আক্ষেপ ঘুচিয়ে চ্যাম্পিয়ন বরিশাল
আক্ষেপ! এক কথায় তো বরিশালের ফাইনাল-ভাগ্যটাকে তাই বলা যায়। তিন বার ফাইনাল খেলেও শিরোপা নেই নামের পাশে, সবশেষ ফাইনালে ১ রানের হার! দলের সিনিয়র দুই ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহরও তো ব্যক্তিগত আক্ষেপ ছিল! লম্বা সময় ধরে বিপিএলে খেলছেন, অথচ শিরোপা জিততে পারেননি কখনোই!
ফরচুন বরিশালের মিশনটা আজ তাই ছিল সেসব আক্ষেপ দূর করাই। সেটা কি দারুণভাবেই না করল তামিম ইকবালের দল! ফাইনালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা, যারা কখনো ফাইনাল হারেনি, সেই তাদের ওপর একরকম ছড়ি ঘুরিয়ে জিতেছে শেষমেশ ৬ উইকেটে। সে আধিপত্যটা এতটাই ছিল যে ম্যাচে কোনো সময় মনেই হয়নি কুমিল্লার পক্ষে ম্যাচটা জেতা সম্ভব। বরিশাল চ্যাম্পিয়ন হলো চ্যাম্পিয়নের মতো করেই!
আগের দিন টস নিয়ে কথা হচ্ছিল বেশ। এবারের ঢাকা পর্বের প্যাটার্নই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, টস জেতো, প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠাও, এরপর রানটা ঠান্ডা মাথায় তাড়া করে ম্যাচটা শেষ করে এসো। কুমিল্লা কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কাছে এ নিয়ে প্রশ্নও ধেয়ে গিয়েছিল, টসটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়ে উঠতে পারে কি না। জবাবে বিষয়টাকে এড়িয়েই যেতে চেয়েছিলেন তিনি! কিন্তু ফাইনালে প্রায় ‘অবধারিত’ সে নিয়তিটাকে তার দল কুমিল্লা এড়াতে পারল কই?
তবে ফাইনালে যা হলো, তাতে টস হেরে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লার নিজেদের দোষও কম নয়। পুরো বিপিএলজুড়ে লিটন দাস আর তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে দারুণভাবে নির্ভর করেছে দলটা। ফাইনালেও তাদের ওপর অনেকটাই আস্থা ছিল দলের। সেই আস্থার প্রতিদানটা ফাইনালে তারা দিতে পারলেন কতোটুকু?
থিতু হলেন, এরপর উইকেটটা স্রেফ ছুঁড়ে দিয়ে এলেন। সেটা দুজনেরই ইনিংসের প্রতিচ্ছবি। এরপর মঈন আলীও ব্যর্থ হলেন। কুমিল্লাকে টেনে নেওয়ার দায়িত্বটা এসে পড়ল পুরো বিপিএলজুড়ে দারুণ খেলা জাকের আলী অনিকের কাঁধে, সঙ্গী হলেন মাহিদুল অঙ্কন। তাদের মন্থর ব্যাটিং কুমিল্লাকে স্থিতি দিল বটে, কিন্তু রানের গতিটাকে দিল থমকে। যা শেষ দিকে নামা আন্দ্রে রাসেলের ১৪ বলে ২৭ও খুব বেশি সাহায্য করতে পারল না।
ম্যাচের আগেই সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল তার বিশ্লেষণে জানাচ্ছিলেন, ১৭০ এর নিচে যে কোনো রান বরিশালের জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। জবাব দিতে নেমে তামিম ইকবাল যেমন ব্যাট করলেন, তাতে মনে হচ্ছিল ১৭০ কেন, ২০০ হলেও রানটাকে ছোটই মনে হতো! ২৬ বলে তিনি করলেন ৩৯। নিজে বনে গেলেন বিপিএল ২০২৪ এর সেরা ব্যাটার। ওপাশে মেহেদি হাসান মিরাজও যতক্ষণ তার সঙ্গে ছিলেন, খেলেছেন সাবলীল ক্রিকেট। দুয়ের উদ্বোধনী জুটি ৮ ওভারে তুলে ফেলল ৭৬ রান।
পরের ১২ ওভারে ৭৯ রান প্রয়োজন ছিল বরিশালের। কাইল মায়ার্সের ৩০ বলে ৪৬ তা আরও মামুলি বানিয়ে দেয় তাদের সামনে। তার বিদায়ের পর কখনো বিপিএল না জেতা মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর সামনে ছিল ম্যাচটা শেষ করে আসার সুযোগ। সেটা তারা করতে পারলে বিষয়টা বেশ কাব্যিকও হয়ে যেত। আক্ষেপটা নিজ হাতে শেষ করতে পারতেন।
কিন্তু শেষমেশ তা আর হয়নি। মুশফিক বিদায় নিয়েছেন একটু আগে। বাকি অংশটা শেষ করতে মাহমুদউল্লাহ আর মিলারের কোনো সমস্যাই হয়নি। কুমিল্লাকে প্রথম ফাইনালে হারের তেঁতো স্বাদটা উপহার দিয়ে বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হয় বরিশাল। সঙ্গে সঙ্গে ইতি ঘটে অনেক আক্ষেপেরও।