অপরিচিত চেন্নাইয়ে উইকেটই শুধু ‘চেনাজানা’
বিমান বন্দরের বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে গরম হাওয়ার ঝটকা এসে গায়ে লাগলো। উত্তাপটা জানিয়ে দিল চেন্নাই বেশ ‘গরম’ হয়েই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ দলের জন্য। তবে এই গরমের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের বেশ ভালোই পরিচয় আছে। চেন্নাইয়ের চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম বাংলাদেশের জন্য আরেকটি পরিচিত অনুষঙ্গ নিয়ে অপেক্ষা করছে- উইকেট!
ইতিহাস, পরিসংখ্যান এমনটি এই মাঠে সর্বশেষ হয়ে যাওয়া বিশ্বকাপের ম্যাচ জানাচ্ছে এখানে মূলত ম্যাচ শাসন করেন স্পিনাররা। প্রমাণ খুঁজতে খুব বেশি স্কোর ঘাঁটাঘাঁটির প্রয়োজন নেই। ৮ অক্টোবর এই মাঠে হওয়া ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের স্কোরকার্ডই সেই সত্যতা জানাচ্ছে। লো-স্কোরের সেই ম্যাচে স্পিনাররাই ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ১০ উইকেটের মধ্যে ৬ উইকেটই শিকার করেন ভারতের তিন স্পিনার। ৫০ ওভারের ম্যাচে ৩০ ওভারই করেন ভারতের তিন স্পিনার তাদের পুরো বোলিং কোটা পুরো করেন। এই তিনের ৩০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলে মাত্র ১০৪ রান। হারায় ৬ উইকেট। একটু জানিয়ে দেই, এই তিনজন পুরো ম্যাচে ডটবল আদায় করেন ১০১। অর্থাৎ স্পিনারদের ১৮০ বলের মধ্যে ১০১ বল থেকে অস্ট্রেলিয়া কোনো রানই নিতে পারেনি!
নিশ্চিতভাবে শুক্রবার ১৩ অক্টোবরের ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দল ভারত-অস্ট্রেলিয়ার এই ম্যাচের ভিডিও রেকর্ড দেখে পরিকল্পনায় কাটাকুটি করছে! ধর্মশালা থেকে চেন্নাইয়ের বিমান যাত্রায় সাকিব আল হাসান ও মেহেদি মিরাজ দাবা খেলার সম্ভবত সেই হিসেবই কষছিলেন!
বুধবার সন্ধ্যায় চেন্নাই স্টেডিয়ামে নেট অনুশীলনেও নিউজিল্যান্ড দলকে স্পিনে বাড়তি মনোযোগ দিতে দেখা গেল। এখানকার উইকেট কেমন আচরণ করে সেটা নিউজিল্যান্ডের থিঙ্ক ট্যাঙ্কদেরও বেশ ভালোই জানা। আইপিএলের অভিজ্ঞতা থেকে কেন উইলিয়ামসন জানেন এই মাঠে কোন একাদশ বেশি কার্যকর। অনুশীলন নেটে বাংলাদেশের সাবেক কোচ শেন জার্গেনসনও উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, মানছি এখানে স্পিন বেশি কার্যকর, কিন্তু পেসাররাও উইকেট ঠিকই পায়। জার্গেনসন এখন বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সহকারি কোচ।
এই মাঠ বাংলাদেশ দলের জন্য অচেনা হলেও ড্রেসিংরুমে একজন আছেন যিনি এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন-খালেদ মাহমুদ সুজন। ১৯৯৮ সালে চেন্নাইয়ে কেনিয়ার বিরুদ্ধে এখানে খেলেছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি-বিঘ্নিত সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ২৮ রানে। তখনকার দিনে কেনিয়া প্রায়সময় বাংলাদেশকে হারাতো। আর এখন বাংলাদেশ সেই মাঠে স্বপ্ন বুনছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের!
সময় তো এভাবেই বদলায়!
বাউন্ডারি সীমানায় দাড়িয়ে চেন্নাইয়ের পুরো মাঠ দেখে যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে। সুবিন্যস্ত সবুজ আউটফিল্ড ক্রমশ ঢালু হয়ে বাউন্ডারির দড়ি ছুঁয়েছে। প্রেসবক্স চিনিয়ে দেওয়ার জন্য স্টেডিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক বীরারত্নে নিজেই এগিয়ে এলেন। চারপাশ দেখিয়ে তাকে বললাম-এটাই তাহলে ধোনির মাঠ?
বিশেষণটা শুনে বীরারত্নে সম্ভবত বিরক্ত হলেন। তথ্য শুধরে দিলেন, আপনি ভুল বলছেন। এটা আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হোম ভেন্যু। কিন্ত মাঠ নির্মাণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন এম এ চিদাম্বরম। বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড) এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। তামিমনাড়ু ক্রিকেট এসোসিয়েশন সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। মাঠের মালিকও তামিলনাড়ু ক্রিকেট এসোসিয়েশন।
মাঠের মালিক সে যেই হোক না কেন, এই স্টেডিয়াম মূলত সুখ্যাতি ছড়িয়েছে অনেক কারণে। এই মাঠেই ভারত তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জিতে। এই ভেন্যুতেই সুনীল গাভাস্কার টপকে যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ২৯ টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডকে। আর এখানেই ১৯৮৮ সালে নিজের অভিষেক টেস্টে লেগ স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানি উভয় ইনিংসে ৮টি করে উইকেট নিয়ে গড়েন নতুন রেকর্ড। ইতিহাসের দ্বিতীয় টাই টেস্টের সাক্ষীও চেন্নাইয়ের এই স্টেডিয়াম। যারা ভাবছেন ব্যাটসম্যানদের জন্য কিছুই রাখেনি এই মাঠ, তারাও ভুল!
পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ রানের ইনিংস দেখেছিল এই মাঠ। ১৩ অক্টোবরের ম্যাচের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ দল অবশ্য অতো পেছনের রেকর্ডস কিছু ঘাঁটছে না। বিশ্বকাপে ৮ অক্টোবর ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে স্পিনারদের সাফল্যকেই আমলে নিচ্ছে বেশি।
সেই ম্যাচে ভারতের বোলিং আক্রমণের অমন কৌশল বেশ মনে ধরেছে বাংলাদেশেরও। চেন্নাইয়ের ২২ গজের সঙ্গে কিছুটা সাজুস্য তাহলে পাওয়া যাচ্ছে মিরপুরে হোম অফ ক্রিকেটের মাঝ বরাবরের!
এম. এম. কায়সার, চেন্নাই থেকে