রেকর্ড গড়ে চট্টগ্রামকে গুঁড়িয়ে তালিকার দুইয়ে কুমিল্লা

রেকর্ড গড়ে চট্টগ্রামকে গুঁড়িয়ে তালিকার দুইয়ে কুমিল্লা

ম্যাচের নিয়তিটা তো প্রথম ইনিংসেই গড়া হয়ে গিয়েছিল! ২৩৯ রান বিপিএলের ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ, সেটা তাড়া করে জিততে হলে চট্টগ্রামকে অবিশ্বাস্য কিছুই করতে হতো। সে চ্যালেঞ্জটা চ্যালেঞ্জার্সরা নিয়েছিল, ইনিংসের অনেকটা সময় পর্যন্ত লড়েছিল সমানে সমানে। কিন্তু শেষমেশ আর পারল না। গুটিয়ে গেল ১৬৬ রানে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচটা জিতল ৭৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। তাতে চট্টগ্রামকে হটিয়ে বিপিএল টেবিলের শীর্ষ দুইয়েও উঠে এসেছে লিটন দাসের দল।

চট্টগ্রাম তো ম্যাচটা টসের সময়ই হেরে এসেছিল! অধিনায়ক শুভাগত হোম করলেন ভুলটা। টস জিতলেন, ব্যাটিং স্বর্গে নিলেন বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত। ভুলের মিছিলটা এখানেই যদি শেষ হতো, তাহলেও বর্তে যেত চট্টগ্রাম। কিন্তু না, তাদের ভুলের মিছিল সেখানে থামেনি। ইনিংস শেষে যার নামের পাশে জ্বলজল করছিল তিন অঙ্কের রান, সেই উইল জ্যাকসও তো ফিরে যেতে পারতেন শুরুতে, তাও আবার রানের খাতা খোলার আগেই!

নিহাদুজ্জামানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েও সে যাত্রায় বেঁচে যান জ্যাকস, তার ক্যাচটা ফেলে দেন টম ব্রুস। জ্যাকস তার দ্বিতীয় ‘জীবনের’ পূর্ণ ব্যবহারটাই করলেন। চট্টগ্রামের বোলারদের ওপর তাণ্ডবলীলা চালিয়ে তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিটা।

চট্টগ্রাম ভুল করেছে, সন্দেহ নেই। তাতে অবশ্য কুমিল্লার কৃতিত্ব ম্লান হয় না একটুও। স্থিতধী শুরুর পর লিটন দাস হাত খুলতে সময় নেননি একেবারেই। পাওয়ারপ্লেতে কুমিল্লা যে তুলে ফেলল ৬২ রান, তার কৃতিত্বটা তো তারই! তিনি যখন ফিরলেন, তখন তার নামের পাশে যোগ হয়ে গেছে ৩১ বলে ৬০ রান। এরপর অবশ্য আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তাওহীদ হৃদয় হতাশ করলেন, ব্যাটিং স্বর্গেও রানের খাতা খোলার আগে ফিরে গেলেন সাজঘরে। ব্রুক গেস্টও তাই, ১০ বল খেলে করলেন মোটে ১১।

তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে গেস্টের বিদায়ের পর নামলেন মইন আলী। এর আগ পর্যন্ত জ্যাকসও খানিকটা চুপচাপই ছিলেন। ২৪ বলে তখন তার রান ৩৫, তিনটে চার আর দুটো ছক্কা... এই তার অবদান। রুদ্ররূপটা ধারণ করলেন এরপর। ওপাশে মইন আলীও ব্যাট চালালেন শুরু থেকেই। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে যোগ করলেন ১২৮ রান, তাও মাত্র ৫৩ বল খরচায়। ইনিংস যখন শেষ হলো, তখন মইনের রান ২৪ বলে ৫৩। আর ওপাশে? উইল জ্যাকসের ১০৮ রান, ৫৩ বলে; চার মেরেছেন মোটে ৫টা, আর ছক্কা ১০টি!

দুইজনের এই তাণ্ডবলীলায় কুমিল্লা তাদের ইনিংস শেষ করে ২৩৯ রান তুলে। ২০১৯ সালে রংপুর রাইডার্স এই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষেই রেকর্ডটা গড়েছিল। পাঁচ বছর পর এই চট্টগ্রামকেই সইতে হলো আরও একটা রেকর্ডগড়া রান হজমের বঞ্চনা।

এত বেশি রান হজম করে চট্টগ্রাম অবশ্য ভড়কে যায়নি। ওপেনার তানজিদ তামিম আর জশ ব্রাউনের ব্যাটে চড়ে শুরুটা করেছিল দুর্দান্ত। ৬১ রান তুলে ফেলেছিলেন দুজন মিলে। অষ্টম ওভার শেষে চলে এসেছিল ৯০ রান। 

তবে এরপরই চট্টগ্রামের যাত্রাটা হয়েছে উল্টোরথে। সেটা হয়েছে লেগি রিশাদ হোসেনের কারণে। তিনি এসেই একে একে ব্রাউন, টম ব্রুস আর শাহাদাত হোসেন দীপুকে। এরপরও অবশ্য সৈকত আলী ঝোড়ো ইনিংস খেলে দলকে আশা দেখাচ্ছিলেন। ১১ বলে ৩৬ করে তিনিও যখন বিদায় নিলেন, দলের আশাটা শেষ হয়ে গেল কার্যত ওখানেই। 

এরপর চট্টগ্রাম ইনিংসের লেজটা মুড়ে দেন মইন আলী। ১৯তম ওভারে আক্রমণে এসে পরপর তিন বলে ফেরান শহীদুল, আল আমিন, ও বিলাল খানকে। চলতি আসরের দ্বিতীয় আর সব মিলিয়ে অষ্টম হ্যাটট্রিকের দেখা পায় বিপিএল। ১৬৬ রানে গুটিয়ে যায় চট্টগ্রাম। কুমিল্লা ম্যাচটা জেতে ৭৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। 

এই জয়ের ফলে ৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে কুমিল্লা চলে এসেছে তালিকার দুইয়ে। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে রংপুর আছে শীর্ষে, রান রেটে কুমিল্লার চেয়ে এগিয়ে আছে দলটি।

সম্পর্কিত খবর