‘স্টপগ্যাপ’ নয়, লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়ক হচ্ছেন শান্ত
প্রশ্ন: জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ কবে খেলেছেন সাকিব?
উত্তর: ২০২৩ সালে। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দিল্লিতে ৬ নভেম্বর ম্যাচটি খেলেন সাকিব। ইনজুরির কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটি খেলতে পারেননি। দেশে ফিরে আসেন।
তারপর থেকে সাকিব আঙ্গুলের ইনজুরি, রাজনীতিতে যোগদান, জাতীয় নির্বাচন এবং চোখের চিকিৎসা-এই ব্যস্ততায় সময় পার করেন। এর মধ্যে অবশ্য বাংলাদেশ দেশে এবং বিদেশে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে লম্বা ক্রিকেট সিরিজ খেলে ফেলে। এই দুই সিরিজেই দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। যিনি ছিলেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক। সাকিবের ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপেও দুটো ম্যাচে শান্ত অধিনায়কত্ব করেন।
১৯ জানুয়ারি থেকে বিপিএল শুরু হয়েছে। সাকিব রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যেও এই সময়ে ক্রিকেট মাঠে ফিরেন। তবে চোখের চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে একবার ইংল্যান্ড এবং আরেকবার সিঙ্গাপুর ঘুরে আসেন। চোখের সমস্যা নিয়েই বিপিএলে খেলেন। শুরুর দিকে পারফর্ম্যান্সে পিছিয়ে পড়া সাকিব বিপিএলে নিজের শেষ ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসেন। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স দেখিয়ে হলেন ম্যাচ সেরা। তার দল রংপুর রাইডার্স পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষস্থানে পৌছছে।
রংপুরের হয়ে পারফর্ম্যান্সে ‘রং’ ছড়াতে শুরু করা সাকিব আল হাসান আবার কবে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে ফিরবেন? বিপিএলের পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্ট, টি- টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে তিন ফরম্যাটেই মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ।
প্রশ্ন হলো– সাকিব কি ফিরছেন এই সিরিজে?
সাকিবের উত্তরটা শুনি– ‘এটা আসলে সময়ই বলে দেবে। টুর্নামেন্ট (বিপিএল) এখনো আছে। দেখি কি অবস্থা দাড়ায় আর অফিসিয়ালদের সাথেও বসতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।’
সাকিব উত্তর দিলেন কিন্তু তার উত্তরের মধ্যে সবকিছুর পরিস্কার কোনো উত্তর যে মিলল না। তবে এটা নিশ্চিত যে শ্রীলঙ্কা সিরিজে তিনি এখনো ‘নিশ্চিত’ না। যদি পুরোটা জুড়ে খেলতেই চাইতেন তাহলে নিশ্চিতমনেই বলতে পারতেন-‘হ্যাঁ, আমি খেলবো।’
কাল আরও একবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হলেন। তার কণ্ঠে ঝরে পড়ল পুরোনো সুর। বললেন, ‘আমি কি বলছি কাউকে? তো আমি কি বলেছি কখনও আমি চাচ্ছি না কিংবা চাচ্ছি এই রকম কিছু?’
মানে, স্পষ্টতা পাওয়া যায়নি সাকিবের কাছে। এই প্রসঙ্গে বিসিবির দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সাকিবের সঙ্গে এখনো আমাদের কথা হয়নি। সে এই সিরিজে থাকছে নাকি থাকছে না, সেটা তার সঙ্গে আলোচনার পর জানা যাবে।
সিরিজ শুরু হতে একমাসও বাকি নেই। অথচ এখনো দল জানে না তার দলে সাকিব আছেন কি নেই? দল জানে না তার অধিনায়ক কে? সাকিব ফিরলে যদি সব ম্যাচ খেলতে না পারেন তাহলে কি তিনি অধিনায়ক থাকবেন? নাকি এই সিরিজেও স্টপগ্যাপ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন নাজমুল হোসেন শান্ত?
জাতীয় দলের ক্রিকেট আসলে কোনো খেলনা নয়। এটা নিয়ে এত নখরা বা সিদ্ধান্তহীনতায় থাকাটাও খুব সুস্থির বা পজিটিভ কোনো বার্তা দেয় না।
যে কোনো সিরিজ এলেই সাকিবের তাতে খেলা বা না খেলা নিয়ে এই যে অনিশ্চয়তার তৈরি হয়– সেই ধারাবাহিক ‘চিত্রনাট্যে’ বিসিবিও বিরক্ত। তাই বিসিবি এবার কোনো স্টপগ্যাপ অধিনায়কত্বের চিন্তা করছে না। লম্বা সময়ের জন্য কাউকে অধিনায়ক করার কথা ভাবছে। সেই লম্বা সময়টা হতে পারে অন্তত একবছর।
আর এই মেয়াদে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য বিসিবির কাছে নাজমুল হোসেন শান্ত হলেন সেরা পছন্দ। সেই পছন্দে সিলমোহর পড়তে বিসিবির ১২ ফেব্রুয়ারির বোর্ড সভায়।
নাজমুল হোসোন শান্তকে আগাম অভিনন্দন জানিয়ে রাখতেই পারি!