসেবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে রাখা হয় বিশ্বকাপ ট্রফি। এরপর বাংলাদেশ থেকে কুয়েতের উদ্দেশে রওনা হয় বিশ্বকাপ ট্রফি।