শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে সিরিজে সমতা আনল বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে সিরিজে সমতা আনল বাংলাদেশ

সহজ। অতি সহজ জয়। এই ম্যাচ নিয়ে নিজের লগবুকে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাখ্যাটা এভাবে দিতেই পারেন!

শ্রীলঙ্কার ১৬৫ রানের মাঝারিমানের স্কোর তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ টার্গেট টপকে গেল মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে। ম্যাচের তখনো ১১ বল বাকি। ৮ উইকেটের এই বড় জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা আনলো বাংলাদেশ। ৯ মার্চ সিরিজের শেষ ম্যাচে জয়ী দল ট্রফি জয়ের উল্লাস করবে।

তবে যে কায়দায় সিলেট আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি- টোয়েন্টি জিতলো বাংলাদেশ তাতে সিরিজ নির্ধারনী শেষ ম্যাচের আগেভাগে এখন হটফেভারিটের তকমা স্বাগতিকদের নামের পাশেই বেশি শোভা পাচ্ছে।

সিলেটে বুধবার রাতের ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং-বোলিং কোনো বিভাগেই পাত্তা পায়নি। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে যে উইকেটে ১৬৫ রানে থেকে গেল শ্রীলঙ্কা, খানিকবাদে সেই উইকেটে সেই রান টপকে বাংলাদেশ জানিয়ে দিল এটা যে দুশো রানের জমা তোলার উইকেট পারফেক্ট উইকেট ছিল।

ব্যাটিংয়ে শেষের দিকে একটু বেশি নরম-শরম কায়দায় ব্যাট চালানোটাই শ্রীলঙ্কাকে এই ম্যাচে পিছিয়ে দিল। আর বোলিংয়ে বোলারদের বিশৃঙ্খলতায় কখনোই মনে হয়নি ম্যাচ জয়ের কোনো সম্ভাবনার পথে আছে তারা। পুরো ইনিংস জুড়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা যে কায়দায় রান তাড়া করেছে তাতেই ম্যাচটা একতরফা হয়ে পড়ে।

লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটিতে ৬৮ রান উঠে। এই ম্যাচ জয়ের মুল ভিত্তি মূলত সেখানেই রচনা হয়ে গেল। নাকি আরো আগে বোলিংয়ে?

ওপেনিং জুটিটা ভালো হলো। কিন্তু দুঃখ রয়ে গেল সৌম্য ও লিটন দুজনেই নিজেদের ইনিংসটা আরো বড় করতে পারতেন। আম্পায়ারের ভুলে সৌম্য একবার জীবন পেয়েও তার ইনিংস ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি। লিটন দাস ২৪ বলে ৩৬ রান করে যে শট খেলে আউট হলেন সেটার রিপ্লে দেখলে নিজেই লজ্জা পাবেন।

বিপিএলে ব্যাট হাতে নাজমুল হোসেন শান্তর সময়টা ভালো কাটেনি। ভালো ফর্ম যায়নি তার। সিরিজের দ্বিতীয় টি- টোয়েন্টিতে সেই দুঃখ ঘোচানোর একটা উপায় পেলেন অধিনায়ক শান্ত। তার ৩৮ বলে হার না ৫৩ রানের ইনিংস সিরিজে বাংলাদেশকে সমতা এনে দিল। আর টিম ম্যানেজমেন্টকে স্বস্তি। দারুণ এক ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের হাফসেঞ্চুরি এবং দলের ৮ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন শান্ত।

তৃতীয় উইকেটে শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়ের অপরাজিত ৮৭ রানের জুটি এই ম্যাচে বাংলাদেশের দাপটের আরেকটি হাইলাইটস।

টসে হেরে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কার শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম ওভারটা মেডেন গেল। শরিফুল ইসলামের শুরুর ওভারের বোলিংয়ের কোনো জবাব খুঁজেই পায়নি শ্রীলঙ্কা। আবিস্কা ফার্নান্ডো সেই ওভারে কোনো রান করতে না পারার দুঃখে তাসকিনের পরের ওভারে রান নেওয়ার জন্য তাড়া দেখালেন। এবং সহজ রিটার্ন ক্যাচ তুলে শূন্য রানে ফিরলেন।

ইনিংসের দশম বলে উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কাকে সেই বিপদের গর্ত থেকে উদ্ধার করলেন দলের দুই মেন্ডিস; কামিন্দু মেন্ডিস ও কুশাল মেন্ডিস। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা জুড়লেন ৬৬ রান। তবে এই দুজন বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হওয়ার আগে ফিরে গেলেন। জুটিটা ভাঙ্গলেন বোলিংয়ে আসা সৌম্য সরকার। ২২ বলে ৩৬ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন কুশাল মেন্ডিস। এক ওভার পরে কামিন্দু মেন্ডিস রান আউট হলেন ২ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারিতে ২৭ বলে ৩৭ রান তুলে।

মিডলঅর্ডারে সাদিরা এই ম্যাচে ব্যর্থ। চারিথ আসালঙ্কার ব্যাটিং সেই সমস্যা মিটিয়ে দিলেন। দুশো স্ট্রাইকরেটে ৩ ছক্কা ও ১ বাউন্ডারিতে ১৪ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন আসালঙ্কা।

দুই অভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দানুশ শানাকা বাকি সময়ে ব্যাট লড়ে যান। তবে ঠিক টি- টোয়েন্টি ঝড় বলতে যা বোঝায় তেমনকিছু করতে পারেননি তারা। ম্যাথুস ২১ বলে অপরাজিত ৩২ এবং শানাকা ১৮ বলে হার না ১৮ রান করেন। শ্রীলঙ্কা ইনিংস শেষ করে ১৬৫ রান তুলে, যা বাংলাদেশ তাড়া করে ফেলে অতি সহজেই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলঙ্কা ১৬৫/৫। বাংলাদেশ ১৭০/২। ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।

সম্পর্কিত খবর