সিরিজে সমতা ফেরানোর অপেক্ষায় আজ বাংলাদেশ
দুটি অপেক্ষা নিয়ে আজকের ম্যাচে তাকিয়ে বাংলাদেশ দল।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে টি-টোয়েন্টি সুলভ রান চাই। এবং সেই সঙ্গে দলের জয়। আজ না জিতলে সিরিজের শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা হয়ে পড়বে। আর জিতলে শেষ ম্যাচটা হবে সিরিজ নির্ধারনীর লড়াই। তিন ম্যাচের টি- টোয়েন্টির সিরিজে সেই আমেজ এনে দিতে হলে আজ বাংলাদেশকে জিততেই হবে। সেই সঙ্গে অফ ফর্মের ‘দুর্নাম’ ঘোচাতে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত’র রানে ফেরা প্রয়োজন।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩ রানে জিতে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে রয়েছে। আজ সমতায় ফেরার পণ নিয়ে নামছে বাংলাদেশ। প্রথম লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার ২০৬ রানের জবাবে বাংলাদেশ থেমে যায় ২০৩ রানে। পুরো ম্যাচটা বিশ্লেষণ করলে দুই ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলী অনিক ছাড়া বাকি কেউ যে পাসমার্কও পেলেন না!
৩০ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে শুরুতে টেনে তুললেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ঝটপটমাত্র ২৭ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে মাহমুদউল্লাহ আরেকবার জানিয়ে দিলেন এই ফরমেটেও এখনো দলকে দেওয়ার মতো অনেককিছুই আছে তার। অথচ তাকে একসময় এই ফরমেটে অচল বলে নির্বাচকরাও বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন। সিলেটে ৪ মার্চের এই ম্যাচে নামার আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষবার বাংলাদেশের জার্সি গায়ে টি- টোয়েন্টি খেলেছিলেন ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর। মাঝের সময়টায় তাকে হিসেবের বাইরে রেখে টি- টোয়েন্টি দল সাজিয়েছিলেন নির্বাচকরা।
হঠাৎ এতোদিন পরে আবার কিভাবে দলে ফিরলেন তিনি?
উত্তর হলো, গত বিশ্বকাপে এবং সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংই তাকে দলে ফিরিয়ে আনতে নির্বাচকদের বাধ্য করেছে। একজন ক্রিকেটারের সব সমালোচনার জবাব দেওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় একটাই, পারফরম্যান্স।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেটাই করে দেখিয়েছেন। সিলেটে সিরিজের প্রথম ম্যাচে তার হাফসেঞ্চুরি বাংলাদেশকে বিপদের গর্ত থেকে টেনে তুলে। ঝড়ো গতিতে ৫৪ রান তুলে মাহমুদউল্লাহ যখন আউট হন, সবাই ধরেই নিলো বাংলাদেশও ম্যাচ থেকে আউট! কিন্তু অন্যপ্রান্তে থাকা তরুণ জাকের আলী অনিক খুব দ্রুতই সেই হিসেব বদলে দিতে লাগলেন। ছক্কার ঝড়ে জাকের আলী বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতানোর নতুন স্বপ্ন দেখালেন। প্রায় অসম্ভব অবস্থান থেকে বাংলাদেশ দ্রুতই ম্যাচে সম্ভব ও সম্ভাবনার দরজায় পৌছে গেল। বাংলাদেশের এক ম্যাচে ছয় ছক্কার রেকর্ড গড়ে জাকের আলী ম্যাচটা নিয়ে গেলেন শেষ ওভারে। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন দাড়ায় ৬৮ রানের। হিসেবটা কমিয়ে আনলেন জাকের ক্রমশ। শেষ তিন ওভারে চাই ৩৭। শেষ ১২ বলে ২৭। ১৯ নম্বর ওভারে মাথিশা পাথিরানাকে পিটিয়ে ১৫ রান তুলে নেন জাকের আলী ও রিশাদ হোসেন। শেষ ওভারে জয়ের হিসেব কমে দাড়ালো ১২ তে।
শেষের সেই অঙ্ক মেলাতে পারল না বাংলাদেশ। দাসুন শানাকার সেই ওভারের প্রথম বলে রিশাদ এবং তৃতীয় বলে জাকের আলী আউট। শরিফুল ইসলাম সেই ওভারে একটা বাউন্ডারি হাঁকালেও শেষ দুই বলে ম্যাচ জয়ের চাহিদা মেটাতে পারেনি বাংলাদেশ।
ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও বাংলাদেশ শেষে এসে ‘শ্যাষ’ হয়ে যায়। শুরুর ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে ৭৯ রান করলেও শেষের ১০ ওভারে তুললো ১২৭ রান। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে শেষ ৩০ বলে শ্রীলঙ্কা ব্যাট হাতে সুনামি বইয়ে দিল। এই ধাপে তাদের স্কোরে যোগ হয় ৭০ রান!
এই রান খরচা এবং পিটুনিতে দলের স্পিনার-পেসার কেউ রেহাই পায়নি। তিন পেসারের সবার ওভারপ্রতি রান ব্যয় দাড়ায় ১০ এর ওপরে। অতিরিক্ত খাত থেকে শ্রীলঙ্কা পায় ১৯ রান। এর মধ্যে ওয়াইড ১১টি। নোবল একটি। ২০ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশকে করতে হলো ২২ ওভার!
সিরিজে সমতা আনার ম্যাচে বোলারদের এই বেহিসেবি হওয়ার নমুনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সোমবার (৫ মার্চ) দু’দলের কেউ অনুশীলনের সূচি ছিল। বিশ্রামে ছিল উভয় দল। পরিকল্পনা কষে দিনটা কাটিয়েছে।
আজ সেই পরিকল্পনা সফল করার সময়। বাংলাদেশ জিতলে সিরিজ ১-১। শ্রীলঙ্কা জিতলে ২-০। শেষ ম্যাচ তখন কেবল নিয়ম রক্ষার।