বরিশালের ইতিহাস বদলে দেওয়ার মিশন, কুমিল্লার চোখ হ্যাটট্রিকে
ফরচুন বরিশাল আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, দুই দল শিরোপার মঞ্চে লড়াই করতে নামবে কাল। মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে কাল বিপিএলের ফাইনাল। প্রায় দেড় মাস দীর্ঘ এই টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে বরিশাল আর কুমিল্লার ম্যাচ দিয়ে।
এই ম্যাচে দুই দল নিয়ে এসেছে বিপরীতমুখী দুই ইতিহাস। এক দল চাইলে নিজেদের বিপিএলের সবচেয়ে দুর্ভাগা দলই বলে দিতে পারে। কেন? শিরোপা জেতেনি, এমন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল খেলার ‘রেকর্ড’টা বরিশালের। বার্নার্স, বুলস নামে দুবার ফাইনাল খেলেছিল, জেতেনি।
এরপর ফরচুন নাম নিয়ে ভাগ্যটা পরিবর্তনের খুব কাছে চলে গিয়েছিল একবার। এক মৌসুম আগে ফাইনালে বরিশালকে পুড়তে হয়েছিল এক রানের আক্ষেপে। হ্যাটট্রিকতম সে ফাইনাল হারটা বরিশাল কার বিপক্ষে পেয়েছিল জানেন? এই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সই সে দল! আরও এক ফাইনাল, আবারও বরিশাল-কুমিল্লা মুখোমুখি; এবার নিশ্চয়ই বরিশাল সে হারের বদলাটা নিতে চাইবে!
ওদিকে কুমিল্লার ইতিহাসটা ১৮০ ডিগ্রি উল্টো। জন্মেছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে, মানে শিরোপা জিতে। প্রথম আসরেই বাজিমাতের পর শিরোপা জেতাটা প্রায় নিয়মিত অভ্যাসই কুমিল্লার। তা যদি না হয় তাহলে নিদেনপক্ষে কোয়ালিফায়ারটা খেলেই।
তবে একবার যদি ফাইনালে পৌঁছে যায়, তাহলে কুমিল্লা আর হার মানে না। এর আগে চার আসরের ফাইনালে খেলেছে কুমিল্লা, প্রতি বারই শিরোপাটা তুলেছে ঘরে। তাও আবার প্রতিপক্ষ শিবিরে কখনো সাকিব আল হাসান, কখনো মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিমদের মতো তারকারা ছিলেন এমন দলকে হারিয়ে। বিপিএলে যেন কুমিল্লা রীতিমতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রিয়াল মাদ্রিদই! সে দলটা যখন আরও একবার ফাইনালে, তখন তাদের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা না হওয়াটাই তো অস্বাভাবিক!
আলোচনা হচ্ছে হোক, তবে দল কুমিল্লা তাতে কান দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না! দলটির সহ-অধিনায়ক জাকের আলী অনিক জানালেন ম্যাচের আগে নিজের ভাবনা। আহসান মঞ্জিলে ফাইনালের ফটোসেশন শেষে তিনি বলেন, ‘ফাইনালে উঠলেই যে ট্রফি পেয়ে যাব, এমন কিছু নয়। পারফর্ম করেই কুমিল্লা প্রতিবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
সে ক’বারের রেসিপিটাই আরও একবার মাঠের পারফর্ম্যান্সে দেখাতে হবে কুমিল্লাকে, জানালেন জাকের। বললেন, ‘যদি চ্যাম্পিয়ন হতে হয়, ফাইনালেও আমাদের ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে। কুমিল্লা ফাইনাল খেলতে অভ্যস্ত। আমরা দল হিসেবে জানি, কীভাবে বড় ম্যাচে পারফর্ম করতে হয়। আমাদের মনোযোগ সেখানেই থাকবে।’
এবারের বিপিএলে কুমিল্লা ম্যাচ হেরেছে ৪টি। তার সবশেষটা এসেছিল বরিশালের বিপক্ষে। ফাইনালেও সেই বরিশালই কুমিল্লার সামনে। জাকের প্রতিপক্ষকে যথেষ্ট সমীহই করলেন। বললেন, ‘যেহেতু ম্যাচটি ফাইনাল, অবশ্যই বরিশাল ভালো খেলেই এত দূর এসেছে। আমরা প্রতিপক্ষ হিসেবে সব দলকেই সম্মান করি। ফাইনালেও এর ব্যতিক্রম হবে না। সব সময় চেষ্টা করি সেরা ক্রিকেট খেলতে, ফাইনালেও সেরাটা খেলার চেষ্টা করব।’
দল হিসেবে বরিশালের বঞ্চনার ইতিহাসটা দীর্ঘ দিনের। তবে ব্যক্তিগত হিসেবেও তো আক্ষেপের তালিকাটা বেশ লম্বা! মুশফিকুর রহিম কখনোই বিপিএল জেতেননি, দুবার ফাইনাল খেলেও শিরোপাটা নিজের করে ছুঁয়ে দেখা হয়নি মেহেদি হাসান মিরাজের। ট্রফির সঙ্গে ফটোসেশন করতে এসে সেই আক্ষেপটা এবার ঘোচানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তিনি।
বললেন, ‘কখনো বিপিএলে ট্রফি জিততে পারিনি। যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হব। এর আগে দুবার ফাইনাল খেলেছি, এটা নিয়ে তৃতীয়বার হবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলব। সবাই চায় চ্যাম্পিয়ন হতে, কুমিল্লাও চায়। মাঠে যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।’
ফাইনালের আগে প্রতিপক্ষ হিসেবে কুমিল্লাকেও তিনি দেখলেন বেশ সমীহের দৃষ্টিতেই। বললেন, ‘কুমিল্লা সব সময়ই অনেক বড় দল, তারা অনেক ভালো দল সব সময়ই গড়ে। প্রতিপক্ষ হিসেবে চ্যালেঞ্জিং হবে, সহজ হবে না। দুই দলের খেলাটা ভালো হবে। কারণ, আমাদের দলও অনেক শক্তিশালী। আমাদের দলেও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে, দেশের বাইরে যারা আছে, তারাও খুব ভালো খেলোয়াড়।’
তবে লড়াইটা শেষমেশ জমজমাট হোক, মিরাজের আশা এমনই, ‘ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেদিন যারা ভালো খেলবে তারা জিতবে। এর আগেও বরিশাল-কুমিল্লা ফাইনাল হয়েছে, সেবার বরিশাল ১ রানে হেরেছে। আশা করছি, আবার ভালো একটা ম্যাচ হবে, সবাই উপভোগ করবে।’