দাপুটে জয়ে প্লে-অফের শেষ দল বরিশাল
স্পোর্টস রিপোর্টার:
প্লে-অফে নাম লেখানোর এই ম্যাচে ফরচুন বরিশালের সামনে বেশকিছু সমীকরণ ও হিসেব-নিকেশের অঙ্ক ছিল। তবে অতোসব অঙ্ক ও সমীকরণ মেলানোর পথে না হেঁটে একটা সহজ পরিকল্পনা নেয় বরিশাল; আর তা হলো এই ম্যাচ জিততে হবে। শুধুমাত্র তাই জয়ের দিকেই মনোযোগ ও ফোকাস রাখে তারা। এবং জয় নিয়েই ফিরল। আর ৬ উইকেটের এই জয়েই বিপিএলের চতুর্থ এবং শেষ দল হিসেবে বরিশাল নাম লেখাল। কুমিল্লার ১৪০ রানের স্কোর বরিশাল টপকে গেল ২ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে। বরিশালের এই জয়ে শেষ ম্যাচে মাঠে নামার আগেই খুলনা টাইগার্সের বিপিএল থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল।
রান তাড়ায় এই ম্যাচে বরিশালের সেরা ব্যাটারের সম্মান পাচ্ছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল স্বয়ং। এই উইকেটে বড় রান পেতে হলে টিকে থাকতে হবে- তামিমের ব্যাটিং তাই করে দেখাল। ৪৮ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলে তামিম যখন তার চতুর্থ ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন তখন ম্যাচ জয় থেকে ১৯ রান দুরে দাড়িয়ে বরিশাল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকার ছক্কা-চারে সেই কাজটা সহজেই করে দিলেন।
টসে হেরে এই উইকেটে আগে ব্যাট করতে নামা লিটন দাস ১৬০ রান চেয়েছিলেন। কিন্তু তার দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স করতে পারলো মাত্র ১৪০ রান। চাহিদা থেকে ২০ রান পিছিয়ে রইলো কুমিল্লা। সেই দুঃখ নিয়েই ম্যাচটা হারল কুমিল্লা।
চট্টগ্রামের পর্বে বিপিএলের উইকেটকে যদি ব্যাটিংয়ের জন্য মসৃণ হাইওয়ে মানা হয় তাহলে ঢাকার শেষ পর্বের প্রথমদিনের উইকেটকে বলতে হবে বৃষ্টিতে যেন ভাঙ্গা রাস্তা! এখানে ব্যাট করা সহজ নয়। স্পিনাররা টার্ন পাচ্ছেন লাটিমের মতো। সেটা বুঝতেই পেরেই প্লে অফে উঠার এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ফরচুন বরিশাল একাদশে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে খেলায়। তাইজুল প্রতিদান দিলেন দারুণভাবে। ৩ ওভারে ২০ রানে শিকার তার ৩ উইকেট। আউট হওয়া এই তিন ব্যাটার হলেন লিটন দাস, মাহিদুল ইসলাম আকন ও ডেঞ্জারম্যান আন্দ্রে রাসেল। লিটন ও রাসেলকে যে টার্নে আউট করলেন তাইজুল তেমন ঘূর্ণি সাধারণত টেস্ট ম্যাচে দেখা যায়!
স্লো এবং লো বাউন্সের এই উইকেটে বরিশালের বাকি বোলাররাও বেশ মানিয়ে নিলেন। অতিরিক্ত শক্তি খরচ না করে জায়গায় বল রাখলেন। ব্যাটারকে ভুল শটস খেলতে বাধ্য করলেন। মেরেকেটে রান তুলতে গিয়ে বাড়তি শক্তি খরচ করার ভুল পরিকল্পনায় ইনিংসের শুরু থেকেই উইকেট হারায় কুমিল্লা।
শুরুর ৬ ওভারে তাদের স্কোরবোর্ডে জমা ১ উইকেটে ৩৯ রান। দশ ওভার শেষে সেই সঞ্চয় দাঁড়ালো ৩ উইকেট হারিয়ে ৫৬ রানে। কুমিল্লার ইনিংসের প্রথমার্ধের এই চেহারাই জানিয়ে দেয়, মিরপুরের উইকেটে রান তোলা কষ্টসাধ্য কাজ।
কুমিল্লার ব্যাটারদের জন্য এই কাজটা আরেকটু কঠিন হলো মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বে! জি আপনি ঠিক শুনছেন। কুমিল্লার ইনিংসের মাঝামাঝি সময়টায় নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল মাঠে ছিলেন না। ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। সেই সময়টায় মুশফিক অধিনায়কের ভূমিকা নেন। এই পর্বে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ-বরিশালের দুই সিনিয়রকে দারুণ প্রো-অ্যাকটিভ দেখা যায়। আকিভ জাভেদ ও তাইজুল ইসলামকে আক্রমণে আনেন মুশফিক। ফিল্ড সাজান সেই অনুযায়ী। তাওহীদ হৃদয়, মঈন আলী ও আন্দ্রে রাসেলের প্রাইজ উইকেট শিকার করে এই সময়টায় বরিশাল। মূলত তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় কুমিল্লার সংগ্রহশালাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রাখতে চলেছে ফরচুন বরিশাল।
১২০/১২৫ রানের মধ্যেই আটকে যেত কুমিল্লার যোগাড়। সঞ্চয়টাকে চ্যালেঞ্জিং পর্যায় পৌঁছে দিলেন জাকের আলী। সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ঠিক যা করা উচিত সেটাই করে দেখালেন তিনি। মারকুটো ব্যাটিংয়ের যা কিছু করার শেষের তিন ওভারেই তা করলো কুমিল্লা। শেষ তিন ওভারে রান এলো ১৫+১১+১৬। আর এতেই কুমিল্লার সঞ্চয় সমৃদ্ধ হলো ১৪০ রানে। শেষের এই ব্যাটিংয়ে জাকের আলী আরেকবার দুর্ধর্ষ। মাত্র ১৬ বলে তার ব্যাট হাসলো হার না মানা ৩৮ রানের ঝলমলো হাসিতে। ওবেদ ম্যাকওয়ের শেষ ওভারে দুই ছক্কা ও এক বাউন্ডারিতে ১৬ রানের সবগুলোই এলো জাকের আলীর ব্যাটে।
বল হাতে সাইফুদ্দিনের শুরুর তিন ওভারের জন্য একটা শব্দই প্রযোজ্য-আনপ্লেএবল! তাকে খেলতেই পারছিল না কুমিল্লার কোনো ব্যাটার। শুরুর তিন ওভারে তার বোলিং বিশ্লেষণ এমন, ৩ ওভারে ৫ রানে ১ উইকেট। যাতে আবার ১৩টা ডটবল! নিজের শেষ ওভারে খরচা গুনলেন ১১ রান। কিন্তু সেই ওভারে আরেকটি উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে আরেকটি সফল মিশন শেষ করলেন সাইফুদ্দিন।
সহযোগী উইকেটে, সমর্থিত বোলিং-ফিল্ডিং, অধিনায়কত্ব, সঠিক পরিকল্পনা এবং শেষে নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং-এসবের যোগফল ফরচুন বরিশালকে প্লে-অফের টিকেট এনে দিল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৪০/৮ (২০ ওভারে, সুনীল নারিন ১৬, তাওহীদ হৃদয় ২৫, মঈন আলী ২৩, জাকের আলী ৩৮*, তাইজুল ৩/২০, সাইফুদ্দিন ২/১৬)।
ফরচুন বরিশাল: ১৪১/৪ (১৯.৪ ওভারে, তামিম ৬৬, মার্য়াস ২৫, মুশফিক ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১২*, মুশফিক হাসান ২/১৯)।
ফল: বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল।