জানতাম শান্তর রানে ফেরাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র
ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা বা যাকে বলে ডমিনেট করা সেই অংশটা যে দল বেশিরভাগ সময় ধরে রাখতে পারে-খেলা শেষে মূলত তারাই জিতে ফিরে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারালেও পরের জুটিতে তারা চড়ে বসার পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছিল। দুই মেন্ডিস (কামিন্দু ও কুশাল) যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে শঙ্কা জাগে প্রথম ম্যাচের মতই বিশাল একটা স্কোর চেজ করতে হয় কিনা?
এ সময়টায় আমাদের বোলারদের বেশ অসহায়ও মনে হয়েছে। হজম করতে হয়েছে তিনটা চার আর তিনটা ছয়। শেখ মাহেদিকে সবসময় দেখেছি ভীষণ টাইট লাইন লেন্থ মেনে বল করতে। সেটাই ওর বোলিংয়ের মূল শক্তির জায়গা। আজকাল অর্থোডক্স বোলারদের মত মাঝেমধ্যে খানিকটা ঝুলিয়ে বল করার প্রবণতা চোখে পড়ছে। রিশাদ এই ম্যাচেও ভাল বল করেছে। চাপের মুখেও নিয়ন্ত্রণ হারায় না। ইকোনমির দিকেই হয়তো এখনও ওর মনোযোগ বেশী। উইকেট নেয়ার ব্যাপারেও ওকে ধীরে ধীরে ভূমিকা রাখতে হবে।
সিলেটের দ্বিতীয় ম্যাচে শুধু ৪ থেকে ৮, এই কয়েকটা ওভারই ম্যাচ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। নবম ওভারে দ্বিতীয় এবং তারপর নিয়মিত বিরতিতে পরবর্তী আরও তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়াতে মাঝের ওভারে শ্রীলংকা তাদের সেই ব্যাটিং ধারাবাহিকতা আর বজায় রাখতে পারে নি। মাঝপথে উইকেট হারানোর কারণে আর চড়াও হতে পারেনি।
তবে বাংলাদেশও কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে আর হারানো মোমেন্টাম ফিরে পেতে দেয়নি। শেষ পাঁচ ওভারে শ্রীলংকা কোন উইকেট হারায়নি তারপরও কেবলমাত্র ৪৩ রান সংগ্রহ করতে পেরেছে। এতেই বোঝা যায় বাংলাদেশের বোলাররা এই ম্যাচে কতোটা ভালো বোলিং করেছে। রান আটকানোর কিন্তু এটিই একমাত্র উপায়।
তবে এই ধরনের পিওর ব্যাটিং উইকেটে নিয়মিত বোলিং করার অভ্যাস না থাকলে ব্যাপারটা কিন্তু কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বোলারদের জন্য। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক কিছু ঘটে যায়। আমাদের বোলারদের সত্যিকার উৎকর্ষতা দেখতে চাইলে ভবিষ্যতে কিন্তু এমন উইকেটেই তাদের নিয়মিত খেলার সুযোগ করে দিতে হবে।
প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং নিয়ে আমাদের যথেষ্ট আক্ষেপ ছিল, বিশেষ করে টপ অর্ডার নিয়ে। লিটনকে ধন্যবাদ নিজের সহজাত ব্যাটিংয়ের উপর আস্থা রাখার জন্য। কোন ইমপ্রোভাইজেশন ছাড়াই ৩৬ রান করেছে, ১৫০ স্ট্রাইক রেটে। গত বিপিএলে সৌম্যর ব্যাটিং বেশ ভালো লেগেছিল, মনে হচ্ছিল যথেষ্ট আস্থা নিয়ে খেলছে। সেই সৌম্যকে টি- টোয়েন্টিতে এখনো খুঁজে পেলাম না। খেলার সময় গোটা মনোযোগটা বলের উপর থাকা জরুরী। সৌম্য কে খুবই টেকনিক সচেতন মনে হচ্ছে। নিজের ব্যাটিংয়ের ভিতর ডুবে যেতে পারছে না। তবে বোলার হিসেবে যে ওর একটা মূল্য আছে সেটা এই ম্যাচে সে আবারও প্রমাণ করলো।
অনেকদিন পর শান্তকে রান করতে দেখে স্বস্তি পাচ্ছি। তবে ওর রানে ফেরা যে কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার ছিল, এটা আমরা সবাই জানতাম। হৃদয়কে আজ আগের তুলনায় বেশ গোছানো মনে হয়েছে। সারা মাঠ জুড়েই খেলেছে যা দেখে ভালো লেগেছে। আমি এখনও মনে করি ওর সর্বোচ্চ ব্যাবহার করতে চাইলে ওকে তিন এ খেলানো উচিত। রিস্ক না নিয়ে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ১৩৫ থেকে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে কিভাবে নিজের ইনিংসটাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া যায় এই অভ্যাসটা ওর এখন থেকেই গড়ে তোলা উচিত।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং জাকের আলীকে আজ ব্যাটিং করতে হলো না। অনেকে হয়তো ওদের ব্যাটিং দেখার জন্যই আজ মাঠে এসেছিলেন অথবা টিভি সেটের সামনে বসেছিলেন। ওদের ব্যাটিংটা তোলা থাকলো সামনের কোন ম্যাচের জন্য।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় লড়াইয়ে দারুণ ভাবে ফিরে আসা বাংলাদেশ দলের জন্য একরাশ অভিনন্দন।
#নাজমুল আবেদিন ফাহিম
ক্রিকেট মেন্টর