সম্ভাবনা ও সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে চেন্নাই ম্যাচ
ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। এই তিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলতি বছর নিজ মাটিতে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল।
মার্চ থেকে অক্টোবরের সেই লড়াইয়ের ফলাফল যারা একটু ভুলে গেছেন তাদের মনে করিয়ে দেই। মার্চে ইংল্যান্ড তিন ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। জুলাইয়ে আফগানিস্তানও তাই। তামিম ইকবালের অবসর নাটকের সেই সিরিজে বাংলাদেশ খেলেছিল ছন্নছাড়া ক্রিকেট। সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডও ২-০ ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারায়।
টানা তিন ওয়ানডে সিরিজে হেরে এই বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে বাংলাদেশ। অবাক করার বিষয় হলো এই বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের শুরুর তিন প্রতিপক্ষ কিন্তু এই তিনদলই! ধর্মশালায় বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশ একটা হিসেব চুকিয়েছে। কিন্তু একই ভেন্যুতে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে ফের বড় ধাক্কা খায় দল।
প্রশ্ন হলো, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পারবে বাংলাদেশ দল জয়ের ধারায় ফিরতে? ক্রিকেটে পরিসংখ্যানের অনেক মূল্যায়ন হয়। সেই পরিসংখ্যান জানাচ্ছে বাংলাদেশ কখনো বিশ্বকাপের আসরে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারেনি। গেল ২০১৯ বিশ্বকাপে সম্ভাবনা জাগিয়েও ম্যাচ জিততে পারেনি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
এবার পারবে?
সেই উত্তর খুঁজি একটু পরে। তার আগে জেনে নেই বাংলাদেশের আইে দল নিয়ে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন কি বলছেন-‘ উপমহাদেশের কন্ডিশন এবং উইকেটের সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ পরিচিত। দলটিতে বেশ কয়েকজন ম্যাচ উইনার রয়েছে। যে কোনো দলকে হারানোর দক্ষতা রাখে তারা। বিশ্বকাপ অনেক লম্বা টুর্নামেন্ট। আমরা চেষ্টা করবো প্রতিটা ম্যাচে নিজেদের সেরাটা যাতে দেওয়া যায়।’
নিউজিল্যান্ড এখন পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে দুটো ম্যাচ খেলেছে। সেই দুটোতেই তাদের নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন খেলেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিউরা দাপটের সঙ্গে ম্যাচ দুটি জিতেছে। গেলবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড পুরোদুস্তর একতরফা ভঙিতে। পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধেও তাই। মুলত সেরা শক্তির দল না নিয়েও এই দুই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়েছে তারা।
বাংলাদেশ ম্যাচে একাদশে কেন উইলিয়ামসনের ফিরে আসায় তাদের শক্তিমাত্রা আরো বেড়েছে। আর বাংলাদেশ এই ম্যাচে ‘শক্তি’ খুঁজছে চেন্নাইয়ের ২২ গজে। ঐতিহ্যগতভাবেই চেন্নাইয়ের উইকেট স্পিনারদের প্রিয় শিকার ভুমি। এই মাঠে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচও তাই বলছে। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার লো স্কোরের ম্যাচে স্পিনাররাই ছিলেন বোলিং তারকা।
চেন্নাই উইকেটের স্পিন আনন্দ নিয়ে বাংলাদেশ আগাম উৎসবের প্রস্তুতি নিতেই পারে। তবে একটু মনে করিয়ে দেই, নিউজিল্যান্ডের স্পিন শক্তিও কিন্তু মন্দ নয়। মিচেল স্যান্টার আগের ম্যাচেই ব্যাটে-বলে অনবদ্য পারফরমেন্স দেখিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। সমস্যা হলো দলের আরেক স্পিনার ইস্ সোধি চেন্নাই ম্যাচে খেলতে পারছেন না উরুর ইনজুরির কারণে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্কটে পড়া এই স্পিন শক্তিকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে পারলে ম্যাচ জেতানোর মতো সক্ষমতা রয়েছে আমাদের স্পিনারদের।
সেমিফাইনাল স্বপ্নের সুর তুলে বাংলাদেশ এই বিশ্বকাপে এসেছে। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের ওপরই নির্ভর করছে সেই স্বপ্ন সফলের বাস্তবতার ঠিক কতো কাছাকাছি আছে দল। জিতলে সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি। হারলে সামনের কঠিন সময়টা আরো কঠিনতর। তখন আরো চার ম্যাচে জয়ের জন্য সামনে পাহাড় সমান চার প্রতিপক্ষ; ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া।
আর তাই শুক্রবারের নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচকে আপনি বলতেই পারেন; বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দু!