লিপুর হাতে ‘বিশেষ ক্ষমতা’, বাকি দুজন ‘সাধারণ’!

বিসিবিতে নতুন নির্বাচক প্যানেল
লিপুর হাতে ‘বিশেষ ক্ষমতা’, বাকি দুজন ‘সাধারণ’!

অনেক ক্ষমতা নিয়ে প্রধান নির্বাচক হয়েছেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
-কেমন সেই ক্ষমতা?
এক প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো-বোর্ডের নির্বাচিত পরিচালকরা বিসিবির অধিকর্তা হিসেবে ঠিক যেমনসব সুযোগ-সুবিধা পান প্রধান নির্বাচক পদে লিপুও তা পাবেন। শুধু তিনি বোর্ড সভায় অংশ নিতে পারবেন না। বোর্ড পরিচালকদের বাকি সব সুযোগ সুবিধা তিনি পাবেন। প্রধান নির্বাচক পদে চাকরি গ্রহণের আগে এসব শর্ত দিয়েছিলেন লিপু। বোর্ড সেটা অনুমোদন করেছে। এই পদে লিপুকে পেয়ে বিসিবির শীর্ষ কর্তা খুশি এবং আপাতত সন্তুষ্ট।

কিন্তু প্রশ্ন হলো প্রধান নির্বাচক পদে লিপু যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন এই প্যানেলে তার বাকি দুই নির্বাচকের কি সেভাবে ক্ষমতায়ন হচ্ছে?
উত্তর হচ্ছে- না! এই ক্ষমতা এককভাবে শুধু প্রধান নির্বাচক লিপু পাচ্ছেন। তার প্যানেলের বাকি দুই নির্বাচকের সুযোগ-সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকছে। তারা এখনো যে কোনো ‘সাধারণ সদস্য’!

নির্বাচক প্যানেলে ক্ষমতায়নের এই বিষয়টা কি কোনো বৈষম্য তৈরি করবে কি না? আপনি যদি এর উত্তর জানতে চান তাহলে নিশ্চিত উত্তরটা হবে, হ্যাঁ অবশ্যই বৈষম্য ও সমস্যা তৈরি করবে।

বিষয়টা শুধু আর্থিক বা ক্ষমতার নয়, মর্যাদারও বটে। এমন পরিস্থিতিতে বাকি দুই নির্বাচক তো ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষমতাহীন ভাবতেই পারেন! নির্বাচক প্যানেলের প্রধান হিসেবে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু যে ক্ষমতা, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে নিয়ে এসেছেন সাধারণভাবে একটা নির্বাচক প্যানেলের সেই মর্যাদাই পাওয়ার কথা।

তবে এই মর্যাদা বা ক্ষমতায়ন যখন শুধুমাত্র প্রধান নির্বাচকের জন্যই কেবল সুনির্দিষ্ট থাকবে তখন সেটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুবিধাবৃদ্ধি হবে। কিন্তু সেই ক্ষমতা যখন পুরো কমিটির জন্য থাকবে তখন সেটা সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা বাড়াবে। পুরো কমিটি তখন নিজেদের বিছিন্ন মনে করবে না। এমনকি ক্ষমতায়নের প্রশ্নে হীন চিন্তায় আচ্ছন্ন হবে না। আর তাই শুধু প্রধান নির্বাচক নয়, পুরো নির্বাচক কমিটির অর্থনৈতিক, পারিপার্শ্বিক, মর্যাদা ও ক্ষমতায়নের স্তরটা অনেক উঁচুতে থাকা উচিত। নির্বাচক প্যানেলের মর্যাদা, প্রভাব ও ক্ষমতা বৃদ্ধির এই বিষয়টা পুরো কমিটিকে একটা নিজস্ব স্বকীয়তা, স্বাধীনচিন্তা ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ়তা এনে দেবে।

প্রধান নির্বাচক হিসেবে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু যে ক্ষমতা ও মর্যাদা নিয়ে এই পদে এসেছেন সেটা যেন শুধুমাত্র ব্যক্তিবিশেষ কেন্দ্রিক না হয়। সেটা যেন অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক হয়। ধরুন, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু এই পদে দুই বছর তার কাজ শেষে আর চুক্তি নবায়ন করলেন না। তখন এই পদে নতুন যিনি আসবেন তাকেও সেই সময় যেন বিসিবি সমমর্যাদা বা ক্ষমতা প্রদান করে। কারণ এখানে নাম বা ব্যক্তি কোনো বিষয় নয়, মর্যাদার বিষয়টা হওয়া উচিত ঐ চেয়ারটার। ঐ কমিটির। ঐ প্যানেলের।

এই প্রসঙ্গে ক্রিকেট মেন্টর নাজমুল আবেদিন ফাহিম কার্যকর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভালো লাগছে এটা জেনে এবং দেখে যে লিপু নির্বাচক প্যানেলে এসেছে অনেক বড় মর্যাদা ও ক্ষমতা নিয়ে। তবে এই ক্ষমতা ও মর্যাদা শুধুমাত্র প্রধান নির্বাচকের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়ে বিসিবি কি কমিটির অন্য দুই নির্বাচককে অবমূল্যায়িত করে ফেললো কিনা- সেই প্রশ্নটা উঠতেই পারে। মনে রাখতে হবে, অল জাজেস আর জাজেস। তারা প্রত্যেকেই শ্রদ্ধা-সন্মান পাওয়ার যোগ্য। শ্রদ্ধা-সন্মান বা ক্ষমতায়নের বিষয়ে কাউকে কম বা কাউকে বেশি করতে গেলে কিন্তু সমস্যার তৈরি হবে।’

ক্ষমতায়ন, মর্যাদা, স্বকীয়তা ও যথাযথ যৌক্তিক স্বাধীন চিন্তা চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য সুন্দর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ক্রিকেট শুধু ব্যাট-বলের খেলাই নয়, অনেক গভীর জীবন-দর্শনও বটে। আর সেই বোধ তৈরির দায়িত্ব অনেকেরই। তবে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ অভিভাবক সংস্থা হিসেবে এই সংস্কৃতি তৈরি ও তা প্রতিষ্ঠিত করার মূল দায়িত্ব বিসিবির।

লিপুর নেতৃত্বে নতুন নির্বাচক কমিটি সামনের সময়ে যেন সেই ‘মর্যাদার ইনিংসই’ খেলে।

সম্পর্কিত খবর