ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিলো ভারত
‘ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানকে হারায়’ কথাটা যেন ‘সূর্য পুবে ওঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়’ এর মতোই ধ্রুবসত্য। সেই ১৯৯২ বিশ্বকাপে শুরু, এরপর আরও ছয় বার ওয়ানডে বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল, জয়ী দলের নামটা ছিল ভারতই। ভেন্যু বদলেছে, প্রেক্ষাপট বদলেছে, প্রজন্মও বদলে গেছে, কিন্তু ফলাফলটা বদলায়নি।
বদলাল না এবারও। ভারতই জয়ী, পাকিস্তানকে রীতিমতো গুঁড়িয়েই দিয়েছে। ১৯.৩ ওভার বাকি রেখে তাদের ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে তুলে নিয়েছে চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় জয়।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের উইকেট আগে থেকেই বড় রানের আভাস দিচ্ছিল। ঘাসের উপস্থিতি ছিল না একটুও, উইকেটটাও লাগছিল বেশ শুকনো। কিন্তু রান উৎসবটা হলো আর কই! পাকিস্তান যে চাপটাই সামলাতে পারল না!
একেবারেই পারেনি, তা অবশ্য নয়। শুরুটা ভালোই পেয়েছিল টস হেরে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান। ইমাম উল হক আর আব্দুল্লাহ শফিক মিলে উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানকে এনে দিলেন ৪১ রান। বড় কিছু নয়, আবার অতো খারাপও নয়। মোহাম্মদ সিরাজের শিকার হয়ে আব্দুল্লাহ ফিরলেন, এরপর বাবরকে নিয়ে জুটি গড়ার আগেই বিদায় নেন ইমাম।
তারপরই উইকেটে আগমন মোহাম্মদ রিজওয়ানের, যার সঙ্গে মিলে বাবর গড়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র জয়ের কীর্তিটা। দুজন মিলে জুটি গড়েন, যা টেকে ১৮ ওভার। রানও তুলছিল সাবলীলভাবে, তাতে ভর করে পাকিস্তানও আশা দেখছিল নিদেনপক্ষে ৩০০ ছাড়ানো ইনিংসের।
বাবর তুলে নেন ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। এরপরই অবশ্য ফেরেন সাজঘরে। পাকিস্তানের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া শুরু হলো তখনই। ১৫৫ রানে বাবর ফিরলেন তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে, সেখান থেকে দলটা আর তুলতে পারল মোটে ৩৬ রান। ফিফটির অপেক্ষায় থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান ফিরলেন, তার পর থেকে শেষ পর্যন্ত দুই অঙ্কেও যেতে পারলেন না দলের কোনো ‘স্বীকৃত’ ব্যাটার শেষ সাত ব্যাটারের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ রান এল ‘বোলার’ হাসান আলীর ব্যাট থেকে। পাকিস্তান অলআউট মোটে ১৯১ রান তুলেই।
নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে এমন পুঁজি নিয়ে জেতার আশা তো ভেলা নিয়ে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার মতোই অমূলক! তবু পাকিস্তানের আশাটা ছিল, অতীতেও শাহিন আফ্রিদির সামনে ভুগেছে ভারতের টপ অর্ডার, আজও যদি ভোগে!
সেটা আশা অবশ্য বাস্তবে রূপ পেল না। শুরু থেকেই পাকিস্তানের ওপর চড়াও হন রোহিত শর্মা। শুরুর দশ ওভারে ভারত বাউন্ডারির দেখা পায় ১৪ বার, শুভমান গিল আর বিরাট কোহলির উইকেট খুইয়ে তুলে ফেলে ৭৯ রান। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে প্রথম দশ ওভারে এর চেয়ে বেশি রান হজম করেছে আর একবারই, ২০০৩ সালে সেঞ্চুরিয়নে, সেটাও এই ভারতের কাছেই।
পাওয়ারপ্লের পরও ভারত সুতোয় ঢিল দেয়নি একটুও। রোহিত যে ছুটছিলেন নিজের গতিতেই। ৩৬ বলে তুলে ফেলেন ফিফটি। আশা জাগিয়েছিলেন সেঞ্চুরিরও। তবে তা হয়নি শেষমেশ, থামেন ৮৬ রানে। তাতে অবশ্য ভারতের জয় আটকে থাকেনি। ১৯.৩ বল হাতে রেখে ঠিকই তুলে নেয় ৭ উইকেটের বিশাল জয়। তাতে বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেও উঠে চলে এল রোহিত শর্মার দল। আগামী ১৯ অক্টোবর পুনেতে এই ভারতের সামনেই খেলতে হবে বাংলাদেশকে।