বিশ্বকাপের পর এক দিনও অধিনায়কত্ব করবো না, কথা রেখেছেন সাকিব
কেউ কথা রাখেনি...।
সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের এই দুঃখ ছিল লম্বা সময় জুড়ে। ছেলেবেলার বৈষ্টুমি। কৈশোরের মাঝি। যৌবনের বরুনা। কেউ সুনীলের সঙ্গে কথা রাখেনি। এর মধ্যে তার তেত্রিশ বছর কেটে গেল! তবে ক্রিকেটে অধিনায়ক প্রসঙ্গ যখনই উঠবে সাকিব উল্টো সুরে বলতে পারবেন-‘ আমি কথা রেখেছি!’
গত অক্টোবরে বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগের দিন সাকিব অধিনায়কত্ব প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান পরিস্কার জানিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাতকারে অনেক বিস্ফোরক মন্তব্যের সঙ্গে সাকিব তার অধিনায়কত্ব নিয়ে কি বলেছিলেন সেটা শুনি- ‘এখন যে বাস্তবতা, আমি শুধু এই বিশ্বকাপ পর্যন্তই অধিনায়কত্ব করব। এর এক দিন পরই না। আমি হাসিমুখে খেলতে চেয়েছি, উপভোগ করতে চেয়েছি। বাংলাদেশের হয়ে পারফর্ম করতে চেয়েছি। এই একটা কারণেই অধিনায়কত্ব করতে চাইনি। এই পর্যায়ে এসে অধিনায়কত্ব কি কোনো ভ্যালু অ্যাড করছে? আমি তো মনে করি না।’
বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচে সাকিব খেলতে পারেননি। ইনজুরি কারণে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ মিস করেন। শেষবারের মতো অধিনায়কত্ব করেন বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত ম্যাচে। ৬ নভেম্বর দিল্লিতে সেই ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে। সেই জয়ের সুবাদে বাংলাদেশ র্যাঙ্কিং অনুযায়ী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ব্যাটার অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসকে ‘টাইমড আউট’ করে সাকিব আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে চলে আসেন। সেই আউটের ব্যাখ্যায় সাকিব সেদিন বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকেই এই আউট। তাছাড়া আমরা তো ম্যাচ জিততে নেমেছি। তাই নিয়মের মধ্যে যা কিছু প্রয়োজন সেটাই করেছি।’
একটু মনে করিয়ে দেই বাংলাদেশের জয়ী সেই ম্যাচে সাকিব হয়েছিলেন ম্যাচসেরা।
বিশ্বকাপের আগে নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব যা বলেছিলেন, বিশ্বকাপ শেষে করেও দেখালেন ঠিক সেটাই। অধিনায়কত্ব আর করলেন না। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেট বিপিএলেও অধিনায়কত্ব থেকে সরে এলেন তিনি। বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে তার খেলা হয়েও উঠেনি। আঙ্গুলে চোটের জন্য নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরে এবং বিদেশে সিরিজ মিস করেন। আর মার্চে যখন শ্রীলঙ্কা দেশে আসছে তখন চোখের সমস্যার কারণে জাতীয় দলের বাইরে তিনি। তবে সাকিব জানিয়েছেন, তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই তিনি ফিরবেন। খেলবেন। কিন্তু অধিনায়কত্ব আর নয়। বিসিবিও সাকিবের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। তাই তিন ফরমেটেই সামনের এক বছরের জন্য নতুন অধিনায়ক হিসেবে তারা নাজমুল হোসেন শান্তকে নির্বাচিত করেছে।
গুড চয়েজ, সন্দেহ নেই।
তবে সাকিবকে অধিনায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে কয়েকধার থেকে যে হল্লা উঠছে, সেখানে মুলত সত্যতার চেয়ে হিংসের প্রলেপ বেশি!
সাকিব তো নিজেই বলেছিলেন বিশ্বকাপের পর তিনি আর অধিনায়কত্ব করতে চান না। হিসেব তো ওখানেই বরাবর। বিশ্বকাপ শেষে তিনি এও পরিস্কার করেছেন তিন ফরমেটেই খেলতে চান। কিন্তু একবারও বলেছেন অধিনায়ক হয়েই খেলতে চান? উত্তর হলো-বলেননি। তাহলে তিনি তো অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছেন সেই কবে, বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেই। ছেড়ে দেওয়া আর কেড়ে নেওয়া বা সরিয়ে দেওয়ার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য।
সাকিব নিজেই তার অধিনায়ক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি টেনেছেন।