খুলনাকে উড়িয়ে শেষ চারের পথে রংপুর
শুরুটা হলো সাকিব আল হাসানের হাত ধরে, শেষটা পুরোপুরি ইমরান তাহির-ময়। এই দুইয়ের মাঝের গল্পটা রংপুর রাইডার্সের দাপটের। এতটাই যে, মাঝে কখনো মনেই হয়নি খুলনা টাইগার্স ম্যাচটা জিততে পারে। পারেওনি শেষমেশ। রংপুরই ম্যাচটা জিতেছে ৭৮ রানে। তাতে শেষ চারের আরও কাছে চলে গেছে নুরুল হাসান সোহানের দল।
ম্যাচের প্রথম অংশে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে রংপুর শুরুটা ভালো করতে পারেনি। গতকাল জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া রনি তালুকদার আজও ব্যর্থ, দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি। রিজা হেনড্রিকসও পথ ধরলেন তারই। দুজন যখন ফিরলেন, রংপুরের রান তখন মোটে ২৪।
এরপরই দৃশ্যপটে সাকিবের আগমন। পরের গল্পটা তার এমন ‘এলেন-দেখলেন-জয় করলেন’। ব্যাট হাতে তুললেন ঝড়। সবচেয়ে বেশি ঝাপটাটা গেল স্পিনার নাসুম আহমেদের ওপর দিয়ে। তার এক ওভারেই সাকিব তিন ছক্কা ও দুই বাউন্ডারিতে তুললেন ২৬ রান। চোখের পলকেই হাফসেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন। ইনিংসের ৬ ওভার শেষে রংপুরের স্কোর ২ উইকেটে ৬৯ রান। এর মধ্যে সাকিবের রানই ৪৬। তাও আবার মাত্র ১৬ বলে!
সেই ৪৬ রানে একবার ‘জীবন’ পান সাকিব। লংঅনে সহজ ক্যাচটা তার হাত থেকে ফেলে দেন নাহিদ রানা। বেচারা বোলার ছিলেন মুকিদুল। ‘জীবন’ পেয়ে চটজলদি হাফসেঞ্চুরি তুলে নিলেন সাকিব। মাত্র ২০ বলে এলো তার হাফসেঞ্চুরি। চলতি টুর্নামেন্টে বলের হিসেবে এটাই দ্রুততম। আগের রেকর্ডটা ছিল খুলনা টাইগার্সের ওপেনার এভিন লুইসের ২১ বলে, সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিরুদ্ধে।
হাফসেঞ্চুরির পর সাকিবের ব্যাটে ধার কমল না! পরের ১০ বলে আরো ১৯ রান যোগ করলেন। ১০ ওভারের মধ্যেই রংপুরের ইনিংস একশ ছাড়িয়ে গেল। লুক উডের ফিরতি স্পেলে সাকিব আউট হলে খুলনা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। লুককে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাভারে এভিন লুইসের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন। নামের পাশে তখন ৩১ বলে ৬৯ রানের ঝলমলে ইনিংস। স্ট্রাইকরেট ২২২.৫৮। রংপুরের স্কোরবোর্ড তখন রং ছড়াচ্ছে ১১.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩৩ রান।
রংপুরের এই ঝড়ের মুখে খুলনার বেচারা বোলার হয়ে থাকলেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। দুই ওভারে তার খরচ ৫২ রান! এর মধ্যে সাকিব একাই পিটিয়ে তার কাছ থেকে আদায় করলেন ৩৪ রান, তাও মাত্র ১০ বলে!
সাকিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাহেদি হাসানও ব্যাট চালিয়েছেন। ৬০ করেছেন ৩৬ বলে। এরপর জিমি নিশাম আজ ফ্লপ হলেও পরে নেমে নুরুল হাসান সোহান আর ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসরা রান তুলেছেন সময়ের দাবি মিটিয়ে। তাতে ভর করেই মূলত ইনিংস শেষে রংপুর পেয়ে যায় ২১৯ রানের বিশাল এক পুঁজি।
এমন বিশাল পুঁজি নিয়ে নিশ্চিন্তেই ছিল রংপুর। বিপিএলের ইতিহাসেই যে এত রান তাড়া করে জেতার কীর্তি নেই। খুলনার নড়বড়ে শুরুটা রংপুরের কাজ আরও সহজ করে দেয়। খুলনার ব্যাটিং লাইনআপে ওপেন করতে নামা ইংলিশ ব্যাটার অ্যালেক্স হেলস ছাড়া প্রতিরোধের দেয়াল গড়তে পারেননি কেউ।
হেলস একাই ৩৩ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলে দলের ভেলা ভাসিয়ে রেখেছিলেন। তবে অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতা আর প্রোটিয়া স্পিনার ইমরান তাহিরের ঘূর্ণিতে লক্ষ্যের অনেক আগেই থামতে হয় তাদের। ১৮.২ ওভারে খুলনা অলআউট হয় ১৪১ রান। তাহির ৪ ওভার বোলিং করে ২৬ রান দিয়ে শিকার করেন ৫ উইকেট। এই ম্যাচ দিয়ে ৫০০ টি-টোয়েন্টি উইকেট পূর্ণ হয় তার। দুটি উইকেট নেন সাকিব। একটি করে উইকেট পান শেখ মেহেদী এবং জেমস নিশাম।