জাকের আলীর অর্ন্তভুক্তি নতুন নির্বাচক কমিটির দূরদর্শী সিদ্ধান্ত
৩ রানে হার। ওদের ২০৬ রানের জবাবে আমাদের ২০৩। হিসেবটা জানাচ্ছে হার-জিতের পার্থক্যটা কেবল আঙ্গুলের দূরত্ব!
এতদূর যে আমরা আসতে পেরেছি সেটার কৃতিত্ব দুইজনকে দিতে হয়, মাহমুদউল্লাহ এবং জাকের আলিকে। দারুণ ইনিংস খেলেছে তারা। ওদের জুটিতে ২৯ বলে ৪৭ রান ম্যাচে বাংলাদেশকে বিপদের গর্ত থেকে টেনে তুলে।
এরপর জাকের যা খেলল সেটা এক কথায় দুর্দান্ত। যেভাবে আমাদের ব্যাটিং শুরু করার কথা ছিল সেভাবে করতে পারিনি। এমনকি জাকেরকেও কিন্তু শুরুতে এসে ইনিংস রিবিল্ড করতে হয়েছে। কারণ শুরুর দিকের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় উইকেটে এসেই হাত খুলে খেলার পরিকল্পনা থেকে সরে দাড়াতে হয়েছে তাকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই। আর তাই প্রথমদিকে এসেই কিন্তু মারমুখী হতে পারেনি সে। চার্জ করতে একটু সময় নিয়েছে। দুজন ব্যাটার এত ভালো পারফরমেন্স করার পরও ম্যাচটা আমরা জিততে পারলাম না-দুঃখ তো রয়েই গেল।
ওভারঅল বলবো যে, কিছুটা দুঃখ তো আছেই যে আমরা এই ম্যাচটা জিততে পারিনি এই ভাল পারফরম্যান্সের পরও। কিছুটা প্রাপ্তিও আছে, অপ্রাপ্তিও আছে। আমার মনে হয় কোথায় কি হয়েছে না হয়েছে সেগুলো বিচার করার সময় ম্যানেজমেন্টের কাছে এখনো আছে। সেটাকে ভিত্তি করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সদ্য ওই মাঠেই বিপিএল খেলেছি, প্লেয়াররা ফর্মে আছে। শ্রীলঙ্কা অপরিচিত জায়গায় এসেও কিন্তু জিতেছে।
বোলিং পার্টে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ পুরোপুরি আউটপ্লেইড। আমাদের টপ অর্ডারের ব্যাটিং যদি আমরা দেখি তারাও বাংলাদেশকে ভালো শুরু দিতে পারেনি। ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা বিশাল স্কোর গড়ে ম্যাচে এগিয়ে থাকার কাজটা সহজ করে নেয়।
শুধু কয়েক ওভার নয়, মনে রাখতে হবে টি- টোয়েন্টিতে প্রভাবী পারফরমেন্স দেখাতে হলে পুরো ২০ ওভারই ভালো বোলিং করতে হবে। আমাদের শেষের বোলিং মোটেও মনে রাখার মতো কিছু ছিল না। দারুণভাবে ব্যর্থ বলতে হবে আমাদের বোলিং। এটা কিন্তু আইডিয়াল ব্যাটিং পিচ নয় তারপরও আমরা ২০৬ রান দিয়েছি, শেষ পাঁচ ওভারে ৭০ রান দিয়েছি।
পাঁচজন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে আমরা খেলেছিলাম। শেখ মাহেদির ভাল করতে না পারাটাই বোধয় আমাদের জন্য উইক লিংক ছিল। সে সাধারণত যতটা প্রভাব বিস্তার করে টি-টোয়েন্টিতে তার ৭০-৭৫% করতে পারলেও মনে হয় আমরা ভিন্ন চিত্র দেখতে পেতাম। বোলিং সাজানো নিয়েও অধিনায়ককে সমস্যায় পড়তে হয়েছে মনে হলো। সেকেন্ড স্পেলে এসে কিন্তু আমাদের বোলাররা ভাল বল করেনি। শরিফুল শুরুতেই উইকেট নিয়েছে এটা তো আছে, কিন্তু কথা হচ্ছে শেষে কে বল করবে। ওই জায়গাটায় কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে শেষ ৩-৪ ওভারে আমরা কি করছি কেমন করছি, সেটা কি ভাগ্যর উপর ছেড়ে দিচ্ছি কিনা। পাঁচ ওভারে যদি আমরা ৭০ রান দিয়েই দিই তাহলে আমরা সেখানেই পিছিয়ে যাচ্ছি।
বোলিংয়ে তো আমাদের সীমাবদ্ধতা আছেই। তবে অপশন আছে বেশ। এই অপশনগুলো ভালভাবে ব্যবহার করতে হবে। শেখ মাহেদির বোলিংয়ে আমি একটা পরিবর্তন দেখেছি। সে ডিফেন্সিভ বোলার যাকে অ্যাটাক করতে যেয়ে ব্যাটাররা উইকেট দিয়ে আসে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে উইকেট নেওয়ার জন্য বল করছে। আগে যে লেন্থে আর পেসে করত এখন কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। ও কিন্তু ওর ব্যাটিংয়ের জন্য নয়, পাওয়ারপ্লের ওভারে বোলিং করার যোগ্যতা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে। তার মানে বোঝা যায় ওর সক্ষমতা কতটুকু। সেখানে সে একটু এখন পিছিয়ে গেছে।
প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের মাঝপথে আমরা কোনো উইকেট নিতে পারিনি। ওদের ব্যাটাররা সেট হয়েছে, একজন ব্যাটার অনেকক্ষণ খেলার পর বুঝে গেছে যে উইকেটটা কেমন। ইনিংসের মাঝপথে উইকেট না নিতে পারাটাও আমাদের বড় ব্যর্থতা ছিল।
জাকের আলি দলে এলেন স্পিনার আলিস ইনজুরিতে পড়ায়। একজন স্পিনারের পরিবর্তে একজন স্পিনার আসবে এটাই কিন্তু স্বাভাবিক। সিরিজ যেখানে শুরুই হয়নি তখন একজন স্পিনারের পরিবর্তে যদি অন্য কেউ আসে তাহলে বোঝা যায় যে সেই স্পিনারের তাদের প্রয়োজনই ছিল না। এই পয়েন্টে কিন্তু সিলেক্টররা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নতুন সিলেকশন কমিটির প্রথম সিলেকশন এটা, এখানে তারা দূরদর্শী একটা কাজ করছে জাকেরকে সুযোগ দিয়ে। তাকে নিয়ে আলাপ হচ্ছিল, তার খেলাটাও আমরা দেখছিলাম এই বিপিএলে। সবখানেই ওর উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। এজন্যেই তাকে এই জায়গাটায় নেওয়া হয়েছে। আমার কাছে বরং মনে হয়েছে জাকের আলি যদি না থাকত তাহলে দলটার কি হত? পাঁচে বা ছয়ে সাতে আমরা কাকে দেখতাম। এখনও আমাদের ব্যাটারের শর্টেজ কিন্তু, আমাদের মিডল অর্ডারে খেলার কেউ নেই। চ্যালেঞ্জটা রয়েই গেছে কিন্তু।
এবার ফিরি জাকের আলীর ইনিংসের প্রসঙ্গে। ভালো মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে সে। বিপিএলে কয়েকটা ছোট ছোট কিছু ইনিংস খেলছে তখন থেকেই তার দৃঢ়তা দেখা গেছে। সে একটা ইন্টারভিউতে বলেছে, আমি কোচের প্লেয়ার। কোচ আমাকে যেভাবে বলে আমি সেভাবে খেলি। কোচ যদি বলে ধরে খেলতে হবে আমি সেভাবে খেলি। যদি বলে আক্রমণ করে খেলা লাগবে আমি সেভাবে খেলি। বিপিএলের ফাইনালে সে কিছুটা স্লো খেলেছে কিন্তু, আমি নিশ্চিত সেটা কোচেরই নির্দেশ ছিল। টেরিফিক প্লেয়ার ও। তবে এখনই মূল্যায়নটা করতে চাইনা। এখন দেখার বিষয় সে তার খেলার ধার ধরে রাখতে পারে কিনা। ওর জন্য এই চ্যালেঞ্জটা কিন্তু থাকবে।
নাজমুল আবেদিন ফাহিম ।। ক্রিকেট মেন্টর