মনে হয় ওপেনিং নিয়ে এখন আর চিন্তাই না করি

  • স্পোর্টস বাংলা রিপোর্ট
  • ০৮:২৩ পিএম | ১২ অক্টোবর, ২০২৩

বিশ্বকাপে যাত্রাটা বাংলাদেশের ভালোই হয়েছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ এক জয় পেয়েছিল দল। তবে এরপরই দল ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বসল বিশাল ব্যবধানে। এবার প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। তার আগে নাজমুল হোসেন শান্ত মুখোমুখি হলেন সংবাদ মাধ্যমের, জানালেন ম্যাচ আর দল নিয়ে নিজের ভাবনা।
সে আলাপচারিতা স্পোর্টস বাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো–

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোটা কতটা কঠিন?
আমার মনে হয় টুর্নামেন্টে আমরা ভালো শুরু করেছি। সত্যি বলতে আমরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারিনি। আমরা এই ম্যাচ নিয়ে এতো বেশি চিন্তিত না। সামনের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি, ভালো একটা ম্যাচ খেলতে পারব।

চেন্নাইয়ের উইকেট স্পিন সহায়ক। এই কঠিন মুহূর্তে জয় পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা এর আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দেখেছি। উইকেটটা স্পিন নির্ভর ছিল। আমার মনে হয়, আমাদের স্পিনারদের অনেক সাহায্য করে এটা। উইকেট নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না। আমাদের পরিকল্পনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের কী করতে হবে সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

উইকেট দেখেছেন?
না। উইকেট দেখি নি। আমরা মাত্রই অনুশীলনের জন্য এসেছি। হয়তো অনুশীলনে গিয়ে উইকেট দেখব।

ভারতের উইকেট নিয়ে আপনার ধারনা কী?
আপনি যদি ভারতের উইকেটগুলো দেখেন। সবগুলোই মোটামুটি ভালো। আমার মনে হয় উইকেট যদি নতুন হয় তাহলে ৩২০-৩২৫ রান হতে পারে।

অধিনায়ক তামিম ইকবালকে রেখে বিশ্বকাপে এসেছেন। এটা নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
আমি এইসব নিয়ে বেশি কিছু জানি না। বিশেষ করে অধিনায়কত্ব নিয়ে। এখন আমরা এখানে। আমার মনে অধিনায়ক প্রস্তুত তার দলের জন্য। যা হয়েছে সেটা পেছনের কথা। এখন আমরা টুর্নামেন্টের সামনের দিকে তাকাতে চাই।

সাকিব ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনেক তাড়াতাড়ি তার কোটা শেষ করেছিল। শেষ দিকে অনভিজ্ঞদের উপর ভরসা রাখতে হয়েছিল। ঠিক কেন?
তিনি অনেক ভালো বল করছিলেন। আমাদের দ্রুত উইকেট নেওয়ার দরকার ছিল। কারণ, মালান অনেক ভালো ব্যাট করছিল। সে সুযোগ নিয়েছিল। আমার মনে হয় স্পিনাররা সবাই যথেষ্ট অভিজ্ঞ ছিল। মেহেদি হাসান মিরাজ প্রায় ৭০-৮০টা ম্যাচ খেলেছে। সে অবশ্যই অনেক অভিজ্ঞ। যদি একটি উইকেট নিয়েছিল। আরও দুই একটা উইকেট নিলে হয়তো পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।

বড় রান করতে না পারা ও লক্ষ্য তাড়া করতে না পারার দায় কতটা ব্যাটারদের?
আমার মনে হয় অবশ্যই আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি, আরও ভালো ব্যাটিং করা উচিত ছিল। দুইটা ম্যাচ হয়েছে মাত্র। প্রথম ম্যাচে বোলার-ব্যাটাররা বেশ ভালোভাবে শেষ করেছে। সামনের ম্যাচে ব্যাটাররা কিভাবে ভালো ব্যাটিং করে সেটাই জরুরি বিষয়। সেটা নিয়ে পরিকল্পনাও আছে। চেষ্টা করব সামনের ম্যাচে ওইভাবে ব্যাটিং করার।

নিউজিল্যান্ডের পরে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হতে হবে। সেমিফাইনালে ওঠার জন্য নিউজিল্যান্ডকে হারানো কতটা জরুরি মনে করেন?
প্রত্যেকটা ম্যাচই আমাদের জন্য জরুরি। আমার মনে হয় না, এখনই সেমিফাইনাল নিয়ে চিন্তা করা খুব জরুরি। একটা একটা করে ম্যাচ যেতে চাই। যদি কালকের (আজ) ম্যাচটা ভালোভাবে শেষ করি তাহলে যে লক্ষ্যটা থাকবে সেখানে বেশ ভালভাবে এগোতে পারব।

নিউজিল্যান্ড ম্যাচে মাহেদি-নাসুমের ভূমিকাটা কী রকম দেখেন?
এশিয়া কাপের ম্যাচটা (ভারত ম্যাচ) তো খুব ভালো খেলেছিল আমার মনে হয়। আবার উইকেটটা কেমন হবে সেটা জানি না। উইকেটটা দেখার পর অধিনায়ক-কোচ সিদ্ধান্ত নিবে আমরা কয়টা স্পিনার বা পেসার নিয়ে খেলব। এটা উইকেট দেখার পর বোঝা যাবে। আমার মনে হয়, এখানে যারা এসেছে সবাই পারফর্ম করে এসেছে। সবার মধ্যে সেই সামর্থ্য আছে। ওই ম্যাচটা যদি খেয়াল করেন লোয়ার মিডল অর্ডারে সবাই ভালো ব্যাট করেছে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা ছিল।

টপ অর্ডারে তিনজন বাঁহাতি ব্যাটার। মিচেল স্যান্টনারও বাঁহাতি স্পিনার। তাকে নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা আছে কী?
আমি যাদের মুখোমুখি হয়েছি, তাদের মধ্যে সে অন্যতম সেরা বোলার। আমাদের পরিকল্পনা তো আছেই। আর আপনি যেটা বললেন, তিনজন বাঁহাতি ব্যাটার আমরা এটা নিয়ে ভাবছি না। যদি ভালো শুরু করতে পারি তাহলে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব। আমি অনুভব করি, আমাদের ভালো শুরু করতে হবে। প্রথম চার ব্যাটারকে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে হবে। যদি টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার লম্বা সময় ধরে ব্যাট করতে পারে, তাহলে আমাদের ব্যাটিং অর্ডারে অনেক উপকার হবে।

বিশ্বকাপে ওপেনিং সমস্যার হবে। এটাই কী মনে করেন?
আমার মনে হয় ওপেনিং নিয়ে আর চিন্তাই না করি। ওপেনিংটাই বাদ দিয়ে দেই (হাসি)। এখানে টপ অর্ডারে যারাই আছে, তারা খুব ভালোমতো প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। আমার মনে হয়, এক দুইটা ভালো ইনিংস ওই ব্যাটারকে ভালো আত্মবিশ্বাস এনে দিবে। এখানে কেউই এমন না যে নির্ভার আছে। সবাই দলের জন্য সবাই চেষ্টা করছে। আশা করছি, টপ অর্ডার থেকে সামনের ম্যাচ থেকে ভালো স্কোর আসবে।

তানজিদ তামিমকে আসলে কিভাবে সমর্থন করছেন?
পাঁচ-ছয়টা ম্যাচই খেলেছে ও। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে কারও হয়তো কম সময় লাগে, কারও বেশি। সবার ওই বিশ্বাসটা রাখা উচিত নিজের উপর। আমরা যেন ওকে বিশ্বাস করি ও সমর্থন করি। কারণ যারা এখানে আসছে, সবাই সামর্থ্যবান ভালো করার জন্য। আশা করছি, সামনের ম্যাচে ভালো কিছু করবে।

ইংল্যান্ড ম্যাচের পর কী ধরনের আলোচনা হয়েছে?
দলের আলোচনা ওই রকম কিছু ছিল না। লম্বা একটা টুর্নামেন্ট। এমন না যে ৯ ম্যাচেই আমরা জিতব। এখানে হার-জিত থাকবে। এখান থেকে আমরা কিভাবে ক্যামব্যাক করতে পারি, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে।

শ্রীধরন শ্রীরাম কী রকম সাহায্য করছে?
হ্যাঁ উনি অনেক সাহায্য করছেন। আমার মনে হয় ধর্মশালায় আমরা যে দুইটা ম্যাচ খেললাম, ম্যাচের আগে উইকেট সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন প্রত্যেকটা ব্যাটার-বোলারকে। এখানে (চেন্নাইয়ে) আসার আগে এখানকার উইকেট কেমন হবে সেই সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন।…. সেই সম্পর্কেও আমাদের আলাপ আলোচনা হয়েছে। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে অনেক সাহায্য পাচ্ছি তার কাছ থেকে। আশা করব, সামনের যে ম্যাচগুলো আছে সেখানেও এইভাবে সাহায্য করবে।

পেসারদের পারফরম্যান্স নিয়ে কী ধরনের বার্তা দিচ্ছেন?
প্রথমত কোন পেস বোলারই হতাশ না। সবাই ঠিক আছে এবং এখানে উইকেটটাই এমন। রান স্বাভাবিক একটু বেশিই দিবে। আমরা নরমালি দেখি না, আমাদের পেস বোলাররা ১০ ওভারে ৬৫-৭০ দেয়। হঠাৎ করে এসে মনে হচ্ছে যে অনেক খারাপ বোলিং হচ্ছে। বিষয়টা খারাপ না। সবাই বিষয়টা নিয়ে অবগত আছে যে, এখানকার উইকেটটা ভালো। এখানে কত কম রানের মধ্যে রাখতে পারি মিডল ওভারগুলোতে উইকেট বের করতে পারি। সবার একটা পরিকল্পনা আছে। তারা এইভাবে কষ্ট করছে। আমার মনে হয় পেস বোলাররা যে অবস্থায় আছে, আমি বিশ্বাস করি আর ১০ শতাংশ উন্নতি করি তাহলে অনেক উন্নতি হবে।

ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরিকল্পনাটা কী হতে পারে?
একটা জিনিসই মনে হয়েছে, আমরা কত বেশি সাহস নিয়ে ব্যাটিং করতেছি। মন খুলে কতটুকু স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাটিং করতেছি। এটা জরুরি। যদি দেখা যায় যে, প্রত্যেকটা দলের ব্যাটার যারা রান করতেছে আমার মনে হচ্ছে খুব আরামেই রান করতেছে। মন খুলে-স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাটিং করাটা জরুরি। সবার টেকনিক, সবাই এখানে স্কিলফুল। যদি আমরা ওই ফ্রিডম নিয়ে ব্যাটিং করি, তাহলে ভালো করা সম্ভব। কারণ, কোচিং স্টাফ, অধিনায়ক সবার কাছ থেকে আমাদের ওই স্বাধীনতা আছে।

ব্যাটিংয়ের শুরুটা চিন্তার কারণ কি-না?
আমার মনে হয় নতুন বলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করাটা চ্যালেঞ্জিং। যদি শুরুটা ভালো না হয়, দুই তিনটা উইকেট তাড়াতাড়ি পড়ে যায় তাহলে আমরা কিভাবে ফিরে আসব, সেটাই জরুরি। এটা মাথায় রাখতে হবে দুই তিনটা উইকেট তাড়াতাড়ি পড়ে গেলে আমরা অল্প রানে অলআউট হবো না।

খেলার দুনিয়া | ফলো করুন :