এতো কাছে তবু কতো দূরে, শ্রীলঙ্কা ২০৬ বাংলাদেশ ২০৩!
টার্গেট ২০৭ রান। মিডলঅর্ডারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মেরেকেটে একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু ৩১ বলে তার ৫৪ রানের ইনিংসটা শেষ হতেই বাংলাদেশও বড় রানের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে। ৪ ছক্কায় ১৭৪.১৯ স্ট্রাইক রেটে হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মাহমুদউল্লাহ যখন ফিরলেন তখন ম্যাচ জিততে বাকি ৪০ বলে বাংলাদেশের চাই ৯২ রান।
প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছিল এই টার্গেটকে। কিন্তু জাকের আলী অনিক সেই চিন্তা বদলে দিলেন! ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন তিনিও। মাত্র ২৫ বলে হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতানোর স্বপ্ন দেখালেন। যে সাহস ও গতিতে এই তরুণ ব্যাটিং করলেন সেটা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ইনিংসের দাবি জানিয়ে রাখলো। দেখতে না দেখতে বাংলাদেশ ম্যাচ জয়ের খুব কাছে পৌছে গেল। শেষ দুই ওভারে জয়ের প্রয়োজন দাড়ালো ২৭ রান। শেষ ৬ বলে প্রয়োজন হলো ১২ রানের। কিন্তু শেষ ওভারে এসেই শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের স্বপ্ন। দাসুন শানাকার সেই ওভারে প্রথমে রিশাদ ও খানিকবাদে জাকের আলী ক্যাচ তুলে আউট। তাতেই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশও আউট! শেষ ওভারের বীরত্বে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জিতলো ৩ রানে।
২০৬ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ তুললো ২০৩ রান! এতো কাছে, তবু কতো দূরে-এমন সুরে গান গেয়ে মন খারাপ নিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ। প্রায় কোনো আশা না থাকা ম্যাচে আশার প্রদীপ জ্বালিয়েও ফিনিশিংটা দিতে পারলো না বাংলাদেশ।
তবে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তরুণ জাকের আলী ব্যাট হাতে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন সেটা মনে ক্রিকেটপ্রেমিরা মনে রাখবেন অনেকদিন। ৩ রানে এই ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছে কিন্তু সবকিছু হারেনি। শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত বাংলাদেশের লড়াই সেই প্রমাণই রাখলো।
সিরিজের বাকি দুই ম্যাচেও এমন বাংলাদেশকে দেখার অপেক্ষায় সবাই।
ম্যাচ শুরুর আগে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আশালঙ্কা আশা নিয়ে জানান, স্কোরবোর্ডে ১৭০ রান তুলতে চাই। ইনিংস শেষে শ্রীলঙ্কা সেই লক্ষ্যের চেয়ে আরো বেশি রানই তুললো। করলো দুশো পেরোনো ইনিংস ২০৬ রান।
অথচ ব্যাটিংয়ে শুরুটা তাদের মোটেও ভালো হয়নি। ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। বিপিএলে দুর্দান্ত পারফরম করা শরিফুল ইসলাম ম্যাচের প্রথম ওভারে বাউন্ডারি খেলেও দ্বিতীয় বলেই উইকেট পান। পাওয়ার প্লেতেও বেশিদুর যেতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ২ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান তুলে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে কুশাল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রেমার ৯৬ রান শ্রীলঙ্কাকে বড় স্কোরের সূচনা এনে দেয়। ওপেনার কুশাল মেন্ডিস ৩৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৬ বাউন্ডারিতে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন। মিডলঅর্ডারে সাদিরাও আক্রমনাত্মক মেজাজে ব্যাট চালিয়ে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। অধিনায়ক আশালঙ্কা ৬ ছক্কায় মাত্র ২০ বলে করেন হার না মানা ৪৩ রান।
ব্যাটিং ইনিংসে পরিকল্পনার পরিপক্কতা দেখায় শ্রীলঙ্কা। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে তাদের স্কোরবোর্ডে জমা ছিল ৭৯ রান। শেষের ১০ ওভারে যোগাড় হয় আরো ১২৭ রান। গোটা ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ১৬টি বাউন্ডারি ও ১২টি ছক্কা হাঁকায়। দুই পেসার শরিফুল ও তাসকিন উইকেট পেলেও দুজনের ইকনমি রেট দশের ওপরে। দুই স্পিনার শেখ মাহেদি ও রিশাদ হোসেনের ৭ ওভারে সাফল্য মাত্র একটি উইকেট। খরচা হলো ৬২ রান!
শ্রীলঙ্কার ২০৬ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশও শুরুতেই উইকেট হারায়। লিটন দাস ও সৌম্য সরকার বাজে শট খেলে আউট হন। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে তুলে ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শুরু থেকে মারকুটে ব্যাটিং করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ’র পরে ব্যাট হাতে বীরত্ব দেখান জাকের আলী। খেলতে জানলে যে কোনো টার্গেট যে টপকে যাওয়া যায় সেই সাহসটাই দেখালো জাকের আলীর ব্যাট।
শেষের ১০ ওভারে ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১২৯ রান। এই সময়টায় বাংলাদেশ তুলল ১২৬ রান। কম কি! তবে ম্যাচ জয়ের চেয়ে যে ৩ রান কম!
এই ম্যাচের যথাযথ ট্যাগলাইন; এত কাছে তবু কতো দূরে...!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলঙ্কা ২০৬/৩ (২০ ওভারে, কুশাল মেন্ডিস ৫৯, সাদিরা ৬১, আশালঙ্কা ৪৪, শরিফুল ১/৪৭, তাসকিন ১/৪০)। বাংলাদেশ ২০৩/৮ (২০ ওভারে, শান্ত ২০, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, জাকের আলী ৬৮, ম্যাথুস ২/১৭, দাসুন শানাকা ২/৩৬)। ফল: শ্রীলঙ্কা ৩ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: আশালঙ্কা।